আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রঞ্জনা, তুমি কোথায়

গ্রাম-প্রকৃতি-সবুজ-সারল্য যেখানে মিলেমিশে একাকার, সেখানে ফিরে যেতে মন চায় বার বার।



রঞ্জনা,
মনে পড়ে সেদিনের কথা ?
সময়টা ছিল বড়ই লোভনীয়
তোমার-আমার ভালো লাগার সূতোয় গাঁথা।
শীত তখন যাই যাই করছে
বসন্ত কড়া নাড়ছে প্রকৃতির রুদ্ধ দ্বারে।
তুমি আমার একটি হাত তোমার দু’হাতের মুঠোয় নিয়ে
বলেছিলে, আমায় একগুচ্ছ স্বপ্ন ধার দিতে পারো ?’

তোমার কথাগুলো তখন আমার কাছে শুনাচ্ছিল
বিধ্বস্ত সময়ের কাছে জরাজীর্ণ কোন মানুষের ব্যাকুল আর্তির মতো।
কিন্তু তোমার বেলায় এমনটা তো হবার কথা নয় ?
তোমরা সময়কে বেঁধে রাখতে পারো তোমাদের ইচ্ছের দাসত্বের কাছে।


তাই তোমার কথা শুনে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি
ফুটে উঠেছিল আমার দারিদ্র নিপীড়িত মুখজুড়ে।
আমি বললাম, ‘ধ্যাৎ, কি বলছো এসব ?
স্বপ্ন আবার ধার দেয়া যায় না-কি ?’

তুমি আমার হাতটাকে তোমার হাতের বন্দীত্ব থেকে মুক্তি দিয়ে
উঠে দাঁড়িয়ে বললে,
‘দেয়া যায় ! একশো বার দেয়া যায় !! হাজার বার দেয়া যায় !!!
তুমি দিবেনা তাই এভাবে বলছো। ’
আমি এবার একটু গভীরভাবে তোমার চাওয়াটুকু বুঝার চেষ্টা করলাম।
উঠে দাঁড়িয়ে পরিপূর্ণ দৃষ্টি মেলে তোমার মুখের দিকে তাকালাম।

সূর্য তখন অস্তাচলের পাটে।


এর রক্তিম আভা হুটোপুটি খাচ্ছে তোমার মুখজুড়ে
রহস্যময় কোন এক আনন্দে মেতে।

রঞ্জনা, তোমাকে কোনদিন বলিনি, আজ বলছি।
সেদিন তোমার চোখে-মুখে অনাঘ্রত সুন্দরের হাতছানি আমি দেখেছিলাম।
মুহূর্তের জন্য সেই হাতছানিতে সাড়া দিতে আমার মন ব্যাকুল হয়ে উঠেছিল।
কিন্তু সেটা ক্ষণিকের মাত্র।


পর মুহূর্তে আমি নিজকে সামলে নিলাম।
তোমার কাঁধে আলতো করে একটা হাত রেখে বললাম,
‘কি এমন স্বপ্ন আছে আমার যে তোমাকে ধার দিতে পারি ?’

আমার কথায় তুমি একটু যেন কেঁপে উঠলে।
কাঁধ থেকে আমার হাতটা তোমার হাতে নিয়ে
চোখ রাখলে আমার চোখে।
এবার কেঁপে উঠলাম আমি।
দেখলাম তোমার দু’চোখে মেঘনার অথৈ জল।


জল ছলছল চোখে তুমি বললে,
‘তোমার কাছে স্বপ্ন না থাকলে আমি ধার চাইব কেন ?
অনেক অনেক স্বপ্ন আছে তোমার কাছে।
তুমি মানুষকে জীবনের স্বপ্ন দেখাতে পারো,
বাঁচার স্বপ্ন দেখাতে পারো,
ধূ ধূ মরুভূমিকে উর্বর জমিতে রূপান্তরের কথা বলতে পারো।
সেখান থেকে আমাকে একটু স্বপ্ন ধার দাও স্বপ্নীল।
আমি বাঁচতে চাই,
তোমাকে নিয়ে বাঁচতে চাই,
তোমার সাথে বাঁচতে চাই। ’

রঞ্জনা, তুমি জাননা এরপর আমার কি হলো।


আমার চোয়াল দু’টি শক্ত হয়ে এলো,
হাত দুটি মুষ্টিবদ্ধ হলো আমার অজান্তে
তবু তোমার প্রতি এতটুকু নিষ্ঠুর হতে পারলাম না আমি।
গলার স্বর সাধ্যমতো মেলায়েম করে বললাম,
‘সে তো কবিতার কথা, সাহিত্যের কথা।
সেখানে তুমি বাস্তবকে খোঁজ কেন ?’

তুমি ঝট করে উত্তর দিলে। রাগান্বিত তোমার কন্ঠ।
‘তাহলে তুমি মিথ্যাচার করছো তোমার কবিতার সাথে ?
তোমার নিজের সাথে ? ছি !’

চলে গেলে তুমি রঞ্জনা।


এরপর কবিতাই হয়ে উঠলো আমার ধ্যান-জ্ঞান সব।
যে সময়টা তোমার সাথে কাটাতাম সেটাও দখল করে নিল কবিতা
এবং
এক সময় আমার কবিতা আমাকে ছাপিয়ে উঠলো।
তোমার মতে কবিতায় দেখানো স্বপ্নের টানে
অনেক রঞ্জনারা আসল আমার কাছে।
কিন্তু তোমার মতই মোহভঙ্গ হলো ওদের।

তাই আজ আমি একা রঞ্জনা।

বড় একা !
আমার কলমের খোঁচায় আর স্বপ্নঝরা কবিতা তৈরী হয়না।
তোমার সাথে সুখের পায়রা উড়ানো সেই সময়টাও আজ আর নেই।
আছে কেবল সময়ের কাছে পরাজয় মেনে নিয়ে
স্থবির হয়ে যাওয়া একটি জীবন।
আজ বুঝতে পাচ্ছি রঞ্জনা
তুমিই ছিলে আমার কবিতার উৎস
আমার স্বপ্নময় কাব্যিক মনের ¯্রােতস্বীনি ধারা।
সেই স্বপ্নই তুমি আমার কাছে ধার চেয়েছিলে।


আমি দিতে পারিনি, যা দিয়েছি আমার কবিতার পাঠককে।

তাই মনে হচ্ছে, আর একবার যদি
সেই ¯্রােতস্বীনি ধারায় ডুব দিতে পারতাম
তাহলে আমার কলম আবারও মুখর হয়ে উঠত কাগজের বুকে।

রঞ্জনা, তুমি কোথায় ?
দিবে কি আমায় একগুচ্ছ স্বপ্ন ?
০৭-০১-২০১৪

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।