এক জীবনে অনেক বার অনাহূত লজ্জার সম্মুক্ষীন হতে হয়েছে। অনেক বার নিজের অজান্তেই হয়ত বোঝার ভুলের কারণে লজ্জিত হয়েছি। দূরের মানুষ, এমনকি কাছের বন্ধুরাও ইশারায় লজ্জা দেবার চেষ্টা করেছে। আমিও তাঁদের সে সুযোগে বাধা দেইনি। মনে হয়েছে, থাক, আমারই তো বন্ধু।
আমাকে লজ্জায় ফেলে তারা যদি মনের আনন্দ পায়, তবে তাই হোক।
আজ লজ্জা পেলাম পরিবারের কাছ থেকে। আগেও পেয়েছি। ভুলেও গেছি। আজকের টাও হয়ত একসময় ভুলে যাব।
অনার্সে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সেশনের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ সময় লাগিয়ে পড়াশোনা শেষ করেছি। এ লজ্জা অবশ্য আমার না, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের। কেউ জিজ্ঞেস করলে এর নাম বলে লজ্জা পেয়েছি। আমার পরে ভর্তি হওয়া জুনিয়ররা আমার আগে বের হয়ে যেতে দেখে লজ্জা পেয়েছি।
যা হোক, ছোটখাট একটা চাকরি করতাম।
লজ্জায় পড়ার মতনই ছিল বেতন। আমি সুখেই ছিলাম। তবে আব্বা লজ্জা পেতেন, আমার ছোট চাকরির জন্য। না করতেন চাকরি করতে।
চাকরিটা নিজের যোগ্যতায় পেয়েছিলাম।
কাউকে ধরে না। আব্বা যখন প্রথমদিকে তাঁর এক বন্ধুর কাছে আমাকে আমার সিভি সহ নিয়ে গিয়েছিল, তখন আব্বার বন্ধু অনেকক্ষণ আমার সিভির দিকে চেয়ে থেকে বলেছিলেন, " আমি তোমাকে বেতন দিতে পারব না, যাতায়াত ভাড়া নিও" তখন আমার আব্বা লজ্জা পাননি। আমি পেয়েছিলাম এবং আর কোনদিন কোন রেফারেন্সের চাকরি করিনি।
আজ লজ্জা পেলাম প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি ভর্তির জন্য টাকা চাইতে গিয়ে।
আমি পরতে চাই নি।
আরেকটু ভাল চাকরি খুঁজছি একটা। আব্বা চাপ দিল এম বি এ করার জন্য। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার যোগ্যতা নেই, তাই প্রাইভেটে।
সেই ভর্তির টাকার জন্য আব্বা বিশাল লেকচার দিল। সব ভাল ভাল কথা।
তাঁর জমি বিক্রির টাকা, চাকরি আর বেশিদিন নেই ইত্যাদি ইত্যাদি। বলে রাখা ভাল, জমি বিক্রি না করে তাঁর উপায় ছিল না, সব বেদখল হয়ে যাচ্ছিল। এই টাকাটা বোনাস। এবং পরিমাণ অনেক বেশি। আর প্রভিডেণ্ট ফান্ডের টাকাও পুরোটা অক্ষত রয়ে গেছে।
বসে খেলেও রাজার হালে থাকবেন তিনি।
শুরুতেই বাবাকে বলেছিলাম, অনেক টাকা লাগে প্রাইভেটে। চাকরি করি। পরে দেখা যাবে।
না, এখনই মাস্টার্স করতে হবে।
তো টাকা দেবার সময় প্রতিবার আমায় লজ্জায় ফেলা। আর টাকা দেবার পর সঙ্গগত কারণেই তাঁর মেজাজ খারাপ হয়। সেটার ফল ভোগ করে তাঁর ছোট মেয়ে।
মানসিক শক্তি পাচ্ছি না। ইট কাঠের এই দয়ামায়াহীন শহরে, সময়ের অতল গহবরে খুব ধীরে ধীরে,আস্তে আস্তে তলিয়ে যাচ্ছি।
উঠে দাঁড়াবার মত শক্তি পাচ্ছি না। মহা মনিষীদের অনুপ্রেরণার বাণী এখন বড় বিরক্তিকর ঠেকে। বার বার অন্তর্দন্দে জর্জরিত হতে হয় প্রতিনিয়ত।
কেউ পাশে এসে দাঁড়ায় না। কেউ জানতে চায় না, কেমন আছি, মন টা কেমন আছে।
কেউ পাশে এসে বসে না, দুটো ভালবাসার, ভাল লাগার কথা বলেনা।
আমিও বুঝে গেছি, আমার হবে না। তাই অপেক্ষা নেই, উচ্চাশা নেই কোন। শুধু অর্থহীন বেঁচে থাকা মরে যাবার জন্যে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।