বাংলাদেশের ক্রিকেটের ফিক্সিংয়ের ঘটনার যথাযথ তদন্ত হবে বলে মনে করেন কি?
হ্যাঁ—৩৩.০২%, না—৬৪.৫৬%। আর মন্তব্য নেই ২.৪২%।
প্রথম আলোর অনলাইন জরিপের ফলাফল। বিস্ময়ের কিছু অবশ্য নেই এই ফলাফলে। গোটা দেশের যা চিত্র, ক্রিকেটে তো সেটার প্রতিফলনই পড়বে।
বাংলাদেশের বাস্তবতায় কোনো ঘটনার তদন্ত মানে যেন তা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা, আর জড়িত যত বড় বড় নাম, ততই তা আড়াল করার চেষ্টা। আকসুর প্রতিবেদন আদৌ আলোর মুখ দেখবে কিনা বা আকসুর সুপারিশ বিসিবি কতটা মানবে, সেই সংশয় আছে যথেষ্টই। তবে সাবেক ক্রিকেটারদের অনেকেরই ধারণা, ফিক্সিংয়ের এই তদন্ত যথাযথই হবে এবং তা আলোর মুখও দেখবে। বিসিবি কর্তারাও বারবার নিশ্চিত করছেন এটা।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ‘তদন্ত’ শব্দটির ওপর খুব একটা আস্থা নেই রকিবুল হাসানের।
তবে সাবেক অধিনায়ক ও প্রধান নির্বাচকের ধারণা, দেশের ক্রিকেটের স্বার্থেই বিসিবি ব্যাপারটাকে গুরুত্ব দেবে, ‘বাংলাদেশে তো তদন্ত মানেই কোনো কিছুকে ধামাচাপা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু। তবে এটা দেশের ক্রিকেটের অস্তিত্বের ব্যাপার, ভাবমূর্তির ব্যাপার। আমার ধারণা, বিসিবি এখানে কোনো আপস করবে না। তদন্ত সুষ্ঠু হবে, যথাযথ ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। ’
রকিবুলের ভাবনা, তদন্তে যা-ই আসুক, অভিযুক্তরা দোষী প্রমাণিত হোক বা না হোক, দেশের ক্রিকেটের জন্য এ ঘটনা বড় একটা শিক্ষা।
বিসিবির জন্য তাই সাবেক অধিনায়কের পরামর্শ, ‘স্থায়ী একটা সেল গঠন করা হোক, যেখানে থাকবেন একজন বিচারপতি, ক্রিকেটের আইন ভালো বোঝেন ও দারুণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এমন সাবেক ক্রিকেটার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা। এই সেলের কাজ হবে সব খেলা মনিটর করা, বয়সভিত্তিক দলগুলোকে নিয়মিত নৈতিক শিক্ষার ক্লাস নেওয়া, প্রশিক্ষণ দেওয়া। আর ফিক্সিং প্রতিরোধে ফৌজদারি আইন করা দরকার, জেল-জরিমানার ব্যবস্থা রাখা দরকার। তাহলে সবাই আরও সতর্ক হবে। ’
‘তদন্ত সুষ্ঠু হবে’, বলছেন আরেক সাবেক অধিনায়ক শফিকুল হকও (হীরা)।
তবে প্রতিবেদন ধামাচাপা দেওয়া নিয়েও খানিকটা সংশয়ও আছে তাঁর মনে, ‘আমি প্রথমবার ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসের ম্যানেজার ছিলাম, অনেক কিছুই ভালো লাগেনি। এজেন্টদের সঙ্গে ক্রিকেটারদের নিয়মিত যোগাযোগ হয়। কাইরন পোলার্ডের এজেন্ট যেমন খুব ডিস্টার্ব করেছে আমাদের। ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক খেলোয়াড়দের টাকা দেয় না, আমাকেও দেয়নি। তাঁর আবার অনেক বড় ব্যক্তিদের সঙ্গে পরিচয়-সম্পর্ক আছে।
কেউ তাঁর কিছু করতেও পারে না। এখন আশরাফুল স্বীকার করেছে, রফিক স্বীকার করেছে ঢাকা ম্যাচ পাতিয়েছে। তার পরও জানি না আদৌ কতটা ব্যবস্থা নেওয়া যাবে মালিকের বিপক্ষে। ’
আশরাফুলের পাশাপাশি সাবেক তিন ক্রিকেটারের নাম এসেছে প্রথম আলোর প্রতিবেদনে। সেই প্রতিবেদন পড়ে জাতীয় দলের ম্যানেজার থাকাকালে একটা ঘটনা মনে পড়ে গেছে শফিকুলের, ‘ওদের তিনজনকে এখনই দোষী বলতে চাই না।
কিন্তু আশরাফুলের কথা যখন এসেছে, কমবেশি কিছু না-কিছু সম্পৃক্ততা তো থাকারই কথা। ২০০৯ সালের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের একটা ঘটনা বলি। সুজন (খালেদ মাহমুদ) তখন দলের সহকারী কোচ। একদিন ওর কাছে একটা ফোন আসল, তামিমকে চায়। ও শুনি তামিমকে বলছে, “তামিম একজন তোর নম্বর চায়, নম্বরটা দিলাম।
” আমি জানি না নাম্বার কে চেয়েছে, তার পরিচয় কী। কিন্তু সুজনের উচিত ছিল ম্যানেজার হিসেবে আমাকে জানানো। আমি হয়তো আকসুকে জানাতাম। ’
সাবেক ক্রিকেটার শাকিল কাসেমের ধারণা, বিসিবি চাইলেও এখন এটা আর ধামাচাপা দিতে পারবে না, ‘আমি জানি না, বিসিবি ও আকসুর চুক্তির শর্ত কী। তবে ব্যাপারটা যেভাবে প্রকাশিত হয়েছে, আলোচনা হচ্ছে, তাতে বিসিবির অন্যকিছু ভাবার অবকাশ নেই।
আকসু নিশ্চয়ই বিসিবিকে সময় বেঁধে দেবে প্রকাশ করতে, তা ছাড়া আইসিসিকেও নিশ্চয়ই জানাবে নিজেদের তদন্তের কথা। তবে আমার ধারণা, বিসিবি এখানে কোনো আপস করবে না। আর আমার পরামর্শ, আকসুর প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিসিবি নিজেরাও যেন ব্যাপারটা খতিয়ে দেখে। ’ সাবেক ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার আতহার আলী খান বললেন দায়িত্ববোধের কথা, ‘আকসু-বিসিবি, সবারই নিজস্ব দায়িত্ব আছে। আমি চাইব সেই দায়িত্ব সবাই যেন ঠিকভাবে পালন করে।
’
তবে বিসিবির নানা সূত্র থেকে যা জানা যাচ্ছে, তাতে বিসিবি কঠোর অবস্থানেই আছে। সম্প্রতি আইপিএলের ফিক্সিং-কাণ্ডে বিসিসিআইয়ের বিব্রতকর অবস্থা থেকে শিক্ষা নিয়েছে বিসিবি। তা ছাড়া নাদির শাহ ও শরিফুল হককে কঠোর শাস্তি দেওয়ায় বিশ্ব ক্রিকেটে উজ্জ্বল হওয়া ভাবমূর্তিটা ধরে রাখতে চায় বিসিবি। বিসিবির ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী পুনর্ব্যক্ত করলেন শক্ত অবস্থান, ‘বোর্ড সভাপতি বারবার বলছেন এসব ক্ষেত্রে নীতি জিরো টলারেন্স। আমরা সেই অবস্থানেই অটল আছি।
’।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।