গত এক বছরে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে শতাধিক বিদেশিকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সবশেষ মঙ্গলবার উত্তরা থেকে ডলার জাল করার সরঞ্জামসহ তিন জনকে আটক হয়। এর দুই দিন আগে রাজধানীর সেগুনবাগিচা থেকে বোমা তৈরির নির্দেশিকাসহ আটক হয় তিন পাকিস্তানি নাগরিক।
ফাইল ছবি
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রধানত, অবৈধ মাদক ব্যবসা, প্রতারণা ও জঙ্গি তৎপরতায় যুক্ত থাকার অভিযোগে বিদেশি নাগরিকদের আটক করা হচ্ছে।
“গত এক বছরে প্রায় শতাধিক বিদেশি প্রধানত তিন ধরনের অপরাধে যুক্ত থাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন।
”
এসব বিদেশিদের নানা অপতৎপরতা সম্পর্কে মনিরুল ইসলাম বলেন, পর্যটন ভিসায় বাংলাদেশে এসে কখনো নিজের পাসপোর্ট ছিড়ে ফেলে আবার কখনো ভিসার মেয়াদ থাকা অবস্থায়েই এসব বিদেশি বাংলাদেশে ‘অপতৎপরতা’ চালায়।
“পাসপোর্ট না থাকার ফলে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে আটকের পর তাদের বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে তৈরি হয় জটিলতা। এ সুযোগে বার বার তারা অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। ”
নিরাপদ অভিজাত এলাকা
বিদেশি নাগরিক গ্রেপ্তারের গতিপ্রকৃতি বলছে, মূলত গুলশান, বনানী, উত্তরার মতো রাজধানীর অভিজাত এলাকাগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে বেছে নিচ্ছে তারা।
উত্তরা, গুলশানসহ বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে মাদক ব্যবসা চালান, এমন অনেক বিদেশি অপরাধীকে পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা আটক করেছে।
মূলত মালিক দেশে থাকেন না এমন বাড়িগুলো বেছে নেয় তারা। এক্ষেত্রে অভিজাত এলাকার কোনো বাড়ি থেকে বিদেশি নাগরিক গ্রেপ্তার হলে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয় বাড়ি মালিককেও।
সর্বশেষ মঙ্গলবার মধ্যরাতে রাজধানীর উত্তরা ৫ নম্বর সেক্টরের একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে ডলার জাল করার সরঞ্জামসহ তিন বিদেশিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এদের দুজন আফ্রিকান এবং অন্যজন দক্ষিণ আমেরিকান।
এরা হলেন- পেরেজ ওয়াই পেরেজ ইফরেইন (৩৭), সেন কেরিন ন্যাটি (৩৬) ও মিকো স্যান্ডিও নাটালি লোরেল (২১)।
ইফরেইন ও ন্যাটি ক্যামেরুনের নাগরিক, লোরেলের দেশ গুয়েতেমালা।
এক বছরের মধ্যে একসঙ্গে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বেদিশি নাগরিক আটকের ঘটনা ঘটে গত বছরের ২২ ডিসেম্বর রাতে।
ওই রাতে উত্তরার একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে অবৈধ ভিওআইপি সরঞ্জামসহ ৩৭ বিদেশিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টরে ২৮ নম্বরে ছয় তলা ওই বাড়ি দুই বাংলাদেশিকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
আটকদের মধ্যে পাঁচজন চীনা, বাকি সবাই তাইওয়ানের।
এদের মধ্যে সাতজন নারীও রয়েছেন।
পুলিশ বলছে, স্থানীয়দের সহায়তায়ই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড তারা চালিয়ে যাচ্ছেন।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, “অনেকে সময় বিদেশ থেকে বিনিয়োগকারী পরিচয়ে অভিজাত হোটেলে উঠে বিদেশে লোক পাঠানো, বাংলাদেশে নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার আশ্বাস ও চাকরির প্রলোভন দেখিয়েও প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে। ”
আইনি ফাঁক
নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে গ্রেপ্তার করা হলেও এসব বিদেশি নাগরিকরা আইনের ফাঁক গলে পার পেয়ে যাচ্ছেন। ফলে অনেকটাই অসহায় পুলিশ, র্যাবসহ আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো।
গত ১২ জানুয়ারি রাতে তিন পাকিস্তানি নাগরিককে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকায় শিল্পকলা একাডেমির সামনে থেকে গ্রেপ্তার মেহমুদ (২৬), ওসমান (২৩) ও ফখরুলের (৫০) কাছে একটি ল্যাপটপ ও বোমা তৈরির নির্দেশিকা পাওয়া যায়।
এরে মধ্যে মেহমুদ এবং ওসমান এর আগেও পুলিশের বিশেষ সংস্থার হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিল। সে সময় তারা জামিন নিয়ে পাকিস্তান ফিরে যাওয়ার কথা বললে আইনি দুর্বলতার সুযোগে বাংলাদেশে তারা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।