দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক দিন পর গতকাল সচিবালয়ে সরকার সমর্থক কর্মকর্তাদের দেখা গেছে ফুরফুরে মেজাজে। এতদিন কিছুটা চুপ মেরে থাকলেও গতকাল অনেক কর্মকর্তাকেই দেখা গেছে হাসিখুশি। তারা চাচ্ছেন এখন একটি শক্তিশালী মন্ত্রিসভা। সেই মন্ত্রিসভা গঠিত হবে দুর্নীতিমুক্ত, বিতর্কিত ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে সব মহলে গ্রহণযোগ্য সংসদ সদস্যদের নিয়ে- এমনটাই প্রত্যাশা তাদের। অন্যদিকে বিপরীত চিত্র ছিল বিরোধী দল বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে। তারা একেবারেই হতাশ। তবে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চান তারা।
গতকাল সচিবালয় ঘুরে দেখা গেছে, প্রশাসনযন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখন নির্ভার। নির্বাচন নিয়ে যে শঙ্কা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে তারা ছিলেন সেটা কেটে গেছে। এখন প্রায় সবাই ফুরফুরে মেজাজে। নতুন উদ্যমে কাজ করতে আবারও নিজেদের চাঙ্গা করছেন। দশম নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই তারা ছিলেন নানা রকম শঙ্কার মধ্যে। নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন হবে কি না? বিরোধী দল না এলে নির্বাচন কতটা সফল হবে? নির্বাচনকে ঘিরে সারা দেশে কি ধরনের সহিংসতা হবে? কত প্রাণহানি হবে?_ এমন আরও অনেক প্রশ্ন আর শঙ্কা ও আতঙ্কের মধ্যে ছিলেন আমলারা। তবে নির্ধারিত তারিখে নির্বাচন শেষ হওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নির্বাচন নিয়ে যে শঙ্কা ছিল তা কেটে গেছে। এখন আমাদের প্রত্যাশা একটি সুন্দর মন্ত্রিসভা। নতুন সরকারের মন্ত্রিসভা যদি সব মহলে গ্রহণযোগ্য হয় তাহলে সরকারের কাজে কোনো বাধা সৃষ্টি হবে না। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা চাই দেশকে এগিয়ে নিতে। এ জন্য নতুন সরকারকে একটি শক্তিশালী মন্ত্রিসভা গঠন করতে হবে। যেখানে দুর্নীতিবাজরা থাকবেন না। তাহলেই সরকার আগামী দুই বছরের মধ্যেই দেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিতে পারবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই অস্বস্তিতে আছি। সরকারের সমর্থক হয়েও গত পাঁচ বছর পদোন্নতি পাইনি। এখন নির্বাচনটা শেষ হওয়ায় স্বস্তি পাচ্ছি। নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করব।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, নির্বাচন নিয়ে গভীর চিন্তায় ছিলাম। এতদিন চুপ করে বসেছিলাম। এখন আর কোনো টেনশন নেই। আশা করি, নতুন সরকার গঠনের পর নতুন উদ্যমেই কাজ শুরু হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম-সচিব পদমর্যাদার অপর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নির্বাচন হওয়াটা জরুরি ছিল। না হলে আরও অনেক সংকট সৃষ্টি হতো। এখন আশা করি, সব সমস্যা কেটে যাবে।
যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মচারী বলেন, বিএনপির আন্দোলনের শক্তি নেই। তারা আর সরকার নামাতে পারবে না। নির্বাচনে অংশ না নিয়ে উল্টো বোমাবাজি, মানুষ হত্যা আর জ্বালাও-পোড়াও করে বিএনপি নিজেদের ক্ষতি করেছে। অন্যদিকে প্রশাসনের সরকারবিরোধী শিবিরে চরম হতাশা বিরাজ করছে। প্রতিরোধের মুখেও সরকার নির্বাচন করে ফেলায় বিরোধী দলের সমর্থক হিসেবে পরিচিত আমলারা হতাশ হলেও এখনো বিশ্বাস করেন, এরকম নির্বাচন করে সরকার বেশি দিন টিকতে পারবে না। অতীতের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে সরকারবিরোধী আমলা হিসেবে পরিচিত একজন পদোন্নতি-বঞ্চিত কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন করে বিএনপি টিকতে পারেনি। পাঁচ বছর তো নয়ই, এ সরকার খুব বেশি দিন টিকতে পারবে না। তবে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে, এর আগে কিছু বলা যাচ্ছে না।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।