আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘দ্বিতীয় শ্রেণীর নাট্যকার’ রবীন্দ্রনাথের একাধিপত্য

রবীন্দ্রনাথের একশ’ পঞ্চাশতম জন্মবার্ষিকী উদযাপনের নামে বিগত বছরটি ঢাকার নাট্যমঞ্চ ছিলো একচেটিয়া রবীন্দ্রনাথের দখলে। ভারতের বিখ্যাত নাট্যকার গিরিশ কারনাড রবীন্দ্রনাথকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাট্যকার বললেও বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথই যেন একমাত্র নাট্যকার। এরই দৃষ্টান্ত দেখা গেছে ২০১১ সালের মতো ২০১২ সালেও। গত নভেম্বর মাসে বেঙ্গালুরুর একটি অনুষ্ঠানে সাক্ষাত্কার দেয়ার সময় গিরিশ কনরাড রবীন্দ্রনাথকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাট্যকার বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ কবি হিসেবে অতুলনীয় হলেও নাট্যকার হিসেবে তিনি দ্বিতীয় শ্রেণীর, একেবারেই নিজের মান রাখতে পারেননি।

ওনার লেখা নাটক পড়া যায় না। এত ড্রামা আর মেলোড্রামার ছড়াছড়ি যে, একটা সময়ের পর সেই লেখা হজম করা দায়। রবীন্দ্রনাথের নাটক পারিবারিক পরিসরেই সীমাবদ্ধ বলেও মন্তব্য করেন গিরিশ। এমনই এক নাট্যকার রবীন্দ্রনাথকে ঢাকার নাট্যমঞ্চে এতটাই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে যে, বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নাট্যকার সেলিম আল দীনের নামে অনুষ্ঠিত নাট্যোত্সবে সেলিমের মাত্র একটি নাটক ‘ধাবমান’ মঞ্চায়ন করা হয়, অথচ এ উত্সবের ১৪টি নাটকের অধিকাংশই ছিল রবীন্দ্রনাথের। এ উত্সবে কলকাতার কয়েকটি দলও রবীন্দ্রনাথের নাটক নিয়ে অংশগ্রহণ করে।

কলকাতার দু’একটি দল সেলিম আল দীনের নাটকের চর্চা করলেও তাদের এ উত্সবে ডাকা হয়নি। উত্সবে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি সেলিম আল দীনের বেশকিছু নাটক নিয়মিত মঞ্চায়ন করা নাট্যসংগঠন স্বপ্নদলকেও। বিস্ময়কর এ নাট্যোত্সব গত ২৫ আগস্ট শুরু হয়ে এক সপ্তাহ ধরে চলে। এ উত্সব সম্পর্কে নানারকম বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দেয়া হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে। অনুষ্ঠানে রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘এই উত্সবে সেলিম আল দীনের নির্দেশিত বিভিন্ন নাটকের সঙ্গে বেশ ক’জন তরুণ নির্দেশকের নাটক দেখানো হচ্ছে, যারা সেলিম আল দীনের আদর্শে কাজ করছেন।

’ রামেন্দু মজুমদারের এ বক্তব্যের কোনো সত্যতাই খুঁজে পাওয়া যায়নি উত্সবের কর্মসূচিতে। তিনি বলেছেন, ‘সেলিম আল দীন নির্দেশিত বিভিন্ন নাটক’; অথচ ব্যাপারটি ছিল সেলিম আল দীন নির্দেশিত নয় বরং রচিত একমাত্র নাটক। অন্যদিকে তিনি বলেছেন, ‘কয়েকজন তরুণ নির্দেশকের নাটক দেখানো হচ্ছে যারা সেলিম আল দীনের আদর্শে কাজ করছেন’—তার এ বক্তব্যেরও কোনো সত্যতা ছিল না। ঢাকা থিয়েটারের পরই সেলিম আল দীনের নাটক নিয়ে যারা সবচেয়ে বেশি চর্চা করে সেই ‘স্বপ্নদল’কে এ উত্সবে ডাকাই হয়নি, ডাকা হয়নি অন্য কোনো দলকেও, অন্য কোনো তরুণ নির্দেশককেও যারা সেলিম আল দীনের নাটক নিয়ে চর্চা করেন কিংবা সেলিম আল দীনের নাট্যাদর্শের চর্চা করেন। উত্সবটির আয়োজন করেছিল ঢাকা থিয়েটার।

উল্লেখ্য, সেলিম আল দীনের নাট্যাদর্শের সঙ্গে রবীন্দ্র নাট্যাদর্শের দূরত্ব যোজন যোজন। এ উত্সবে রবীন্দ্রনাথের আবৃত্তি প্রযোজনাও রাখা হয়। অথচ ‘ধাবমান’ নাটক ছাড়া এ উত্সবের আর কোনো বিষয়ের সঙ্গে সেলিম আল দীনের কোনো সম্পর্ক ছিল না। শুধু সেলিম আল দীন নাট্যোত্সব নয়, প্রায় সব নাট্যোত্সবেই ছিল রবীন্দ্রনাট্যের একচেটিয়া আধিপত্য। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.