রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশের তৈরি পোশাকশিল্পে কয়েক মাসে প্রায় ৭ হাজার ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আর চলমান সহিংসতা যদি বন্ধ না হয় তাহলে আগামী জুনের মধ্যে ছোট-মাঝারি মিলিয়ে প্রায় ৭০০ কারখানা বন্ধের আশঙ্কা করছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। জানা যায়, এরই মধ্যে ২৫-৩০ শতাংশ ক্রেতা বাংলাদেশের পরিবর্তে পাশের দেশগুলো থেকে পণ্য নিতে শুরু করেছে। পোশাক মালিকরা বলছেন, সব মিলিয়ে পোশাকশিল্পে বিরাজ করছে 'টানটান' ও 'নাজুক' অবস্থা। আর এ অবস্থায় ছোট-মাঝারি কারখানাগুলো নূ্যনতম মজুরি বাস্তবায়নে হিমশিম খাচ্ছে।
এ জন্য কারখানাগুলোয় শুরু হয়েছে শ্রমিক ছাঁটাই। এমনকি পুঁজির অভাবে অনেক কারখানায় ঝুলছে তালা।
বিজিএমইএ সূত্রে জানা যায়, মৌসুম সত্ত্বেও এখন রপ্তানি আদেশ কম। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতার কারণে গার্মেন্ট মালিকরা মূলত এয়ার শিপমেন্ট ও অর্ডার ফিরিয়ে দেওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যায় পড়ছেন। রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিজিএমইএ তাদের সদস্যভুক্ত কারখানাগুলোর কাছে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে সে বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছে।
এতে বিভিন্ন কারখানার দাখিলকৃত প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, প্রায় দেড় হাজার গার্মেন্টের যেগুলো সরাসরি বিদেশে পোশাক রপ্তানিতে জড়িত, তাদের প্রায় ৭ হাজার ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে বিমানের ভাড়া বাবদ ৩ হাজার কোটি, বিলম্বে পণ্যে দেওয়ায় হ্রাসকৃত যে মূল্য তা অপর্যাপ্ত হওয়ায় আরও ৩ হাজার কোটি এবং অর্ডার ফিরিয়ে দেওয়া বাবদ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের বাড়তি মজুরি দিতে না পেরে এবং পুঁজি হারিয়ে প্রায় ৭ শতাধিক ছোট ও মাঝারি কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে বিজিএমইএ। এদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতায় চলতি বছর পোশাকশিল্পের জন্য শুল্কমুক্ত কাঁচামাল পর্যাপ্ত পরিমাণে আমদানি করা যায়নি। আর সময়মতো পণ্য না দিতে পেরে জরিমানা গুনতে হচ্ছে পোশাক মালিকদের।
মালিকরা জানান, নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে বিদেশি ক্রেতারা আগে থেকেই বাংলাদেশে পণ্যের অর্ডার দেওয়া থেকে বিরত থাকেন। নির্বাচন শেষে এ অবস্থা স্বাভাবিক হয়ে আসার কথা। কিন্তু নির্বাচন-পরবর্তী সময়েও সহিংসতা বন্ধ না হওয়ায় ২৫-৩০ ভাগ ক্রেতা বাধ্য হয়েই বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে পাশের দেশে চলে যাচ্ছে। বিজিএমইএ-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম মান্নান কচি বলেন, মজুরি বৃদ্ধি হওয়ার পর ক্রেতারা সেভাবে সাড়া না দেওয়ায় প্রায় ছোট-মাঝারি ৭০০ কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। এর মধ্যে ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত অগি্নসংযোগ ও হামলায় মোটা অঙ্কের পণ্যের ক্ষতি হয়েছে।
বিজিএমইএ-এর পরিচালক আরশাদ জামাল দিপু বলেন, নির্বাচনকালে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আগেও গার্মেন্টে প্রতিকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। তবে এবার টানা অবরোধের কারণে ক্ষতির পরিমাণ অন্যবারের চেয়ে বেশি। পোশাকশিল্পের উন্নয়নের জন্য তিন-চার মাস 'ব্রিদিং পিরিয়ড' দরকার। পোশাক খাত ধ্বংস হয়ে গেছে এমনটি নয়। তবে এটি খুব 'টানটান' অবস্থায় রয়েছে।
তাই সংশ্লিষ্টদের বিদ্যমান পরিস্থিতির উন্নয়নে উদ্যোগী হতে হবে। বিজিএমইএ-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. সহিদুল্লাহ আমিন বলেন, 'চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন মজুরি কার্যকর হওয়ায় মালিকরা বিপাকে পড়েছেন। আমরা শ্রমিকদের বেতন কীভাবে দেব তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। এ অবস্থায় অনেক কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই শুরু হয়েছে, একের পর এক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ' বিজিএমইএ সূত্রে জানা যায়, ছয় মাস ধরে সাভার-আশুলিয়া এলাকায় মালিকরা শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ রেখেছেন।
এ জন্য তারা রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে দায়ী করছেন। কয়েকজন মালিক জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা সব ধরনের নিয়োগ বন্ধ রেখেছি। আর পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা সম্ভব হবে না। বিজিএমইএ-এর সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, 'দেশের পরিস্থিতি শান্ত না হলে আগামী জুনের মধ্যে ৫০০-এর অধিক ছোট-মাঝারি কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ' বিজিএমইএ-এর সাবেক প্রেসিডেন্ট সিদ্দিকুর রহমান বলেন, "পোশাকশিল্প অত্যন্ত 'নাজুক' অবস্থায় রয়েছে।
রাজনৈতিক অস্থিরতায় আমাদের বিশাল পরিমাণ উৎপাদন ক্ষতি হয়েছে। বিমান ভাড়া বাবদ মালিকদের মোটা অঙ্কের ক্ষতি হয়েছে। আর এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে আমাদের রাজনৈতিক সহিংসতার সমাধান করতেই হবে। "
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।