আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মহাসাগরে কচ্ছপের রক্ত খেয়ে দেড় বছর!!

যখন পেয়েছি পথের দেখা তখন আবার দিকভ্রান্ত হয়ে হারিয়েছি পথ.........


যতদূর চোখ যায় নীল জলরাশি। দিনে সূর্যের উত্তাপ। রাতে ঠাণ্ডা জলের জ্বালাময়ী শীত। চারপাশ সুনসান, কোথাও কেউ নেই। অসহায় চোখে দিগন্তের দিকে চেয়ে থাকা।

নিশ্চিত মৃত্যুর জন্য প্রহর গোনা! এভাবেই প্রশান্ত মহাসাগরের ‘অশান্ত পরিবেশে’ দেড় বছর মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়েছেন আমেরিকার মৎস্যজীবী জোসে স্যালাভাদর অ্যালভারেনগা।
মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ থেকে রবিবার জীবিত ফেরার পর এই মৎস্যজীবীর চোখে মুখে ছিল জীবন ফিরে পাওয়ার এক অকৃত্রিম অভিব্যক্তি, ‘আমি বেঁচে আছি, হ্যাঁ আমি বেঁচে আছি! বিশ্বাস হচ্ছে না আমি বেঁচে আছি। ’
হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা অবস্থায় যখন জানতে চাওয়া হল তার ভাগ্যপরীক্ষার দিনগুলোর কথা, তখন জোসের কণ্ঠ কেঁপে ওঠে এক অজানা আশঙ্কা, ‘কিছু মনে করতে পারছি না। সব পড়ে আছে সাগরে, সেই সাগরে…। ’
যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম জানায়, ২০১২ সালের ২১ ডিসেম্বর কয়েকজন সঙ্গীকে নিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরে মাছ ধরতে যান জোসে।

ট্রলারের ইঞ্জিন খারাপ হওয়ার পর ধীরে ধীরে সঙ্গীসহ অথৈ সাগরে ভেসে যেতে থাকেন। সাগরে থাকা অন্য জাহাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেও ব্যর্থ হন তারা। এক পর্যায়ে এমন এক যায়গায় জোসেরা ভেসে আসেন, যেখানে মানুষ কিংবা মাছ ধরার জাহাজের আনাগোনা ছিল শূন্যের কোঠায়।
জোসের সঙ্গে বেশির ভাগ সঙ্গী ছিলেন টিনেজার ( বয়স ১৩ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে)। -তার চোখের সামনেই মৃত্যু হয় ওই সব অসহায় ছেলেদের।


জোসে জানান, খাবার শেষ হওয়ার পর সাগরের কাঁচা মাছ খেয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করেন তিনি। সাগরের পানি মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ত। তাই কখনো কখনো পান করেছেন নিজের মূত্র আর জাহাজে থাকা কচ্ছপের রক্ত।
মহাসাগরে কচ্ছপের রক্ত খেয়ে দেড় বছর!
মার্শাল দীপপুঞ্জের মাজুরো এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জোসেকে শনিবার সন্ধ্যার দিকে মুমূর্ষু অবস্থায় সাগরে ভাসতে থাকা একটি ট্রলার থেকে উদ্ধার করেন।
উদ্ধারকারীদের একজন বলেন, ‘লোকটিকে দেখে পাগল বলে মনে হচ্ছিল।

আমাদের দেখতে পেয়ে হাতনেড়ে শুধু পানি দিতে বলছিল। ’
মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের ‘ইমিগ্রেশন চিফ’ ড্যামিয়েন জ্যাক্লিক বলেন, ‘মার্কিন দূতাবাসের সাহায্য নিয়ে আমরা জোসেকে তার পরিবারের কাছে পাঠানোর চেষ্টা করছি। তবে সমস্যা হল এই মুহূর্তে সে তার বাড়ির লোকজন সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু মনে করতে পারছে না। তার স্ত্রীর ফোন নম্বরটাও সে ভুলে বসে আছে। ’
জোসে তার বয়সটাও সঠিক বলতে পারছেন না।

তিনি বলছেন, ‘আমার বয়স ৩৬ কী ৩৮ হতে পারে। ’
জোসেকে ইতিমধ্যে নৌবাহিনীর একটি জাহাজে করে মারজুর বন্দর এলাকার একটি হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
ডাক্তাররা বলছেন, “তার রক্তচাপ এখন খুব কম। পর্যাপ্ত বিশ্রামে রাখা প্রয়োজন। সবচেয়ে ভালো হয় তাকে তার পরিবারের কাছে পাঠাতে পারলে।


একজন মানুষ সাধারণত খাবার ছাড়া তিন সপ্তাহ বেঁচে থাকতে পারেন। কিন্তু পানি ছাড়া তিন দিনের বেশি বাঁচা অসম্ভব।
জোসে সাগরে বসে জাহাজে থাকা কচ্ছপের রক্ত দিয়ে পিপাসা নিবারণ করেছেন। ডাক্তাররা ধারণা করছেন কচ্ছপের রক্তের উন্নত আয়রন এবং প্রোটিন তাকে পুষ্টি যুগিয়েছে। বেঁচে থাকতে সাহায্য করেছে।


ডাক্তাররা আরো বলছেন, জোসে সম্ভবত কচ্ছপের চোখও খেয়েছেন। কচ্ছপের চোখ তরলে পরিপূর্ণ। সেটাও তাকে বাঁচিয়ে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।


সূত্রঃ তাযাখবর.কম
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.