কোটি মানুষের শহর ঢাকায় সান্ধ্যকালীন বিনোদন বলতে জাতীয় শিল্পকলা একাডেমি কেন্দ্রিক কতিপয় আয়োজন। শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে নগর বাসীর সান্ধ্য বিনোদনে যোগ হয়েছে নতুন আয়োজন লালবাগ কেল্লায় 'লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো'।
প্রদর্শনীর পুরো আয়োজনে তুলে ধরা হয়েছে লালবাগ কেল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কথা। সংস্কৃতি মন্ত্রী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর এমপি এবং শিমুল ইউসুফের কণ্ঠে বর্ণিত ইতিহাস থেকে জানা যায় প্রথমে এই কেল্লার নাম ছিল কেল্লা আওরঙ্গবাদ। আর এই কেল্লার নকশা করেন শাহ আজম।
মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব-এর ৩য় পুত্র আজম শাহ ১৬৭৮ খ্রিস্টাব্দে ঢাকার সুবেদারের বাসস্থান হিসেবে এ দুর্গের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। মাত্র এক বছর পর দুর্গের নির্মাণকাজ শেষ হবার আগেই মারাঠা বিদ্রোহ দমনের জন্য সম্রাট আওরঙগজেব তাকে দিল্লি ডেকে পাঠান। এসময় একটি মসজিদ ও দরবার হল নির্মাণের পর দুর্গ নির্মাণের কাজ থেমে যায়।
নবাব শায়েস্তা খাঁ ১৬৮০ সালে ঢাকায় এসে পুনরায় দুর্গের নির্মাণকাজ শুরু করেন। তবে শায়েস্তা খানের কন্যা পরী বিবির মৃত্যুর পর এ দুর্গ অপয়া মনে করা হয় এবং শায়েস্তা খান ১৬৮৪ খ্রিস্টাব্দে এর নির্মাণ বন্ধ করে দেন।
পরী বিবি ছিলেন শাহজাদা আজম শাহের বাগদত্তা। পরী বিবিকে দরবার হল এবং মসজিদের ঠিক মাঝখানে সমাহিত করা হয়। শায়েস্তা খাঁ দরবার হলে বসে রাজকাজ পরিচালনা করতেন। ১৬৮৮ সালে শায়েস্তা খাঁ অবসর নিয়ে আগ্রা চলে যাবার সময় দুর্গের মালিকানা উত্তরাধিকারীদের দান করে যান। শায়েস্তা খাঁ ঢাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার পর নানা কারণে লালবাগ দুর্গের গুরুত্ব কমতে থাকে।
কেল্লার চত্বরে তিনটি স্থাপনা রয়েছে-কেন্দ্রস্থলের দরবার হল ও হাম্মাম খানা,পরীবিবির সমাধি,উত্তর পশ্চিমাংশে শাহী মসজিদ। এইভাবে ধারা বর্ননা,মনমুগ্ধ শব্দ নিয়ন্ত্রন ও আলো আঁধারের খেলায় চলতে থাকে 'লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো'।
১০ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় কেল্লার ফটকে দেখা যায় শো দেখতে আসা নানা বয়সী মানুষের ভিড়। প্রতি শো’তে ৫০০জন দর্শক একসাথে প্রদর্শনী উপভোগের ব্যবস্থা থাকলেও অনেককেই প্রথমবার টিকেট না পেয়ে ২য় প্রদর্শনীর জন্য অপেক্ষা করতে হয়। বন্ধুদের নিয়ে শো উপভোগ করতে আসা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সোহাগ বিশ্বাস জানান, “নাগরিক জীবনে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের আধুনিকীকরণ ও যুগোপযোগী উপস্থাপনের ক্ষেত্রে দেশীয় মানের সঙ্গে বহির্বিশ্বের একটি সামঞ্জস্যপূর্ন সম্মিলন ঢাকা বাসীর জন্য নতুন চমক”।
সরকারি ছুটি ও সাপ্তাহিক বন্ধের দিন ছাড়া প্রতিদিন চলবে "লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো"। প্রতিদিন দুইটি শো প্রদর্শিত হচ্ছে ৩০মিনিট করে । প্রথম প্রদর্শনী ৬.৩০মিনিটে ও ৭.৩০ মিনিটে দ্বিতীয় শো। টিকিটের মুল্য রাখা হয় ২০টাকা। নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত চলবে নিয়মিত ভাবে , তবে বর্ষায় প্রদর্শনী বন্ধ থাকবে বলে আয়োজক সূত্রে জানা যায়।
লালবাগ কেল্লার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস এবং স্থাপত্য শৈলীকে ফুটিয়ে তুলতে এর পান্ড্রুলিপি তৈরি করেছেন লেখক সৈয়দ শামসুল হক। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বুয়েটের বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতায় এবং ক্রিয়েশন্স আন লিমিটেডের সার্বিক তত্ত্বাবধানে তথ্যচিত্রটি নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রদর্শনী শেষে উপভোগ করতে আসা সবার মধ্যেই একটা মুগ্ধতা লক্ষ্য করা যায়। আয়োজকদের আশা এর ফলে লালবাগ কেল্লা ফিরে পাবে তার হারানো গৌরব। তরুণরা খুঁজে পাবে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সন্ধান।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।