সংঘাতময় রাজনৈতিক পরিস্থিতি হঠাৎ নাটকীয় মোড় নিয়েছে। অবশেষে প্রধান দুই দলের মধ্যে আলোচনার একটা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
বিরোধী দলকে সংলাপে বসতে আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানাবে সরকার। এ জন্য দু-এক দিনের মধ্যেই চিঠি দেওয়া হতে পারে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে সংসদ অথবা সংসদের বাইরে যেকোনো স্থানে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি লিখিত প্রস্তাব পাঠানোর কথা বলেছে। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সন্ধ্যায় অফিসার্স ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, দু-এক দিনের মধ্যেই সংলাপের জন্য বিএনপিকে লিখিত প্রস্তাব দেওয়া হবে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে সংলাপে বসতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। তবে শর্তহীন আলোচনায় সম্মত নয় দলটি। তারা বলছে, সংলাপে প্রধান আলোচ্য বিষয় হতে হবে নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি।
সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসনের জন্য আওয়ামী লীগের ভেতর থেকেও একধরনের চাপ আছে। দলের নেতারা মনে করেন, ক্ষমতার শেষ সময়ে এসে রাজনৈতিক পরিস্থিতি সংঘাতময় হলে সরকারকেই দায়ভার নিতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে দলগতভাবে আওয়ামী লীগেরও ক্ষতি হবে। এ ছাড়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে কেন্দ্র করে জামায়াত-শিবিরের সহিংসতা সামাল দিতে সরকার নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে বিএনপির সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছাতে চায়। এ অবস্থায় সংলাপে বসার বিষয়টি সরকার গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে।
সংলাপের বিষয়টিকে বিএনপিও ইতিবাচকভাবে দেখছে। দলের একাধিক নীতিনির্ধারক বলেছেন, তাঁরা এখন সরকারের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবের অপেক্ষায় আছেন।
২০১১ সালের ৩০ জুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল হয়ে যাওয়ার পর থেকে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে টানাপোড়েন বাড়তে থাকে। মাস ছয়েক ধরে পরিস্থিতি ক্রমে সংঘাতময় হয়ে ওঠে। টানা হরতালসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি এবং সরকারের ধরপাকড়, মামলা দিয়ে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের কারাগারে পাঠানোকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে পড়ে।
এরই মধ্যে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকে কেন্দ্র করে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের সহিংসতা ভয়াবহ রূপ নেয়। রাজনৈতিক মাঠে সর্বশেষ নতুন উত্তাপ যোগ করেছে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফার আন্দোলন।
এ অবস্থায় রাজনৈতিক সংলাপের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হচ্ছিল সব মহল থেকেই। সংলাপের দাবি নিয়ে হাইকোর্টে রিট পর্যন্ত হয়েছে। এমন এক মুহূর্তে সাভারে ভবনধসের উদ্ধারকাজের স্বার্থে বিরোধী দলের আহূত ২ মের হরতাল প্রত্যাহারের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে গত মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া হরতাল প্রত্যাহার করেন। একই সঙ্গে তিনি রাজনৈতিক সংকট নিরসনে আলোচনার উদ্যোগ নিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান। খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমরা যেভাবে জাতীয় স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিচ্ছি। আশা করি, জাতির বৃহত্তর স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীও আমাদের আহ্বানে সাড়া দেবেন। ’
এর এক দিন পর গতকাল সকালে গণভবনে ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলীয় নেতাকে সংলাপে বসার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আসেন, বসি, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করি। সেটা যেখানেই হোক। তবে সংসদে এসে আলোচনা করলে ভালো হয়। সংসদ আলোচনার উপযুক্ত স্থান এবং নিরাপদ জায়গা। ’ তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে হরতাল প্রত্যাহার করায় প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলীয় নেতাকে আবারও ধন্যবাদ জানান।
গতকাল প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের পর এক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, নির্দলীয় সরকারব্যবস্থা নিয়ে তাঁরা আলোচনার জন্য প্রস্তুত। এখন সরকারের পক্ষে থেকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিতে হবে। তিনি বলেন, নির্দলীয় সরকার পুনর্বহালের আলোচনা ছাড়া অন্য কোনো আলোচনা ফলপ্রসূ হবে না।
বিএনপির চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ঠ একজন নেতা বলেন, টেলিভিশনে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য চেয়ারপারসন দেখেছেন। তাঁর পুরো বক্তব্য শুনেছেন।
ওই নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী এমন একটা সময় এ বক্তব্য দিলেন, যখন বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোট ঢাকায় ৪ মে সমাবেশ করার আর হেফাজতে ইসলাম ৫ মে ঢাকা অবরোধ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর এ আহ্বান বিরোধী দলের কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল কি না, সেটাও পর্যালোচনা করছে বিএনপি।
ওই নেতা বলেন, সংলাপের ব্যাপারে বিএনপির চেয়ারপারসনের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট। আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন নয় এবং নির্দলীয় ব্যক্তিদের দিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন—এ দুটি বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সম্মত হয়ে ডাকলে বিএনপি সংলাপে যাবে। এ ছাড়া সংলাপের পরিবেশ তৈরি করার জন্য দলের নেতাদের মুক্তি দেওয়ারও আহ্বান জানানো হয়েছে।
এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় সৈয়দ আশরাফ সাংবাদিকদের বলেন, বিরোধী দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা হবে। পরে শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যেও বৈঠক হবে। তবে এবারের সংলাপ দীর্ঘস্থায়ী হবে না বলেও তিনি জানান।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরে আসবে কি না, জানতে চাইলে সৈয়দ আশরাফ বলেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল হয়েছে। এ ব্যবস্থা আর ফিরে আসবে না।
তবে নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে সংলাপে বসলে এ সমস্যা সমাধান করা খুব বেশি জটিল হবে না। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।