আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ে সরকারের 'নীরব' কূ

৫ জানুয়ারির নির্বাচনের বিষয়ে হতাশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সুদৃষ্টি ফেরাতে নীরবে তৎপরতা শুরু করেছে সরকার। এ নীরব কূটনীতির অংশ হিসেবে এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশে নিয়োজিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনাররা সংশ্লিষ্ট সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন। অনানুষ্ঠানিক আলোচনা ঢাকার বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গেও শুরু করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আগামী সপ্তাহে বিদেশি কূটনীতিকদের বিভিন্ন গ্রুপে ডেকে ব্রিফিং করার পরিকল্পনাও আছে পররাষ্ট্র দফতরের। এ জন্য মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশের একাধিক বন্ধুরাষ্ট্রের সহায়তাও প্রার্থনা করা হচ্ছে। সরকারি দায়িত্বে থাকা কূটনীতিকদের আশা, বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতা, সহিংসতা বন্ধ করা, রাজনৈতিক আলোচনার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতার প্রতিশ্রুতির কথা ভেবে বিদেশি রাষ্ট্রগুলো সদ্য নির্বাচিত সরকারকে সব ধরনের নৈতিক সহযোগিতা করবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের ও পরের পরিস্থিতি নিয়ে বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর কাছে পাঠানো ও ঢাকায় কূটনীতিকদের ব্রিফ করার জন্য অবস্থানপত্র এরই মধ্যে তৈরি করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে সহযোগী সব দেশেই পাঠানো হবে। এতে দশম সংসদ নির্বাচন নিয়ে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা, নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা, জঙ্গিবাদ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ ইস্যুগুলো গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। দেশের স্বাধীনতাবিরোধী তৎপরতার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। বিরোধী দল বিএনপিকে বারবার আলোচনা ও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ডাক দেওয়ার বিষয়টিও স্থান পেয়েছে অবস্থানপত্রে। নির্বাচনকালীন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে এইচ এম মাহমুদ আলীর বক্তব্য অবস্থানপত্র তুলে ধরা হয়েছে। তবে অবস্থানপত্র তৈরিতে প্রত্যক্ষ অবদান আছে প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভীর। সরকারের এই তৎপরতাকে 'নীরব কূটনীতি' হিসেবে অভিহিত করছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কূটনীতিকরা। এ ক্ষেত্রে সময় নিয়ে কাজ করতে চাইছেন তারা। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন, পররাষ্ট্র দফতরের পক্ষ থেকে বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধি ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেশে ও দেশের বাইরে সিরিজ বৈঠক করা হবে। এরই মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একাধিক বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। এ ধরনের বৈঠক আরও হবে। বিদেশে থাকা বাংলাদেশের মিশনগুলোও সেই দেশগুলোর সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়মিত এ ইস্যুতে বৈঠক করে বাংলাদেশের বাস্তবতা বোঝাতে চেষ্টা করবে। পররাষ্ট্র দফতরের উচ্চপদে আসীন অন্য এক কর্মকর্তা এ সম্পর্কে বলেছেন, বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর বিবৃতি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে তারা বাংলাদেশের আগামী সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি উল্লেখ করেনি। নিঃসন্দেহে তারা সুচিন্তিতভাবে এড়িয়ে গেছে। অর্থাৎ তারা একধরনের 'ওয়েট অ্যান্ড সি' নীতি গ্রহণ করেছে। তাই সরকারের নিয়মিত তৎপরতা সফল হওয়ার বড় ধরনের সাফল্য আছে বলেও মনে করা হচ্ছে। নির্বাচন শেষে একের পর এক বিবৃতি দিয়ে নির্বাচনে জনসম্পৃক্ততা কম থাকার বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করে বক্তব্য দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুনসহ কমনওয়েলথ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ভোট গ্রহণের আগেই অর্ধেকের বেশি প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে যাওয়া, নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি কম থাকায় বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর হতাশা। এ ছাড়া বেশ আগে থেকেই বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে বারবার আহ্বান জানানোর পরও নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে একমত না হওয়া বাংলাদেশের বন্ধু ও সহযোগী এসব রাষ্ট্র ও সংস্থাকে হতাশ করেছে বলে বিবৃতিগুলোয় উঠে এসেছে। এ জন্য তারা অতি দ্রুত বিরোধী পক্ষের সঙ্গে সংলাপ শুরু করে নিকটবর্তী সময়ে পুনরায় অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছে। দেশ ও সংস্থাগুলোর প্রতিটিই সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। সরকারও সহিংসতার এ বিষয়টিকেই সামনে নিয়ে আসছে।

অবস্থানপত্রে বলা হয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করতেই জঙ্গি তৎপরতা চালাচ্ছে জামায়াত-শিবির। সরকার রাষ্ট্রের কলঙ্ক মোচনের জন্য অধিকাংশ বাংলাদেশির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ বিচার সম্পন্ন করতে বদ্ধপরিকর। এ জন্য একটি বিশেষ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে নানা সহিংসতা ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড করছে সন্ত্রাসী দল জামায়াত। তাদের রাজনৈতিকভাবে সহযোগিতা করছে বিএনপি। সরকার জামায়াত ছাড়া বিএনপিকে আলোচনার জন্য বারবার আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু বিরোধী দলের পক্ষ থেকে সহিংস কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। সরকার রাষ্ট্রের সম্পত্তি ও জনগণের জান-মালের নিরাপত্তার জন্য সব ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে। এর পরও বিরোধী পক্ষের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী পুনরায় আহ্বান জানিয়েছে, যা এখনো বহাল আছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.