সহজ আলোয় দেখা...
আমার অফিসের অনেক সহকর্মীর ধারণা আমার আধ্যাত্মিক ধরণের ক্ষমতা আছে।
বিষয়টার সূত্রপাত বছর দেড়েক আগে। আমার এক সহকর্মী আমার মতোই স্ত্রী নিয়ে এখানে এসেছে মাত্র। সহকর্মীটি সারাদিন অফিসে থাকে। তাদের বাচ্চা-কাচ্চা নেই।
সারাদিন বাসায় বসে থেকে থেকে তাঁর স্ত্রী বোর হয়ে যাচ্ছিল, নিজে একটা চাকরি নেবার চেষ্টা চরিত্র করছিল বেশ কিছু দিন ধরে, কিন্তু কেন জানি সুবিধা করে উঠতে পারছিল না। এ জন্যে তার স্ত্রীর প্রচন্ড মন খারাপ। এ নিয়েই একদিন লাঞ্চ আওয়ারে বলছিল, আর অনুরোধ করছিল আমি যেন তার স্ত্রীর জন্যে "পজেটিভ এনার্জি" পাঠাই। আমি স্বভাব সুলভ মুচকি হাসলাম, কিছুই বললাম না।
পরদিন সেই সহকর্মীটি অফিসে এসেই আমাকে পারলে জড়িয়ে ধরে খুশীতে! গতকালই তার স্ত্রীর একটা চাকুরী হয়েছে, এবং শুধু সাধারণ চাকুরী না, কর্পোরেট পর্যায়ের হাই প্রোফাইল জব।
সহকর্মীটির ধারণা এটার পেছনে আমার পজেটিভ এনার্জি কাজ করেছে, এবং মহা আনন্দে সেটা অফিসের সবাইকে বলে বেড়ালো। তার এধরণের কথায় সবার বিস্মিত হবার কারণ ছিল, কারণ যে একথাটি বলছে সে নিজে এর আগে মাইক্রোসফটের মতো বড় প্রতিষ্ঠানে প্রথম সারির ডেভেলপার হিসেবে কাজ করে এসেছে, খটখটে কঠিন যুক্তি নিয়েই যেখানে রাত-দিন পড়ে থাকতে হয়। কিন্তু প্রতিটা কঠিন যুক্তিবাদী মানুষের ভেতরে যে একধরণের অযৌক্তিক মানুষ বাস করে, এই সত্যি সবার জানার কথা না।
এরপর থেকে ছোট-খাটো নানা বিষয়ে অফিসের কেউ কেউ কখনো গোপনে, কখনো প্রকাশ্যে তাদের নানা ব্যক্তিগত বিষয়ে ভবিষ্যৎবাণী করতে অনুরোধ করতো। আমি প্রতিবারই বলেছি আমি নিজেই এধরণের বুজরুকিতে বিশ্বাস করি না।
তবু তারা শুনতে রাজি না, আমাকে কিছু একটা বলতে হবে, কি আর করা, আমি আমার পর্যবেক্ষণের উপর ভিত্তি করে কিছু একটা বলে দেই, যেটার নির্দিষ্ট কোন অর্থ নেই, যে কোন দিক থেকে দেখলেই সত্যি হবে, যেমন, আগামী এক বছরের ভেতর তোমার জীবনে একটা বড় ধরণের সারপ্রাইজ আসবে। জিজ্ঞাসকারী ভুরু কুঁচকে চিন্তিত গলায় বলে, ভালো না খারাপ সারপ্রাইজ। আমি মাথা নেড়ে বলি সেটা বলতে পারছি না, তবে ভালো হবার সম্ভাবনাই বেশি। জিজ্ঞাসকারীর চিন্তিত ভুরু সোজা হয়। সবাই আসলে তাই বিশ্বাস করে যেটা সে শুনতে চায়।
আরেকজন এসে চেপে ধরলো সে কতো দিনের মধ্যে মিলিওনিয়ার হচ্ছে, আমি মাথা চুলকে বললাম, বছর পাঁচেকের মধ্যে সম্ভাবনা আছে। সেও নিশ্চিন্ত হয়ে চলে গেল। কয়েকদিন পরে সবার সাথে এক আড্ডায় আমার এই ভবিষ্যৎবাণীর কথা বললো, "আশরাফ বলেছে আমি কয়েক বছরের মধ্যে মিলিয়ন ইউএস ডলারের মালিক হচ্ছি। " আমি কি মনে করে বললাম, ইউএস ডলারের কথাতো বলিনি। মিলিওনিয়ার হলে তোমার দেশের লোকাল কারেন্সিতে হওয়াই যুক্তিযুক্ত।
এটা শুনে বেচারার মুখ অন্ধকার হয়ে গেল। এটা দেখে আমারো খুব মন খারাপ হয়ে গেল, কেন যে এ কথা বলতে গেলাম। আমি যতোই তাকে বোঝাই, আমি কথাটা তাকে বলেছি সে খুব মেধাবী ও পরিশ্রমী, ইতোমধ্যেই তার কিছু টাকা জমেছে। ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে আরো কিছু দিন খাটলে, এমনিতেই তুমি মিলিওনিয়ার হয়ে যাবে। আর তাছাড়া আমিতো বলনি লোকাল কারেন্সিতে শুধু এক মিলিয়ন হবে, সেটা কয়েক মিলিয়নও হতে পারে।
আমার এ ব্যাখ্যায় সে খুব খুশী হতে পারলো বলে মনে হলো না!
দিন দিন অন্যান্যদের মধ্যে এইসব বুজরুকি বিশ্বাস ছড়িয়ে যাচ্ছে দেখে একজন বিরক্ত হয়ে সবার সামনে বললো, ঠিক আছে ভবিষ্যৎ না, তুমি আমার একটা অতীত বলো দেখি। যথারীতি আমি বললাম, আমার কোন দৈব বল নেই, তবে তুমি চাইলে আমি আমার অবজার্ভেশনের উপর ভিত্তি করে কিছু বলতে পারি। সে মাথা নেড়ে বললো, বলো। সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি মিনিট খানেক চিন্তা করে বললাম, ষোল বছর বয়সে তোমার বড় ধরণের একটা আনকম্ফোর্টেবল এক্সপেরিয়েন্স আছে।
এটা শুনে জিজ্ঞাসকারীর মুখ শুকিয়ে গেল। মুখে বললো, আমার ঠিক মনে পড়ছে না। আর তাতেই কাজ হয়ে গেল, সবাই নিশ্চিত হয়ে গেল, জিজ্ঞাসকারী কিছু একটা চেপে যাচ্ছে।
আমি বড় একটা নিশ্বাস ফেললাম। মানুষ কতো সহজেই অলৌকিকতায় প্রভাবিত হয়।
পৃথিবীর সেরা মানের পড়াশোনাও মানুষকে এ থেকে পুরোপুরি মুক্ত থাকতে পারেনা!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।