ইতোমধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন, রাজস্ব আয়, বিনিয়োগ, শিল্প ও কৃষি উৎপাদন, রপ্তানি আয়, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ, বৈদেশিক সহায়তা ও বিনিয়োগে ভাটা পড়েছে।
এ বিষয়ে বিআইডিএসের মহাপরিচালক মুস্তফা কে মুজেরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, “উৎপাদন, সরবরাহ, রপ্তানি, আমদানিসহ সব খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এমনকি স্বাভাবিক কর্মচাঞ্চল্য নেই।
“ধনাত্বক যে উন্নয়ন প্রক্রিয়া তা নেই। ফলে অর্থনৈতিক লক্ষ্যগুলো অর্জন কঠিন হবে।
উন্নয়ন অব্যাহত আছে, তবে গতি কমে গেছে। ”
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইও বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে দেয়া তাদের এক প্রতিবেদনে বাজেটে নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে। পাঁচ মাসের হিসাবে যে কোনো সময়ের চেয়ে এটি সর্বোচ্চ ঘাটতি।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪৬ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা।
এর বিপরীতে আদায় হয়েছে, ৪০ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা কম।
টানা তিন অর্থবছর সাফল্যের পর গতবার ছন্দপতন ঘটেছে রাজস্ব আদায়ে। গত অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা কম আদায় হয়। চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৯০ কোটি টাকা।
বিনিয়োগ বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে স্থানীয় বিনিয়োগ কমেছে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪০ শতাংশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থা হয়েছে গত অক্টোবর থেকে।
জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে ৩৮৪টি স্থানীয় বিনিয়োগ প্রস্তাব জমা হয়েছে। অথচ গত অর্থবছরের একই সময়ে এই সংখ্যা ছিল প্রায় দ্বিগুণ।
আর এ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) প্রস্তাব এসেছে ৪৪টি।
অথচ গত অর্থবছরে একই সময়ে এসেছিল এর দেড়গুণ।
বিনিয়োগ বোর্ডের পরিচালক তৌহিদুর রহমান খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, “উদ্যোক্তারা রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছেন। তাই বিনিয়োগ নিবন্ধন তুলনামূলকভাবে ধীর গতিতে হচ্ছে। ”
রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিশেষ করে বিরোধীদলের হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচিতে ব্যাংক খাতের ঋণ প্রবাহ কমে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য মতে, নভেম্বরে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯ শতাংশ।
কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহে ১৫ দশমিক ৫০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে আশা প্রকাশ করেছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংক জুলাইয়ে ঘোষিত মুদ্রানীতিতে চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ২ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দেয়। কিন্তু ৬ মাস পরে এসে প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৭ শতাংশ হতে পারে বলে মনে করছে সংস্থাটি।
প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাকে দায়ী করেছে দেশের ব্যাংকিং খাতের এই নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
মূলধনী যন্ত্রপাতিরও আমদানি কমেছে।
ঝুঁকির আশঙ্কায় এলসি খোলা কমিয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। যে কারণে আমদানিতে প্রবৃদ্ধি কমে গেছে।
তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর হিসাব মতে, গত সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ খাতে ৫ হাজার কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। এই রপ্তানিমুখী শিল্পখাতটি রাজনৈতিক সহিংসতায় চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ট্রেডিং বা ব্যবসা খাতে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১৩ শতাংশ।
যেখানে গত অর্থবছরের একই সময়ে এ খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির হার ছিল ২৫ শতাংশ।
একক খাত হিসেবে কৃষি হচ্ছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সবচেয়ে বড় চালিকাশক্তি। জিডিপিতে এ খাতের অবদান ১৯ শতাংশ। পরিবহন চলাচলের অভাবে সার, বীজসহ অন্যান্য উপকরণ ব্যাহত হওয়ায় শাক-সবজিসহ কৃষিপণ্যের উৎপাদন ভয়াবহভাবে ব্যাহত হয়েছে। ফলে এ খাতের আয় ব্যাপক কমে গেছে।
পরিবহন খাতেও ধস নেমেছে বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতায়।
চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে এ খাতে ঋণ বিতরণ গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে। টানা অবরোধে পণ্যের সরবরাহ ভেঙে পড়ায় এ খাতে নতুন ঋণ বিতরণ তলানিতে ঠেকেছে।
এ ছাড়া সেবার অন্যতম খাত হোটেল-রেস্তোরাঁ ও পর্যটনের অবস্থা শোচনীয়। ক্ষুদ্র ব্যবসা খাতেও একই চিত্র দেখা দিয়েছে।
মোট জিপিডিতে সেবা খাতের অবদান ৫০ শতাংশ। চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় সেবার প্রধান খাতগুলো সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নির্মাণ খাত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে আরেকটি অন্যতম চালিকাশক্তি। নির্মাণ খাতের প্রধান উপকরণ সিমেন্ট, রড ও স্টিল পণ্য উৎপাদন গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৯ শতাংশ কমেছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।