আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটানা ডিউটিতে ক্লান্ত পুলিশ

পুলিশ কনস্টেবল আবদুল আউয়াল। চেহারায় ক্লান্তির ছাপ ও বিষণ্নতা স্পষ্ট। কাঁধে রাইফেল নিয়ে দায়িত্বপালন করছেন নয়াপল্টন এলাকায়। ভোর ৪টা থেকে ডিউটিতে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে।

কখন ব্যারাকে ফিরবেন, জানা নেই তার। একই অবস্থা মিরপুর ব্যারাকের কনস্টেবল রিপন মিয়ার। তিনি দায়িত্বপালন করছেন বাংলামোটর এলাকায়। গতকাল দুপুরে ওই পুলিশ কনস্টেবল কিছুটা খেদের স্বরে বলেন, মাঠেই খাওয়া, মাঠেই থাকা। ডিউটি শেষে ঘুমাতে গিয়েও স্বস্তি নেই।

গ্রামের বাড়ি থেকে খবর এসেছে তিন বছরের মেয়েটি অসুস্থ তাকেও দেখতে যেতে পারিনি।

গতকাল বিকালে কথা হয় গেন্ডারিয়া থানার কনস্টেবল মুকুলের সঙ্গে। কেমন চলছে, জিজ্ঞেস করলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে মুকুল বলেন, প্রায় এক বছর ধরে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। সেই থেকে সকাল-সন্ধ্যা থাকতে হচ্ছে রাস্তায়। প্রতিদিন টানা ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা ডিউটি।

শুধু আউয়াল, রিপন ও মুকুলই নয়, পুলিশ সদস্যদের এ কষ্টগাথা নিত্যদিনের। প্রতিদিন ডিউটি করার কথা ৮ ঘণ্টা। সেখানে একজন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন ১৬-১৮ ঘণ্টা। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পুলিশের এ ব্যস্ততা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার নিয়মিত কাজের পাশাপাশি হরতাল-অবরোধে বাড়তি দায়িত্বও পালন করছেন তারা।

মাঠে র্যাব-বিজিবি থাকলেও সামনে থেকে পরিস্থিতি সামাল দিতে হচ্ছে পুুলিশকেই। কথা হয় ঢাকা মহানগর পুলিশের কদমতলী থানার এক এসআইয়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা। রাজপথ এখনো উত্তপ্ত। ঘটনা ঘটলে ছুটে যেতে হয় স্পটে।

পিকেটারদের থামানো থেকে শুরু করে আসামি ধরাসহ প্রতিদিন রুটিন কাজ। এসব করতে গিয়ে প্রাণ যায় পুলিশের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে রামপুরা থানার এক কনস্টেবল বলেন, দিনে-রাতে রাস্তায় থাকি। উপরমহলের যেভাবে নির্দেশ, সেভাবেই কাজ করি। খাওয়া-ঘুম কিছুই ঠিকভাবে হয় না।

যা খাই, তাতেও যথাযথ পুষ্টি নেই। জীবন আর চলছে না। তিনি জানান, প্রায় এক বছর ধরে একটানা ডিউটি করছে পুলিশ। ক্লান্ত হয়ে উঠেছে তারা। হাঁপিয়ে উঠেছে।

বিরোধীজোটের কর্মসূচিতে দায়িত্ব পালন করতে হিমশিম খাচ্ছে। বিরোধীজোটের টানা অবরোধে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ঘুম-বিশ্রাম নিতে পারছে না পুলিশ। তাই নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকে বিরোধী জোটের টানা অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচি এবং নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা ঠেকাতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে পুলিশ। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে রাজনৈতিক অস্থিরতা সামাল দিতে মাঠে নেমেছে পুলিশ।

পুলিশ সদর দফতর থেকে পাওয়া তথ্য মতে, গত ১০ মাসে (২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৫ ডিসেম্বর) দেশজুড়ে শুরু হওয়া রাজনৈতিক সহিংসতায় ৩ শতাধিক ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন।

এদের মধ্যে ১৪ জন পুলিশ, ২ জন বিজিবি ও একজন সেনা সদস্য রয়েছেন। আহত হয়েছেন পুলিশসহ ১০ সহস্রাধিক ব্যক্তি।

মাঠপর্যায়ের পুলিশ সূত্রগুলো বলেছে, বর্তমানে টানা অবরোধে একজন পুলিশ কনস্টেবলকে দৈনিক গড়ে ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা করে ডিউটি করতে হচ্ছে। তাকে ঘুম থেকে উঠতে হচ্ছে ভোর ৪টায়। চেকপোস্টে সে দায়িত্বে নিয়োজিত হচ্ছে ভোর ৫টায়।

এই ডিউটি শেষ হতে রাত ৮টা বেজে যাচ্ছে। ব্যারাকে যখন সে ফিরছে তখন রাত ১০টা। একই চিত্র থানার অফিসার ইনচার্জের (ওসি) ক্ষেত্রেও। তাদেরও ভোর ৪টায় ঘুম থেকে উঠে পুলিশের ডিউটি তদারক করতে হচ্ছে। রাত ৩টার আগ পর্যন্ত বিশ্রামের কোনো সুযোগ পাচ্ছেন না থানার ওসিরা।

বেশির ভাগ সময়ই ওসিকে থাকতে হচ্ছে থানা সংলগ্ন কোয়ার্টারে।

সূত্র মতে, টানা ডিউটির কারণে পুলিশ সদস্যরা কোনো বিশ্রাম পাচ্ছেন না। অনেকে রীতিমতো পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েছেন। ফলে সহিংসতার কোনো ঘটনা ঘটলে তা সামাল দিতে রীতিমতো বেগ পেতে হচ্ছে পুলিশকে।

 

 



অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.