দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১০ জন শিক্ষক নিরুদ্দেশ রয়েছেন। এসব শিক্ষক কোথায় আছেন তার খবর নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে। শুধু তাই নয়, এসব শিক্ষকের কাছে কোটি কোটি টাকা পাওনা রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এসব শিক্ষক ছুটি নিয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য দেশের বাইরে গিয়েছিলেন। ছুটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও তারা দেশে ফিরে আসেননি।
তাদের ঠিকানায় বারবার চিঠি এবং ই-মেইল করা হলেও তাদের জবাব পাওয়া যায়নি। নতুন করে ছুটির আবেদনও করেননি। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঋণ করে নেয়া টাকাও ফেরত দেননি। বিশ্ববিদ্যালয়কে তারা যেসব মোবাইল নম্বর ও ঠিকানা দিয়েছিলেন সেটাও পরিবর্তন করেছেন। এসব শিক্ষকের হদিস না পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তালিকায় তাদেরকে অননুমোদিত বা বিনাবেতনে ছুটি দেখানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বারবার চিঠি এবং ই-মেইল পাঠিয়ে জবাব না পেয়ে বেশ ক’জন শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। কিন্তু সংখ্যাটা বেশি হওয়ায় সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব নয়। এছাড়া যারা দেশের বাইরে পড়ালেখা করতে গেছেন তারা তুলনামূলকভাবে মেধাবী। কিন্তু উচ্চ শিক্ষার নামে তারা বিদেশে গিয়ে অন্য চিন্তা করছেন। যোগাযোগ রাখছেন না নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে।
কেউ কেউ বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়ে স্থায়ী নাগরিকত্ব পর্যন্ত নিয়েছেন। অনেকে দেশে ফিরলেও বেশি টাকার লোভে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে ৩৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষক সংখ্যা ১০ হাজার ৭৪৪ জন। এরমধ্যে কর্তব্যরত আছেন ৮ হাজার ৫৪৫ জন।
শিক্ষা ছুটিতে রয়েছেন ১ হাজার ৫১২ জন। প্রেষণে আছেন ১৭৭ জন। নিরুদ্দেশ বা অননুমোদিত/বিনাবেতনে/অন্যান্য ছুটিতে আছেন ৫১০ জন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানায়, যারা অননুমোদিত ছুটিতে রয়েছেন তাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন যোগাযোগ নেই। তাদের একাধিকবার চিঠি দেয়া হলেও কোন জবাব আসেনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডীন অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এসব শিক্ষক দেশের গরিব মানুষের টাকায় পড়ালেখা করেছেন। বিদেশে পড়ালেখা করতে গেছেন গরিব মানুষের টাকা নিয়েই। এখন তারা দেশে ফিরছেন না। যে দেশ তাকে এতোকিছু দিলো তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন না। এখন নিজেকে অনেক মেধাবী মনে করছেন।
বিদেশে বসে অনেকে নানা উপদেশ দিচ্ছেন। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নেয়া টাকাটা পর্যন্ত ফেরত দিচ্ছেন না- এটা দুঃখজনক। অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন বলেন, তাদের প্রতি ধিক্কার দেয়া ছাড়া আর কিছু করার নেই। তারা আগের কর্মক্ষেত্রে যোগ না দিলেও টাকাটা পর্যন্ত ফেরত দিচ্ছেন না। এসব শিক্ষকদের লজ্জা থাকা উচিত।
তারা এক প্রকার অপরাধ করেছেন। ক্রিমিনাল অ্যাক্ট অনুযায়ী তাদের বিচার হওয়া উচিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, বেশকিছু শিক্ষকের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ নেই এটা সত্য। তারা অনেক আগে শিক্ষা ছুটি নিয়ে বিদেশ গিয়েছেন। ছুটির মেয়াদ শেষ হলেও তারা কর্মক্ষেত্রে যোগ দেননি।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঋণ নেয়া টাকাও ফেরত দেননি। আমরা বারবার চিঠি ও ই-মেইল করেছি। তাদের পক্ষ থেকে কোন জবাব পাইনি। তবে কেউ কেউ কাজে যোগ না দিলেও টাকা ফেরত দিচ্ছেন। এ সপ্তাহে একজন পাওনা টাকা ফেরত দিয়েছেন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ বলেন, এসব শিক্ষক অসততার আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের দেশে ফেরার ইচ্ছা না থাকলে তা জানানো উচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা ফেরত দেয়া উচিত। আরও ছুটি দরকার হলে তার জন্য আবেদন করা উচিত। কিন্তু তারা এসব না করে বিদেশে বেশি টাকার লোভে চাকরি করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষকদের কাছে জাতি এ ধরনের কর্মকাণ্ড আশা করে না। অধ্যাপক রশিদ আরও বলেন, শিক্ষা ছুটি নেয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়েরও বেশকিছু দায়িত্ব রয়েছে। সার্বক্ষণিক তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা জরুরি। ছুটি শেষ হলে কাজে যোগদানের জন্য তাগাদা দেয়া জরুরি। কাজে যোগ না দিলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।
সেইসঙ্গে যে দেশে অবস্থান করছেন সে দেশের সরকারের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখাটা জরুরি
সূত্র:http://mzamin.com/details.php?mzamin=ODI1Mw==&s=Mg==
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।