আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বন্ডের বিপরীতে নেওয়া হবে উদ্বৃত্ত তারল্য

ব্যয় মেটাতে ব্যাংকের অলস টাকার ওপরই ভরসা করতে যাচ্ছে সরকার। এক্ষেত্রে বরাবরের মতো রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক সোনালী, রূপালী, অগ্রণী ও জনতার ওপরই নজর পড়েছে। এ চার ব্যাংকের যে উদ্বৃত্ত তারল্য (অলস টাকা) রয়েছে বাজেটের ঘাটতি মেটাতে আপাতত সেটিই ব্যবহার করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। বন্ডের মাধ্যমে ওই তারল্য ঋণ হিসেবে নেওয়া হবে।

সরকারের এ পরিকল্পনা নিয়ে আগামীকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে চার ব্যাংকের সঙ্গে একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

উদ্বৃত্ত তারল্য ব্যবহারের সিদ্ধান্তটি সেখানেই চূড়ান্ত হবে।

ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ বেড়ে গেলে বেসরকারি বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা থাকলেও সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে সরকারের এই পরিকল্পনাকে মন্দের-ভালো বলেই বিবেচনা করছে বিশ্বব্যাংক।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, চার ব্যাংকের যে উদ্বৃত্ত তারল্য ব্যাংকে জমা হয়ে আছে টাকার অঙ্কে তার পরিমাণ প্রায় ৩৪ হাজার ৩৯৪ কোটি টাকা বলে জানা গেছে। এ টাকাটাই বন্ডের মাধ্যমে ধার নিতে চায় সরকার। এর মধ্যে গত নভেম্বর পর্যন্ত মোট বিনিয়োগযোগ্য তহবিলের ৩২ শতাংশ সোনালী ব্যাংকের, ১৮ শতাংশ করে জনতা ও অগ্রণী ব্যাংকের এবং ২০ শতাংশ রূপালী ব্যাংকের উদ্বৃত্ত তারল্য বা অলস টাকা হিসেবে জমা রয়েছে।

বিনিয়োগযোগ্য মোট মূলধনের ১৯ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নিরাপত্তা সঞ্চিতি হিসেবে জমা রাখতে হয় ব্যাংকগুলোকে। বাকি ৮১ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারে তারা। এ ৮১ শতাংশের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগকৃত অর্থ বাদ দিয়ে যে অর্থ থাকে সেটিকেই উদ্বৃত্ত তারল্য বা অলস টাকা বলা হয়ে থাকে। সে অনুযায়ী আলোচ্য সময়ে মোট বিনিয়োগযোগ্য তহবিল থেকে সোনালী ৪৯ শতাংশ, জনতা ও অগ্রণী ৬৩ শতাংশ এবং রূপালী ব্যাংক ৬১ শতাংশ বিনিয়োগ করতে পেরেছে। বাকি যে বিনিয়োগযোগ্য তারল্য রয়েছে সেটাতেই নজর সরকারের।

সরকারের ঋণ পরিস্থিতি : বাজেটে ঘাটতি মেটাতে চলতি অর্থবছরে ব্যাংকিং খাত থেকে ২৫ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, নভেম্বর পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ১০ হাজার ১৫২ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। সে হিসেবে ব্যাংক থেকে আরও ১৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে নির্বাচিত সরকার বিভিন্ন জনতুষ্টিমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করায় বাজেট ঘাটতি বাড়তে পারে। সেক্ষেত্রে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ গ্রহণও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আর তাই সরকারের ব্যয় মেটাতে গিয়ে যাতে বেসরকারি খাত ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে জন্য অলস টাকার দিকে চোখ পড়েছে সরকারের।

লাভ হবে না ব্যাংকের : মূলত সরকারের চাপেই ব্যাংকগুলো বন্ডে বিনিয়োগ করতে বাধ্য হয় বলে দাবি করেছেন ব্যাংকাররা। তাদের মতে, এ থেকে যে সুদ দেওয়া হয় সেটি আমানতের সুদের হারের কাছাকাছি। ফলে সরকারকে টাকা দিলেও এ থেকে ব্যাংকগুলো তেমন একটা লাভবান হয় না। তবে সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে অলস টাকা জমে যাওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে।

উদ্বৃত্ত তারল্য স্বল্পমেয়াদে বিনিয়োগ করলে অন্তত সেই লোকসানের হাত থেকে কিছুটা রক্ষা পাওয়া যাবে। সাবেক ব্যাংকার ড. আর এম দেবনাথ বলেন, সরকারি বন্ডের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে এর সুদের হার কম। ব্যাংকগুলো যেখানে ৮ থেকে ১০ শতাংশ সুদে আমানত সংগ্রহ করে ১৬ থেকে ১৮ শতাংশ সুদে বিনিয়োগ করতে পারে, সেখানে বন্ডের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে সরকারের নির্ধারিত সুদ ৭ শতাংশের কাছাকাছি। কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন।

মন্দের ভালো : ব্যাংকিং খাতের উদ্বৃত্ত তারল্য সরকার নিয়ে গেলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

তবে এ মুহূর্তে ব্যক্তি খাতের চাহিদা কম থাকায় অলস টাকা বন্ডে বিনিয়োগ করার পরিকল্পনাকে 'মন্দের ভালো' হিসেবে বিবেচনা করছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির সিনিয়র অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, 'কৌশলগত দিক থেকে এটা বেটার। কারণ আমানত নিয়ে ফেলে রাখলে ব্যাংকগুলোর যে ক্ষতি হয় সেটি কিছুটা হলেও পোষাতে পারবে। ' তবে বন্ডে বিনিয়োগের সিদ্ধান্তটি স্বল্পমেয়াদি হওয়া উচিত এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'দীর্ঘমেয়াদে ঋণ নিলে ব্যক্তি খাতের সুযোগ নষ্ট হবে। '

 



অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.