আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জাতি চাইলেও জামায়াত সঙ্গ ত্যাগ নয়, আপোসও নয়ঃ আপোসহীন নেত্রী



গত ২০ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখ ১৮ দলীয় জোটের উদ্যোগে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণসমাবেশ কর্মসূচী পালনের কথা থাকলেও জামায়াতহীন তা বিএনপির দলীয় কর্মসূচীতে রূপ নেয় । তবে জামায়াতকে ত্যাগ করতে যাচ্ছে এই বার্তা দিতে সরকারের বিরুদ্ধে ও নির্বাচন নিয়ে জনগণকে অভিনন্দন জানাতে ডাকা উক্ত কর্মসূচীকে বিএনপি শেষ পর্যন্ত জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকীর কর্মসূচী হিসেবে উপস্থাপন করে । আপাতঃ দৃষ্টিতে জামায়াত বিহীন সমাবেশ মনে হলেও প্রধান অতিথির বক্তব্যে সরকারকে অবৈধ উল্লেখ করে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া উসকানিমূলক বক্তব্যের মধ্য দিয়ে জামায়াতের সাথে সম্পর্ক রাখার বিষয়ে তাঁর দূর্বলতাই প্রকাশ পেয়েছে । অর্থাৎ বাহ্যত জামায়াতকে ত্যাগ করতে যাচ্ছে বুঝালেও কার্যতঃ জামায়াতের সাথেই গোপনে সম্পর্ক অক্ষুন্ন রাখতে বিএনপির প্রত্যয় ব্যক্ত হয়েছে। তাঁর অভিনব কৌশলে জামায়াতকে সঙ্গে রাখার ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্যের বিশেষ দিকগুলো তুলে ধরছিঃ

১।

বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জনগণ ও বহির্বিশ্বের সমর্থন পেতে জামায়াতে ইসলামীকে দৃশ্যত বাদ দিয়ে ঢাকা গণসমাবেশ করলেও তাঁর বক্তব্যে অপর উগ্রপন্থী সংগঠন হেফাজতের প্রতি দরদ বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় । তাহলে কি বিএনপি জামায়াতকে হেফাজতের ব্যানারে ১৮ দলীয় জোটে রেখে জনগণকে ধোঁকা দেয়ার অভিনব কৌশল গ্রহণ করতে যাচ্ছে বিএনপি? এছাড়া জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণার প্রেক্ষিতে জামায়াত নিষিদ্ধ হলে হেফাজতের ব্যানারেই নতুনভাবে সরব হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায় । বেগম খালেদা জিয়া তাঁর বক্তব্যে হেফাজতের অন্তরালে জামায়াতকে সক্রিয় রাখার পরোক্ষ ইন্ধন দিয়েছে । তাহলে কি বলা যায় বিএনপি জামায়াতে সঙ্গ ত্যাগ করতে যাচ্ছে?

২। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর জামায়াত-শিবিরের সহিংসতার বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে তিনি সরকারের উপর দায় চাপানোর চেষ্টা করে প্রকৃতপক্ষে জামায়াত-শিবিরের সাফাই গেয়েছেন ।

এর মাধ্যমে এটাই স্পষ্ট হচ্ছে যে, তিনি প্রকাশ্যে জামায়াতকে ত্যাগের অভিনয় করলেও নাট্যমঞ্চে পরোক্ষভাবে খলনায়ক হিসেবে জামায়াতকেই বেছে নিচ্ছেন ।

৩। বাংলার মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে সম্প্রতি সাধারণ জনগণ ও পুলিশের উপর জামায়াত-শিবিরের নারকীয়তার দৃশ্য । আর সরকার জামায়াত-শিবিরের এ নারকীয়তাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে যৌথবাহিনীকে নিয়োজিত করেছে সরকার । যৌথবাহিনীও যথেষ্ট সাফল্যের সাথে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনায় জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছে ।

অথচ সেই যৌথবাহিনীর চলমান কার্যকরী অভিযান নিয়ে বেগম খালেদা জিয়া সংশয় প্রকাশ করেছেন। অধিকন্তু, তিনি হুমকি দিয়েছেন যে, যৌথবাহিনী প্রত্যাহার করা না হলে সহিংসতার মাত্রা আরও বেড়ে যাবে । এর মানে যৌথবাহিনীর উপর তালেবানী কায়েদায় জামায়াত-শিবিরের চলমান আক্রমণের মাত্রা আরও বেড়ে যাবে । তাই বেগম জিয়া দৃশ্যত জামায়াতের সাথে দূরত্ব সৃষ্টির চেষ্টা করছে বুঝাতে চাইলেও পরোক্ষভাবে যৌথবাহিনীর উপর আক্রমণ ও সহিংসতা সৃষ্টিতে জামায়াতকে উসকে দিচ্ছে ।

৪।

বেগম জিয়া বলেন, অন্যরা জামায়াতকে সাথে নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে । অথচ বিএনপি জামায়াতের সাথে সম্পর্ক রাখলেই দোষ । এ কথার মাধ্যমে জামায়াতের প্রতি তাঁর দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে । অর্থাৎ তিনি জামায়াত ইসলামীর সাথে সম্পর্ক রাখতে চাচ্ছেন । কিন্তু বাংলার জনগণ বিএনপিকে প্রত্যাখ্যান করবে- এ আশংকায় তা পারছেন না ।

তাই আপাত কৌশল হিসেবে শুধু ঢাকার গণসমাবেশে জামায়াতকে বাদ রেখেছেন । অথচ একইদিন সারাদেশের অন্যান্য সমাবেশে বিএনপির সাথে জামায়াত-শিবিরের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রত্যক্ষ করেছে জনগণ । তাই তিনি যতই জামায়াতকে দূরে ঠেলে দেয়ার অভিনয় করেন না কেন, বিএনপি যে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করতে চায় না বা চাইলেও যে পারবে না তা জনগণের কাছে এখন অনেকটাই পরিস্কার ।


৫। খালেদা জিয়া সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ইনকিলাব পত্রিকা বন্ধ করলেন কেন? এ প্রেক্ষিতে বলতে হয়, ইনকিলাব এমন একটি পত্রিকা যেটি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ বিভিন্ন খবর প্রকাশসহ সাম্প্রতিক সময়ে সংখ্যালঘুদের উপর জামায়াত-বিএনপির হামলা-নির্যাতনকে উসকে দিয়েছে ।

এরই প্রেক্ষিতে দেশ ও জনগণের স্বার্থে সরকার সাময়িকভাবে তা বন্ধ করেছে । অথচ সেই ইনকিলাব কেন বন্ধ করা হলো তা নিয়ে তিনি সরকারের কাছে উত্তর চেয়েছেন । তিনি নাকি জনগণের নেত্রী,আপোষহীন নেত্রী !!! আর জনগণের স্বার্থেই যে সরকার ইনকিলাব বন্ধ করেছে তা তিনি বুঝেন না !!! বরং ইনকিলাব পত্রিকার প্রচার দাবী করে তিনি পরোক্ষভাবে জামায়াত ও তাদের সহিংসতাকেই সমর্থন করছেন । কেননা জামায়াতের কালো কৌশল ও নির্দেশনায় ইনকিলাব পত্রিকা প্রকাশিত হয় । তাহলে কিভাবে বলা যায়, বিএনপি জামায়াতকে ত্যাগ করতে যাচ্ছেন?

৬।

বেগম জিয়া ইনকিলাব পত্রিকা হাতে নিয়ে ভোটকেন্দ্রের একটি ছবি দেখিয়ে বলেছেন- দেখুন, এ সরকারকে কুকুররা ভোট দিয়েছে । তিনি এ কুকুর বলতে জনগণকে বুঝিয়েছেন । তিনি নাকি জনগণের স্বার্থে কাজ করেন? তাহলে তিনি কেন জনগণকে কুকুরের সাথে তুলনা করেছেন ? যিনি ক্ষমতার মূল উৎস জনগণকে কুকুরের সাথে তুলনা করতে পারেন, তিনি আবার কিভাবে দেশনেত্রী হন তা ভাবতেই অবাক লাগে । তাহলে কি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য তাঁর ভাষায় কুকুর নামধারী জনগণকে তাঁর প্রয়োজন নেই? তিনি কি তাহলে অন্য গ্রহের উঁচু জাত ও প্রকৃতির জীব হিসেবে নিজেকে দাবী করেন? তাঁর ক্ষমতা ক্ষুধা না মেটায় বাংলার জনগণ তাঁর কাছে আজ কুকুর বনে গেল ? তিনি কি তাহলে অন্যপথে ক্ষমতায় যেতে চান?

না, বাংলার জনগণ তা কখনও হতে দিবে না ।

বেগম খালেদা জিয়াকে মনে রাখতে হবে, শুধু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপে বাহ্যত জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করার অভিনয় করলে চলবে না, বরং মন থেকে আন্তরিকভাবে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে জনগণকে জানাতে হবে ।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারেও জনস্বার্থে তাঁকে আন্তরিকভাবে সোচ্চার হতে হবে । তবেই বিএনপি যে দেশ ও জাতির মঙ্গলের স্বার্থে রাজনীতি করে তা স্পষ্ট হবে, আপনিও দেশনেত্রী হিসেবে সার্থক হবেন এবং তখনই সরকারের সাথে পরবর্তী নির্বাচনের বিষয়ে সংলাপ ও সমঝোতার প্রশ্ন আসতে পারে । অন্যথায় জনগণের সাথে ছলচাতুরি করে আর জনগণকে কুকুর আখ্যা দিয়ে দেশনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখা দুঃস্বপ্নেই পরিণত হবে বৈ কি!


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.