সফলতার মুখ দেখতে শুরু করেছে 'একটি বাড়ি, একটি খামার' প্রকল্প। শুরুতে সমালোচনার মুখে পড়া সরকারের এ গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটি এখন দেশের প্রতিটি জেলায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে আলোর দ্যুতি ছড়াচ্ছে। সারা দেশে এরই মধ্যে ১৭ হাজার ৩০০টি গ্রাম সমিতি গঠনের মাধ্যমে ১০ লাখ ৩৮ হাজার মানুষকে এ প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে। একে বড় সাফল্য হিসেবে দেখছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী ২০১৫ সালের মধ্যে দরিদ্রের হার কমিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের অন্যতম এটি। কিন্তু শুরুর দিকে এ প্রকল্প নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হলে কিছু দিনের জন্য কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। পরবর্তীতে আবারও নতুন আঙ্গিকে কাজ শুরু হয়। প্রথম দিকে প্রকল্পটি ছিল মূলত একটি বাড়িকে ঘিরে একটি খামার করে কোনো দরিদ্র পরিবারকে স্বাবলম্বী করে তোলা। কিন্তু মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন স্থান থেকে প্রকল্পে সুবিধাভোগী চিহ্নিত করা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। তখন ওই ধারণা থেকে কিছুটা সরে গিয়ে গ্রামভিত্তিক সমিতি করে প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় সরকার। এতেই দেখা মেলে সফলতার। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ২০১০ সালের জুন থেকে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত প্রথম ফেইজে এ প্রকল্পে গ্রাম সমিতি গঠন করা হয়েছে ১৭ হাজার ৩০০টি। যাতে উপকারভোগী পরিবারের সংখ্যা ১০ লাখ ৩৮ হাজার। আর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ প্রকল্পে উপকারভোগীর সংখ্যা প্রায় ৫১ লাখ। সমিতির প্রতিটিতে সদস্য সংখ্যা সর্বোচ্চ ৬০ জন এবং সর্বনিম্ন ৪০ জন। কর্মকর্তারা জানান, সমিতিগুলোতে সদস্যরা নিজেরা যে সঞ্চয় করেছেন, সরকারের পক্ষ থেকে ঠিক সমপরিমাণ অর্থ সমিতিগুলোতে জমা দিয়ে তহবিল করা হয়েছে। একই সঙ্গে সরকার ঘূর্ণায়মান ঋণ হিসেবে সমপরিমাণ টাকা দিয়েছে প্রতিটি সমিতিকে। এ হিসাবে 'একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পে'র আওতায় সমিতিগুলোতে এখন পর্যন্ত সঞ্চয় জমা হয়েছে ৩৫৫ কোটি টাকা। আবার সরকারের পক্ষ থেকে আরও ৩৫৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে সমিতিগুলোকে। আর ঘূর্ণায়মান ঋণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে ৪৯০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে বর্তমানে প্রকল্পের আওতায় দরিদ্র মানুষের মোট তহবিলের পরিমাণ এক হাজার ৩৩২ কোটি টাকা। গ্রামে গ্রামে জীবিকাভিত্তিক ক্ষুদ্র খামার গড়ে উঠেছে ছয় লাখ ৮০ হাজারটি। প্রকল্পের আওতায় গত এক বছরে দরিদ্র পরিবারপ্রতি আয় বেড়েছে ১০ হাজার ৯২১ টাকা করে। প্রকল্প এলাকায় নিম্ন আয়ের পরিবারের সংখ্যা ১৫ শতাংশ থেকে তিন শতাংশে নেমে এসেছে। দারিদ্র্য হ্রাসের পাশাপাশি অধিক আয়ের পরিবারের সংখ্যা আগের চেয়ে ২২ দশমিক আট শতাংশ থেকে ৩১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
প্রকল্পের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন ও সমন্বয়) গোলাম ছারোয়ার মোস্তফা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, 'যে উদ্দেশে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছিল তাতে শতভাগ সাফল্য এসেছে। মাঠপর্যায়ে পুরো কার্যক্রম তদারক করছেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ওয়াহিদুজ্জামান মোল্লা।' প্রকল্পের এক কর্মকর্তা বলেন, 'প্রথম দিকে মাঠপর্যায়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ করতে গিয়ে নানা প্রতিকূলতায় পড়তে হয়েছে। বিশেষ করে প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মনে নানা প্রশ্ন ছিল। কিন্তু দুই বছরে আশানুরূপ অগ্রগতি হওয়ায় তারা দারুণ খুশি। আগে একটি পরিবারকে অর্থায়ন করে স্বাবলম্বী করার পরিকল্পনা নিয়ে কর্মসূচি গ্রহণ করা হলেও, দুর্নীতি-অনিয়ম এড়াতে এখন সেটি সামষ্টিকভাবে অর্থাৎ সমিতির মাধ্যমে করা হচ্ছে। ৬০ সদস্যের সমিতি থেকে কয়েকজনকে নিয়ে গ্রুপ করা হয়। প্রতিটি গ্রুপ নিজেদের সুবিধা বা পছন্দ অনুযায়ী এবং যে এলাকায় যে ধরনের জীবিকা গ্রহণ করা সম্ভব সেটা করতে পারেন। এক্ষেত্রে হাঁস-মুরগির খামার, মৎস্য চাষ, দুগ্ধ উৎপাদন, মৌমাছি পালন, শস্য উৎপাদন, বনায়ন, উদ্যান সৃজনসহ নানা ক্ষুদ্রশিল্প রয়েছে।
লক্ষ্য উপকারভোগী বাড়ানো : প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় পর্যায়ে জুলাই-২০১৩ থেকে জুন ২০১৫ সাল পর্যন্ত এ প্রকল্পের আওতায় মোট ৪০ হাজার ৫২৭টি গ্রাম সমিতি গঠন করা হবে। এ হিসাবে এখন নতুন সমিতি গঠনের লক্ষ্য হচ্ছে ২৩ হাজার ২২৭টি। আগামী দুই বছরে মোট ২৪ লাখ ২৬ হাজার ৩৪০টি পরিবারকে প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসার কাজ চলছে। যাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উপকারভোগীর সংখ্যা হবে এক কোটি ২১ লাখ। দুই বছরে দুই লাখ ৮৩ হাজার ৭০০ ব্যক্তিকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রকল্পের মেয়াদ পাঁচ বছর পূর্ণ হলে অর্থাৎ ২০১৫ সালে সরকারের দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্পের আওতায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর নিজস্ব তহবিল দাঁড়াবে তিন হাজার ১২৬ কোটি টাকায়। যা বর্তমানে এক হাজার ৩৩২ কোটি টাকা।
প্রকল্পের আওতায় পল্লী ব্যাংক : মানুষকে সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করতে এবং অর্থ লেনদেন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরকার একটি 'পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক' গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান রাখতে এ ব্যাংক করার বিষয়ে আগ্রহ দেখান এবং পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দেন। এরই অংশ হিসেবে এখন পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক গঠনের কার্যক্রম চূড়ান্ত পর্যায়ে বলে সূত্র জানিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন এ ব্যাংকের গঠন প্রক্রিয়া ও আইন সম্পর্কে মতামতও দিয়েছে। শীঘ্রই এ ব্যাংক যাত্রা শুরু করবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য এটি হবে একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।