আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খেলাঘর ৬

আমি হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল...

জহির সকাল থেকে মুখ অন্ধকার করে ঘুরছে। কারণ ঘুম থেকে উঠে সে নিশাকে সিগারেটের প্যাকেট উপহার দিতে গিয়েছিল। নিশা বিরক্ত হয়ে তাকে ‘ass’ বলে গালি দিয়েছে। জহিরের ধারণা ass শব্দটার অর্থ খুব ভয়ঙ্কর। এবং নিশা তাকে অতি নিম্নশ্রেণীর একটা গালি দিয়েছে।

সমস্যা হচ্ছে, শব্দটার অর্থ সে জানে না। এই শব্দের বানান কি তাও সে জানে না। বানান জানলে অভিধান দেখে অর্থ জানার চেষ্টা করতো। জহিরের ইচ্ছে করছে ass শব্দটার অর্থ কাউকে জিগ্যেস করতে। সেটা সম্ভব না।

ঘরের চাকরের ইংরেজি শব্দের অর্থ জানার আগ্রহকে সবাই অন্য চোখে দেখবে। সাদিয়াকে জিগ্যেস করা যেতো। উনি খুব সরল মনের মানুষ। জিগ্যেস করার সঙ্গে সঙ্গেই অর্থ বলে দিবেন। কেন জিগ্যেস করছে তার কারণ জানতে চাইবেন না।

ঝামেলার কথা হচ্ছে, এই ঘটনার সময় সাদিয়া নিশার ঘরে উপস্থিত ছিল।
জহির বাগানের পেছন দিকে গিয়ে খুব যত্ন করে বেন্সনের প্যাকেট খুলল। প্যাকেটটা নিশা নেয়নি। কাজেই এটা এখন তাকেই খেতে হবে। এক হিসেবে প্যাকেট না নিয়ে নিশা ভালই করেছে।

গরিবের মনেও মাঝে মাঝে বেন্সন টানার ইচ্ছা হয়। নিশা প্যাকেটটা নিলে তার দামি সিগারেট টানার ইচ্ছা আপাতত অপূর্ণ থেকে যেতো।
আকাশে হালকা মেঘ করেছে। রৌদ্রের তেজ কমে গিয়ে ঠাণ্ডা বাতাস ছেড়েছে। এমন আবহাওয়ায় সিগারেট ধরানোর মজাই আলাদা।

জহির সাবধানে একটা সিগারেট ধরাল। বাতাসের ঝপটায় ধোঁয়া ভেতরে নিতে কষ্ট হচ্ছে। সম্পূর্ণ ফিলিংস পাওয়া যাচ্ছে না। জহির সিগারেটে লম্বা একটা টান দিয়ে অবাক হয়ে লক্ষ্য করল, তার মাথায় উদ্ভট চিন্তা চলে এসেছে যেটা তার সামাজিক অবস্থানের সঙ্গে কোনোভাবেই মানায় না। ।

ঠিক এই মুহূর্তে সে ভাবছে, নিশাকে যদি বিয়ের প্রস্তাব দেয় নিশার ফ্যামিলি কি তা গ্রহণ করবে ? জহির নিজেই তার প্রশ্নের উত্তর দিল, অসম্ভব।
সাইদ সাহেব আজ বাসা থেকে বের হননি। বিকেলে তিনি নিজের মনে বাগানে পায়চারি করছিলেন। বাগানের গাছগুলি দেখতে দেখতে তিনি পেছনের দিকে চলে এসেছিলেন। লেবু গাছের পাশ থেকে হঠাৎ ‘অসম্ভব’ শব্দটা শুনে তিনি চমকে উঠলেন।

পা টিপে টিপে কাছে এসে দেখেন জহির বসে বসে গাঁজা খাচ্ছে। আশেপাশে গাঁজার উৎকট গন্ধ।
জহির !
জহির লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, স্যার ভালো আছেন ?
তুই এখানে কি করছিস ?
কিছু না স্যার। এমনি বসে ছিলাম।
একটু আগে শুনলাম তুই বলছিস ‘অসম্ভব’।

কি অসম্ভব ?
জহির হেসে বলল, রাস্তা দিয়ে একটা কুকুর যাচ্ছিল। ওটার লেজ সোজা করা অসম্ভব।
সাইদ সাহেব অবাক হয়ে বললেন, কি বলছিস এসব !
জহির আবারো হেসে বলল, বুঝেন নাই, আফনের লেঙ্গুর সোজা করা অসম্ভব।
সাইদ সাহেব থতমত খেয়ে গেলেন। হারামজাদা এসব কি বলছে।

গাঁজার নেশা মনে হয় ভাল করেই চড়েছে।
এখানে বসে বসে গাঁজা খাচ্ছিস ? হারমজাদা থাবড়ায়ে দাঁত খুলে ফেলব।
জহির উদাস ভঙ্গিতে বলল, ও আচ্ছা।
ও আচ্ছা মানে ? এক্ষুনি তুই বাড়ি থেকে বের হয়ে যা।
জহির লেবু গাছের নিচে বসতে বসতে বলল, নিজের পয়সা খরচ করে গাঁজা কিনেছি।

আফনে চেতেন ক্যান ?
শালা মুখে মুখে কথা বলছিস !
কথা তো মানুষ মুখেই বলে।
কাল থেকে যেন তোকে আর আমি না দেখি।
সাইদ সাহেবের মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। নিজেকে সামলে নিয়ে তিনি বাসার ভেতরে চলে গেলেন। জহির তার বিশ্বস্ত কর্মচারী।

তার এই অধপতন দেখে সাইদ সাহেব খুব কষ্ট পেলেন। তিনি ঠিক করলেন, কাল সকালে সবার সামনে জহিরের মাথা কামিয়ে বাসা থেকে বের করে দিবেন।

সকাল আটটা।
সাইদ সাহেব ‘নাজ হেয়ার ড্রেসার সেলুন’ থেকে নাপিত ডেকে এনেছেন। জহিরের মাথা কামিয়ে তাকে বিদেয় করা হবে।

ঠিক এই মুহূর্তে তিনি তাঁর একতলা বাড়ির পেছন দিকে চেয়ার পেতে বসে আছেন। তাঁর সামনে এক মগ দুধ। আগুন গরম। কাঁচা ডিম এবং চিনি মিশিয়ে দেয়া হয়েছে দুধে। একটু পরপর তিনি বিরক্ত চোখে মগের দিকে তাকাচ্ছেন।

কারণ মগটার আশেপাশে একটা নীল মাছি ঘুরঘুর করছে। মাছিটা যে কোনো সময় মগের কোণায় বসে দুধে মুখ দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। মগে মাছি বসলে তিনি আর এই দুধ খাবেন না। মজার ব্যাপার হচ্ছে, তাঁর অবচেতন মন চাইছে মাছিটা বসুক। কেন চাইছে তিনি বুঝতে পারছেন না।

মানুষ প্রায় সময়ই তাঁর ক্ষুদ্র ইচ্ছাগুলির কোনো কারণ নির্ণয় করতে পারে না।
আটটার সময় জহিরকে আসতে বলা হয়েছিল। জহিরের কোনো খোঁজ নেই। সাইদ সাহেব তাঁর বুড়ো বাবুর্চি মুল্লুক চানকে জহিরের খোঁজ আনতে পাঠালেন। মুল্লুক চান সারা বাড়ি খোঁজে এসে বলল, ছার, জহির নাই।

ম্যাডাম আসতেছেন। ‘ম্যাডাম আসতেছেন’ কথাটা শুনে তিনি বুঝলেন ঘটনা অন্য। জহির এমনি এমনি বাড়ি থেকে হাওয়া হয়ে যায়নি।
শাহেদা সামনের চেয়ারে বসতে বসতে বললেন, কি ব্যাপার ?
সাইদ সাহেব গলার স্বর যথাসম্ভব গম্ভীর রাখার চেষ্টা করে বললেন, জহিরকে দেখছি না—কোথায় গেছে ?
কেন ?
না এমনি।
শাহেদা কঠিন গলায় বললেন, তুমি তাকে বের করে দিবে শুনলাম।


সাইদ সাহেব কিছুক্ষণ শাহেদার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন, হ্যাঁ, মাথা কামিয়ে বের করে দিব। হারামজাদা জানে না আমি কি জিনিস।
সে না জানুক, আমি জানি তুমি কি জিনিস। নেশার ঘোরে সে তোমাকে বাজে কথা বলেছে এটাই কি তার অপরাধ ?
সাইদ সাহেব গম্ভীর গলায় বললেন, এটা তার অপরাধ না। তার অপরাধ সে আমার বাড়ির ভেতরে বসে গাঁজা খেয়েছে।

ভদ্রলোকের ঘরে গাঁজা খাওয়া...
শাহেদা তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, নিজেকে খুব ভদ্রলোক বলছ, তুমি কোন ধোয়া তুলসি পাতা ?
মানে ?
এখনো ঘুমাতে যাবার আগে দুই পেগ ব্রান্ডি খাও এটা ভুলে যেয়ো না।
মদ খাওয়া কোনো ছোটলোকি না।
মদ খাওয়ার কথা বাদই দিলাম। কলেজে পড়ার সময় তুমিও তো নিয়মিত গাঁজা খেতে, ভুলে গেছ ?
সাইদ সাহেব আচমকা এই আক্রমণের জন্যে প্রস্তুত ছিলেন না। স্ত্রীর কথায় তিনি মিইয়ে গেলেন।


তোমার বন্ধুরা আড়ালে তোমাকে ‘গাঁজাখোর’ ডাকতো মনে নেই ?
সাইদ সাহেব অসহায় চোখে শাহেদার দিকে তাকালেন।
শাহেদা কি যেন একটা বলতে গিয়েও বললেন না। উঠে গেলেন। শাহেদা চলে যাওয়ার পর জহির এসে বলল, স্যার আমাকে খোঁজ করেছিলেন।
সাইদ সাহেব মুখে কিছু বললেন না।

হাত ইশারা করে বললেন, নিজের কাজে যা।

চলবে...

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।