অর্ধেকের চেয়েও কম ১৪৭ আসনের ভোট। সেটাও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারলেন না কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তাহলে ৩০০ আসনে কীভাবে সুষ্ঠু ভোট করতেন তারা? এ প্রশ্ন এখন সাধারণ মানুষের মুখে মুখে। নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ আসতে শুরু করলেও সেসব মোটেই আমলে নেয়নি কমিশন। ফলে, যা হওয়ার তা-ই হয়েছে।
ভোটারবিহীন সহিংস নির্বাচনে অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করেছে বর্তমান নির্বাচন কমিশন। অনেক কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পর্যন্ত পেঁৗছাতে পারেনি কমিশন। অনেক কেন্দ্রে কোনো ভোটই পড়েনি। কোনো কোনো কেন্দ্রে ভোটার না গেলেও হাজার হাজার ভোট গ্রহণের ঘটনা ঘটেছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন এই নির্বাচনে এতকিছুর পরও সরকারি দলের প্রার্থীরা জবর দখল করেছেন কেন্দ্র।
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছেন। দুপুরের আগেই অনেক স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে ভোট বর্জন করেছেন। সব মিলিয়ে কলঙ্কের তিলক পড়ল কাজী রকিব কমিশনের (ইসি) ওপর। এ কলঙ্ক অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে এ এক নতুন ইতিহাস বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভোট কেন্দ্রের যে অবস্থা গতকাল দেখল জাতি, তাতে মনে হয়েছে এই নির্বাচনে সরকারি দল আওয়ামী লীগের নেতা- কর্মীরাও ভোট দিতে যাননি। গত কয়েক মাস ধরে যারা বিএনপি-জামায়াতের সহিংস আন্দোলনের বিরুদ্ধে মাঠে সক্রিয় ছিলেন তারাও গতকাল কেন্দ্রে ছিলেন না। নতুন ও নারী ভোটারদেরও কেন্দ্রে নিতে পারেনি ইসি। নজিরবিহীন এই ভোট আয়োজন নিয়ে মুখ পুড়ল নির্বাচন কমিশনের।
প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের বর্জনের মুখে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগে থেকেই সরকারি দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ ছিল কমিশনে।
কিন্তু সে অভিযোগ গুরুত্ব দেয়নি কমিশন। ঝিনাইদহ-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী তানজীব আলম সিদ্দিকী (আনারস) বেশ আগে থেকেই স্থানীয় পুলিশের বিরুদ্ধে সরকারি দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার অভিযোগ আনেন। বাগেরহাট-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগের সদ্য বহিষ্কৃত নেতা এস এম মনিরুল হক তালুকদার মোরেলগঞ্জ থানার ওসির বিরুদ্ধে সরকারি দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার অভিযোগ আনেন। এ ছাড়া আরও অসংখ্য অভিযোগ ইসিতে জমা পড়লেও তারা কোনো প্রতিকার করেনি। নির্বাচন কমিশন অনেক ক্ষেত্রেই অনিয়মকে নিয়ম হিসেবে চালিয়ে দিয়েছে।
তারা আইনের তোয়াক্কা না করেই জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের 'লাঙ্গল' প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছে। গত ১৩ ডিসেম্বর ছিল প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। ১৪ ডিসেম্বর চূড়ান্ত প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করার কথা। কিন্তু কমিশন ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত বেশ কিছু আসনের প্রার্থীর তালিকা বারবার রদবদল করেছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টি, জেপি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টিসহ অন্য শরিকদের সমঝোতা রক্ষা করতে গিয়ে তারা এই অনিয়ম করে।
নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা পড়েছিল এক হাজার ১০৭টি। শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টি সরে পড়ায় অনেক আসনে প্রার্থী সংকট দেখা দেয়। তখন কমিশনের পরামর্শে রিটার্নিং কর্মকর্তারা অনেক প্রার্থীকে বাড়ি থেকে ডেকে এনে মনোনয়নপত্র শুদ্ধ করে দেন। সব মিলিয়ে নজিরবিহীন অনিয়মের মধ্য দিয়ে নতুন কলঙ্কের তিলক ধারণ করল নির্বাচন কমিশন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।