বাংলাদেশ ক্রিকেটের জনপ্রিয় ও পরিচিত এক মুখ সাবের হোসেন চৌধুরী। ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি। এখন পুরোদস্তুর রাজনীতিবিদ। তারপরও ক্রিকেটের প্রতি তার ভালোবাসা অফুরান। তার আমলেই ক্রিকেটের কুলীন শ্রেণীর (টেস্ট স্ট্যাটাস) সদস্য হয়েছে বাংলাদেশ।
কুলীন শ্রেণীর সদস্য হতে তার ক্রিকেট কূটনীতির অবদানও ছিল বিশাল। কিছুদিন আগে আইসিসি দ্বি-স্তরবিশিষ্ট ক্রিকেটের একটি প্রস্তাব দিয়েছে টেস্ট-খেলুড়ে দেশগুলোকে। আইসিসির এমন প্রস্তাবে এখন কঠিন গ্যাঁড়াকলে বাংলাদেশের ক্রিকেট। প্রস্তাব মেনে নিলে টেস্ট-খেলুড়ে দেশের মর্যাদা থাকবে ঠিকই, কিন্তু আগামী আট বছরে সম্ভাবনা থাকবে না কোনো টেস্ট খেলার। আইসিসির এই প্রস্তাব কোনোভাবেই মানতে পারছেন না বিসিবির সাবেক সভাপতি।
এমন কঠিন অবস্থান থেকে দেশের ক্রিকেটের পরিত্রাণ পেতে দুই হাত উজাড় করে সহায়তা করতে চান তিনি। সহায়তার হাত বাড়াতে শুধু অপেক্ষায় রয়েছেন বিসিবির আহ্বানের। সহায়তা করতে চাইলেও প্রস্তাব সম্পর্কিত বিসিবির বর্তমান অবস্থানে হতাশ তিনি। হতাশ বলেই বিসিবির বর্তমান সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনকে একটি ই-মেইল করেছেন গতকাল।
আগামী ২৮-২৯ জানুয়ারি মরুশহর দুবাইয়ে বসছে আইসিসির বহুল আলোচিত সভা।
সেখানেই সিদ্ধান্ত হবে ক্রিকেট বিশ্বের নতুন নিয়ন্ত্রক 'থ্রি বিগ' ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড হবে, না আগের অবস্থানেই থাকবে। এ ছাড়া টেস্ট ক্রিকেট কি দ্বি-স্তর বিভাজিত হবে? আইসিসির সভার আগে জনপ্রিয় ক্রিকেট ওয়েবসাইট ইএসপিএন-ক্রিকইনফোতে এ প্রস্তাব নিয়ে চলছে ভোটাভুটি। অধিকাংশ ক্রিকেটপ্রেমীই প্রস্তাবের বিপক্ষে মতপ্রকাশ করছেন। অথচ গত পরশু জরুরি সভা করে পরোক্ষভাবে প্রস্তাবকে সমর্থন জুগিয়েছে বিসিবির পরিচালনা পর্ষদ। যদিও বিসিবি সভাপতি বিষয়টি সম্পর্কে সরাসরি কোনো উত্তর দেননি।
জানিয়েছেন, দুবাইয়ে অন্য দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই পরিষ্কার করবেন বাংলাদেশের অবস্থান। গত পরশু সভা শেষে মিডিয়ার মুখোমুখিতে বিসিবি সভাপতি বলেন, 'বিষয়টি সম্পর্কে আমাদের আরও অনেক কিছু জানতে হবে। তারপর আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করব। '
বিসিবির বর্তমান সভাপতি যাই বলুন না কেন, দেশবাসীর মতো ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিসিবির সাবেক সভাপতি সাবের। সাবেক সভাপতি মনে করেন, এমন ক্রান্তিকালে একা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না বিসিবি, 'এটা দেশের মানসম্মানের বিষয়।
এ প্রস্তাব পাস হলে আগামী আট বছরে কোনো টেস্ট খেলতে পারবে না বাংলাদেশ। এমনটা হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশের ক্রিকেট। প্রস্তাবটির বিষয়ে একক সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত হয়নি বিসিবির। এটা বিসিবির একক কোনো বিষয় নয়। এটা পুরো দেশের বিষয়।
প্রস্তাবটি নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল বিসিবির। উচিত ছিল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সঙ্গে আলোচনা করা। এ ছাড়া বিসিবির সাবেক সভাপতিদের সঙ্গেও এ বিষয়ে আলোচনা করতে পারত। তাহলে একটি সমাধান বের হয়ে আসত। '
আইসিসি যে পজিশন পেপার পাঠিয়েছে দেশগুলোকে, সেখানে পরিষ্কারভাবে ২১ পাতার প্রস্তাবের চতুর্থ অনুচ্ছেদের তৃতীয় ধারায় উল্লেখ আছে দ্বি-স্তরবিশিষ্ট ক্রিকেটের।
এতে টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের ৯ ও ১০ নম্বর দলকে খেলতে হবে আইসিসি সহযোগী দেশগুলোর সঙ্গে কন্টিনেন্টাল কাপে। কন্টিনেন্টাল কাপে চ্যাম্পিয়ন দল খেলবে র্যাঙ্কিংয়ের ৮ নম্বর টেস্ট-খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে। হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে সিরিজের চ্যালেঞ্জ সিরিজ হবে চার টেস্টের। কন্টিনেন্টাল কাপ ২০১৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত হবে দুবার। দ্বি-স্তরবিশিষ্ট ক্রিকেটের প্রস্তাবে ভারত, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার কোনো অবনমন হবে না।
বাকি সাত দেশের অবনমন হবে দ্বিতীয় স্তরে। এটা মানতে পারেনি পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও শ্রীলঙ্কা। শুধু সমর্থন জানিয়েছে নিউজিল্যান্ড।
আইসিসির সভায় প্রস্তাব যদি পাস না হয়, তাহলে আইসিসি থেকে বের হয়ে যাওয়ারও চিন্তাভাবনা করছে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। ভারতের অবস্থান থেকে সরে দাঁড়ানোর মতো সাহসী ভূমিকা নিতে না পারায় বিসিবি সভাপতি নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেননি।
যদিও ভারতের প্রস্তাবেই সমর্থন জোগাবেন বলে গুঞ্জন। আর এটাই মেনে নিতে পারেননি বিসিবির সাবেক সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।