আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নারী মর্যাদা এখন ভূলুণ্ঠিত!

চিন্তা-চেতনা নারী মর্যাদা এখন ভূলুণ্ঠিত! দিল্লিতে ১৬ ডিসেম্বর ওই তরুণী একটি চলন্ত বাসে ধর্ষিত হওয়ার ঘটনায় বিক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে সারা ভারত। এ বিভ চলার সময় আরও দুজন নারী গণধর্ষণের শিকার হয়ে মারা গেছেন দেশটির মণিপুর ও উত্তরখণ্ড রাজ্যে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে নারীরা এখানে কেবল ধর্ষণ বা সহিংসতার শিকার হচ্ছে এমন নয়, বরং নারীরা এখানে বঞ্চিত, হেয়, কোণঠাসা, অবহেলিত ও অচ্ছুত হিসেবে বিবেচিত। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, দেশটির প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ‘ব্যাপক সামাজিক পরিবর্তনের’ ডাক দিয়েছেন। কিন্তু নারীর ওপর এসব সহিংসতার পেছনে কোন বিষয়গুলো মূল ভূমিকা পালন করছে, খতিয়ে দেখা দরকার।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতে জন্মের আগেই ভ্রূণাবস্থায় অনেক নারীকে হত্যা করা হয়। জন্মের পর নারী-পুরুষের অনুপাত ঠিক রাখার অজুহাতে নারীশিশুদের হত্যা করার ঘটনা ঘটছে। এসব এড়িয়ে যেসব নারী বেঁচে থাকেন, তাঁদের অনেকে সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনে বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে বৈষম্য, কুসংস্কার, সহিংসতা ও অবহেলার মধ্যে জীবন কাটাতে বাধ্য হন। থমসন রয়টার্সের ট্রাস্ট ল সংবাদ সেবার পরিচালিত এক জরিপের ফলাফল বলছে, বিশ্বের নারীদের জন্য নিকৃষ্টতম স্থান হলো ভারত। এ দেশটিতে মতাসীন দলের প্রধান, পার্লামেন্টের স্পিকার, তিনজন মুখ্যমন্ত্রী এবং অনেক বিখ্যাত খেলোয়াড় ও সফল ব্যবসায়ীদের একাংশ নারী।

এটি এমন একটি দেশ, যেখানে তরুণ প্রজন্মের নারীদের এক বিরাট অংশ আগের চেয়ে অনেক বেশি মাত্রায় বাড়ির বাইরে কাজে যোগ দিচ্ছেন। কিন্তু নারীদের ওপরে নির্যাতন-নিপীড়নও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। বিবিসি বলছে, ২০১১ সালে দেশটিতে ধর্ষণের পরিমাণ আগের বছরের চেয়ে ৯ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। ওই বছর প্রায় ২৪ হাজার ধর্ষিত নারীর ৫৪ দশমিক ৭ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। পুলিশের রেকর্ড বলছে, ৯৪ শতাংশ নারীর কাছে ধর্ষকেরা ছিল পূর্বপরিচিত।

এদের এক-তৃতীয়াংশ প্রতিবেশী এবং অন্যদের মধ্যে আছে অভিভাবক ও আত্মীয়রা। দেশটিতে যে পরিমাণ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, তার ১৭ শতাংশ ঘটে কেবল দিল্লিতে। এ জন্য দিল্লির এখন ‘ধর্ষণের নগর’ বলে কুখ্যাতি জুটেছে। শুধু ধর্ষণ নয়, আরও বিভিন্ন উপায়ে নারীদের ওপরে চালানো হয় অত্যাচার-অবিচার। ২০১১ সালের পুলিশ রিপোর্ট বলছে, দেশটিতে আগের বছরের তুলনায় নারী অপহরণ বেড়েছে ১৯ দশমিক ৪ শতাংশ, যৌতুকের জন্য মৃত্যুর পরিমাণ বেড়েছে ২ দশমিক ৭ শতাংশ, পিটানো বেড়েছে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ, অন্যান্য যৌন নিপীড়ন বেড়েছে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ এবং নারী পাচার বেড়েছে ১২২ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদ শিবন অ্যান্ডারসন এবং দেবরাজ রায়ের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, ভারতে প্রতিবছর গড়ে ২০ লাখ নারী নিখোঁজ হন। এঁদের ১২ শতাংশ জর সময়, ২৫ শতাংশ শৈশবে, ১৮ শতাংশ সন্তান প্রসবকালে এবং ৪৫ শতাংশ বৃদ্ধ বয়সে। সবচেয়ে বেশিসংখ্যক নারীর মৃত্যু হয় সন্তান জšে§র সময় বিভিন্ন জখমের ফলে। নারীদের প্রতি অবহেলার বিষয়টি এর মধ্য দিয়ে খানিকটা বোঝা যায়। দেশটিতে প্রতিবছর কমপে এক লাখ নারী আগুনে পুড়ে মারা যান।

এঁদের একটি বড় অংশকেই যৌতুকের কারণে পুড়িয়ে মারে তাঁদের স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। তবে মৃত্যুর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কারণ হলো হূদরোগ। কার্যত ভারতের নারীদের সারা জীবনই বিভিন্ন বঞ্চনার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। জীবনের প্রতিটি ধাপে বিভিন্ন প্রতিকূলতা তাঁদের পথরোধ করে দাঁড়ায়। সহিংসতা, দুর্বল স্বাস্থ্য, অসম সুবিধা, অবহেলা, খারাপ মানের খাবার এবং সামাজিক কুসংস্কার নারীদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভারতের নারীদের সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সবার আগে দরকার সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। দেশটির বিভিন্ন এলাকায়, বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে, পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ও ব্যাপক মাত্রার নারীবিদ্বেষের মূল অনেক গভীরে প্রোথিত। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংসহ দেশটির অনেক নাগরিক মনে করেন, নারীর ওপর এত বেশি সহিংসতার জন্য রাজনীতিবিদদের কপটতাই দায়ী। তাঁদের সদিচ্ছার অভাবে নারীর ওপর সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য ও নিপীড়ন বন্ধ করা যাচ্ছে না। গত পাঁচ বছরে দেশটির বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো কমপে ২৭ জন প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন, যাঁরা ধর্ষণের কারণে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন।

দেশটির পার্লামেন্টের কমপে ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আছে। নারীদের নিয়ে ভারতের অশিতি জনগণের মধ্যে অনেক ধরনের কুসংস্কার হয়তো শত শত বছর ধরে কাজ করছে। কিন্তু শহুরে শিতি মানুষদের একাংশ যে নারীদের সম্পর্কে কী ধরনের মনোভাব পোষণ করেন, তা বোঝা যায় দুজন রাজনীতিবিদের বক্তব্য থেকে। গত সপ্তাহে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ছেলে ও পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় কংগ্রেসের বিধায়ক অভিজিত্ মুখোপাধ্যায় দিল্লির আন্দোলনরত নারীদের সম্পর্কে যা বলেছেন, তা থেকে ভারতের সামাজিক অবস্থা বেশ ভালো বোঝা যায়। এক টেলিভিশনকে সাাত্কার দেওয়ার সময় তিনি বলেন, ‘যেসব সুন্দরী, সুন্দরী মহিলা, চড়া সাজে সেজে টিভিতে সাাত্কার দিচ্ছেন আর তাঁদের সন্তানদের দেখাচ্ছেন, তাঁরা আসলে সবাই শিার্থী কি না, তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে।

’ আসল ঘটনার সঙ্গে জনগণের বিােভের সম্পর্কের বিষয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি। তবে মন্তব্যের এক দিন পর, ব্যাপক সমালোচনার মুখে তিনি বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেন এবং মা চান। পার্লামেন্টে প্রধান বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টির রাজস্থান থেকে নির্বাচিত আইনপ্রণেতা বানোয়ারি লাল সিংগামের ধারণা, স্কুলের শিার্থীরা স্কার্ট পরার জন্যই নিপীড়নের শিকার হন। স্কুলগুলোতে পোশাকবিধি বদলানোর জন্য তিনি কয়েকদিন আগে রাজ্যের প্রধান সচিবকে চিঠি পর্যন্ত দিয়েছেন। ওই চিঠিতে তিনি বলেন, মেয়েরা যখন স্কুলে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠার জন্য অপো করে, তখন সে দৃশ্য অনেকের যৌনতার উদ্রেক ঘটায়।

তাই মেয়েদের হয় সালোয়ার-কামিজ বা পুরো-হাতা শার্ট-প্যান্ট পরানো উচিত। তথ্যসূত্র: প্রথম আলো থেকে নেয়া ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.