আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শিক্ষিত মূর্খ নয়:জ্ঞানী মানুষ চাই



শিক্ষিত মূর্খ নয়, জ্ঞানী মানুষ চাই। এই চাওয়া ও পাওয়ার মাঝে অনেক বেশি ব্যবধান। প্রচলিত আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় ধর্মহীন কিংবা ধর্মের প্রতি উদাসীন অনেক ছাত্ররা রাজনৈতিক দলের লেজুরবৃত্তি করতে যেয়ে বৈষয়িক কিংবা জাগতিক উন্নতির স্বার্থে সন্ত্রাসের পথ বেছে নিচ্ছে। পারিবারিক চর্চা বা অতীতে মাদ্রাসায় পড়ার সুবাধে ধর্মপরায়ন হয়ে গড়ে ওঠা ছাত্ররা যখন বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে ভর্তি হচ্ছে অনেক সময় তারাও ধর্মীয় বিভিন্ন সংগঠনে সম্পৃক্ত হয়ে পড়াশুনার চেয়ে দলীয় কাজকর্মকে গুরুত্ব দিচ্ছে। যেহেতু ধর্ম বিশ্বাসের আলোকে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি ফলে ধর্ম পরায়নদের আত্মিক বিশ্বাস ও বাইরের বাস্তবতার সাথে অমিলজনিত কারণে জগৎ সংসারের প্রতি অনাসক্তি সৃষ্টি হচ্ছে।

আত্মার মুক্তির আবেগে অতিমাত্রায় উৎসাহিতরা পূর্নাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা হিসাবে ধর্মের ব্যাপকতা ভুলে দুনিয়াবি যোগ্যতা অর্জনকে উপেক্ষা করতে শুরু করছে। সিলেবাসে জাতির বিশ্বাস, জীবনাচার ও ঐতিহ্য ধারণ না করায় জগৎ ও জীবনের সুসামঞ্জস্যপূর্ণ সামগ্রিক বিকাশ হচ্ছেনা। নবীন প্রজন্মকে পরিচর্যায় সুস্থ বিশ্বাস ও উত্তম আদর্শের অনুপস্থিতি সমাজ ও বাস্তবতার নিরিখে কাঙ্খিত মানের মানবিক গুণাবলী সমৃদ্ধ মানুষ গঠনে ব্যর্থ হচ্ছে। মূর্খ ধার্মিক কিংবা জ্ঞানী শয়তান কেউই আসলে খুব একটা সুবিধাজনক নয়।

শিক্ষার্থীর মনকে সুন্দর করে জ্ঞানের আলোকে আলোকিত করতে না পারলে শক্তভাবে শাসন করেও সমাজকে জাগানো যাবে না।

মদ-নারী-তাস থেকে জোরপূর্বক নিয়ন্ত্রণ করা যায়না,অর্থ কিংবা ক্ষমতার লোভে সন্ত্রাসী অস্ত্রধারী হয়ে ওঠলে সে কারো নির্দেশেই খুব সহজে এপথকে আর ছাড়তে পারেনা। সদুপদেশ যার কাছে বিষতুল্য মনে হয় তার কাছে জানা বা জ্ঞান অর্জন করার চেয়ে বস্তুগত প্রাপ্তিই বড় হয়ে ওঠে। জ্ঞান অর্জন বা জ্ঞান গবেষণার বহুবিধ কৌশল আয়ত্ত্ব করার চেয়ে তড়িৎ প্রাপ্তির উদগ্র বাসনায় ভোগ বিলাসের জন্যে সহজ পথ খুঁজতে থাকে। যারা সার্টিফিকেট অর্জনকেই শিক্ষার সংকীর্ণ উদ্দেশ্য হিসাবে গ্রহণ করে পাঠ্যপুস্তক কেন্দ্রিক জ্ঞান আহরণ করার মধ্যে নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখে তাদের সম্ভাবনার পরিপূর্ণ বিকাশ সাধন হয় না। শিক্ষার্থী সুস্থ সবল দেহের না হয়ে রোগা ও পুষ্টিহীনতায় ভোগা দুর্বল শরীরের মানুষ হয়ে গড়ে ওঠলে তার আকাশ ছোঁয়া মানসিক শক্তিও দুর্বল হবার আশংকা থেকে যায়।

বইয়ের কীট সেরা রেজাল্টধারী কিংবা অসৎ ও অনৈতিকভাবে জীবন যাপনকারী কেউই সামাজিক মানদন্ডে স্বাভাবিক বলে বিবেচিত হন না। নৈতিক জীবনের সুষম বিকাশ সাধন না হলে নীতিহীন মানুষ জীবনকালব্যাপী জগতের ক্ষতিসাধনই করে চলেন। দুশ্চরিত্রবান শিক্ষার্থী কর্মজীবনে যেয়েও মানুষের সেবার পরিবর্তে নিজের লোভ লালসা পূরণে নিয়োজিত হন ফলে তার নেতিবাচক ভুমিকা প্রতিষ্ঠানের আওতায় আর সীমাবদ্ধ থাকে না।

বাঞ্ছিত পথে মানুষের ব্যবহারের ইতিবাচক পরিবর্তন যে শিক্ষায় হয়না, যে অভিজ্ঞতা বা পারিপার্শ্বিকের প্রভাবে সমাজের উন্নতি হয়না তার গ্রহণযোগ্য উত্তম বিকল্প আছে কি? নেই। তবে কেন জগতের বিদ্যমান অবস্থার সাথে খাপ খাওয়াতে দেশপ্রেমিক ও সৎ শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষিত-জ্ঞানী হতে সচেষ্ট হবে না? সমাজের চোখে প্রয়োজনীয় ব্যক্তি হয়ে ওঠলে, নিজেকে যোগ্য-আধুনিক-স্মার্ট করে গড়ে তুললে বৃহত্তর কল্যাণ সাধন সম্ভবপর হয়।

দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত শিক্ষাকাল-ফলে মৃত্যু পর্য ন্ত সৃজনীশক্তি ও উদ্ভাবনী ক্ষমতার ব্যবহারে নিবেদিত হওয়া বাঞ্চনীয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে যদি কিছু যোগ্য কিন্তু অসৎ কিংবা কিছু অযোগ্য সৎ মানুষ বের হয় তবে তাদেরকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়েও পরবর্তীতে গুণমানসম্মত করা কঠিন হবে। প্রশ্ন হচ্ছে অচল পণ্যকে লালন করে দুর্বলতা দূর করে যথোপযুক্ত পরিপুষ্টি সাধনে কেইবা সঠিক নিয়ম পদ্ধতি অনুযায়ী তাকে পরিচালিত করবে। ব্যক্তির প্রতিভা বা প্রবণতাকে বের করে এনে সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটানো ছাত্রবয়সে যতটা সহজ কর্মজীবনে ততটাই কঠিন। ফলে সকল প্রকার অনৈতিক কার্যকলাপ থেকে নিয়ন্ত্রণ বা শাসন করার চেষ্টার চাইতে অর্থপূর্ণ পরিচর্যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে জীবনোপযোগী কৌশল বা দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।



জ্ঞান প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর অন্তর্নিহিত শক্তি-সুপ্ত প্রতিভা ও সম্ভাবনার বিকাশ ঘটায়ে যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে সহায়তা প্রদানটা কে করবে? জীবনের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার ফলে কিছুটা জ্ঞাতে কিছু অজ্ঞাতে মানুষের ব্যবহারের যে পরিবর্তন তা মোটেই গুরুত্বহীন নয়। তবে সমাজ যে জ্ঞান সঞ্চয় করেছে, যে কৌশল আয়ত্ব করেছে এবং যে অভ্যাস ও চারিত্রিক গুণাবলীকে শ্রদ্ধা করতে শিখেছে তা নির্দিষ্ট অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ভবিষ্যৎ নাগরিকদের মধ্যে বিতরণের চেষ্টা বৃদ্ধির বিকল্প কোন পথ নেই। ইংলিশ মিডিয়ামে বা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের চাইনিজ আর ফাস্টফুড কিংবা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের ডাইনিংয়ের খাবার কোনটাই শরীরের পরিপূর্ণ বিকাশে সহায়ক নয়। যদি কেউ লাইব্রেরীতে না যায় তবে তার আত্মার উন্নতি যেমন কঠিন খেলার মাঠ ও মুক্ত আলো বাতাস ছাড়া সুস্থ শরীরের বিকাশ তেমনই অসম্ভব। ধর্মীয় অনুশাসনের অনুমোদিত পবিত্র কার্যক্রমের মাধ্যমে সুখ লাভ করার ব্যবস্থা তেমনি প্রয়োজন যেমনি সুস্থ সবল দেহ ও সুস্থ মনের জন্যে পুষ্টিকর খাবার-স্বাস্থ্যকর পরিবেশ-আত্মিক প্রশান্তি প্রয়োজন।

পরের কল্যাণে নিবেদিত হবার বাসনা, উন্নততর আত্ম উপলব্ধি না থাকলে এমন কোন পরশ পাথর নেই যা মানুষের মনে জ্বালবে আশার আগুন। আসলে আমাদের মূল সংকটটা হচ্ছে দেহ,মন এবং আত্মার সমন্বিত উন্নয়নের জন্যে যে ধরনের শিক্ষা প্রয়োজন তা না থাকা।

প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা কি মিথ্যার বিনাশ আর সত্যের আবিস্কারে নিজেদেরকে নিয়োজিত রেখেছেন? দলীয় বিবেচনার সংকীর্ণতা থেকে নিয়োগ,নিজ দলের সমর্থিত ছাত্র সংগঠনের সাথে সম্পৃক্তদের আলাদা সুযোগ সুবিধা প্রদান, চাঁদাবাজি,টেন্ডারবাজি, বিরোধী পক্ষকে দমন-এসব হরহামেশা ঘটছে। নারী কেলেংকারি, ইভটিজিং, মাদকাসক্তি,হল দখল, সীট দখল, রুম দখল, ফাও খাওয়া-ছাত্রসেংগঠনের নেতাকর্মীরা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার মনে করছে। সুন্দর বিশ্বাসযোগ্য পবিত্র জীবনের উপলব্ধি থাকলে নকল থাকতনা।

ধর্মীয় পবিত্র কার্যক্রমের মাধ্যমে সুখ লাভ করার চেতনা থাকলে শিক্ষার্থীদের দ্বারা শিক্ষক লাঞ্চনার ঘটনা ঘটতনা। আবার মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষা বিতরণকে ঐশ্বরিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া হিসাবে ভাবতে পারলে শিক্ষকের দ্বারা ছাত্রী অপমানিত হতনা। সৃষ্টির উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য মানুষের অন্তরের যৌক্তিকতাবোধকে জাগিয়ে তোলা এবং পশুত্বকে নিয়ন্ত্রন করার শিক্ষা চর্চিত হলে কি আর কোন শিক্ষক পুলিশ দিয়ে তার ছাত্রদের মারতে পারত? শিক্ষার্থীও বিবেকবান হয়ে গড়ে ওঠার প্রশিক্ষণ পেলে শিক্ষককে সম্মান করতো,শিক্ষকের সামনে ধুমপান করতো না, কোন নির্লজ্জ ব্যবহার করতো না, ভদ্র আচরণ করতো।

রাজনৈতিক বিভাজন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সামগ্রিক কাজে নিরপেক্ষতা ও ন্যায়পরায়নতা বজায় রাখার অন্তরায়। মানবতা,দেশ জনগন,পরিবার ও প্রতিষ্ঠানের জন্য সদা কর্তব্যপরায়ন মানুষ বিদ্বেষ ও বৈষম্য চর্চার বৈধতা বজায় আছে এমন প্রতিষ্ঠান থেকে বের না হওয়াটাই স্বাভাবিক।

আপনি কিভাবে আশা করেন পদদলিত-নির্যাযতিত-নিষ্পেষিত-বঞ্চিত প্রজন্ম সত্য ও সুন্দরের জন্য এক্যবদ্ধ থাকবে। সত্য সঠিক পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য যে সাহসিকতা প্রয়োজন তা সবার মাঝে আছে কি? মেধা,সময় ও জাতীয় সম্পদের সম্যক ব্যবহারের দায়বদ্ধতা তৈরি হলেই কেবল আচার-ব্যবহার ও সকল কাজে সততা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবার সম্ভাবনা দেখা যৌক্তিক মনে হয়। সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে না পারলে নবদিগন্তের উন্মোচন বা উদ্ভাবন হবেনা,জাতির প্রতি কর্তব্যবোধ ও আনুগত্যপরায়ন মানুষও তৈরি হবে না, মহৎ কাজের প্রতি আসক্তিও দেখা যাবে না।

প্রকৃত শিক্ষা সামাজিক জীব হিসেবে ব্যক্তির সর্বাধিক কর্মক্ষমতা, ধ্যান ধারণা রুচি ও স্বভাবের পরিবর্তন সাধন করে, আত্মোপলব্ধি জাগায়ে প্রকৃত মানুষ হিসাবে তৈরি করে। সর্বোচ্চ যোগ্যতা ও ব্যক্তিগত উন্নতি আনয়ন করলেই কেউ সত্যিকারের মানুষ হয় না।

যোগ্যতানুসারে প্রতিটি মানুষের সৃজনশীলতার বিকাশ সাধন করতে না পারলে দেশ ও জাতিকে সামনে এগুনো যাবেনা। পারস্পরিক সমঝোতার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মনোভাব সৃষ্টি না হলে তাতে মাটি ও মানুষের অকল্যাণই ত্বরান্বিত হবে। জাতীয় মূল্যবোধ তথা কর্তব্যজ্ঞান,ন্যায় পরায়নতা,শৃঙ্খলাবোধ শিষ্টাচার ও একাত্মবোধ সৃষ্টি হলেই দেশপ্রেমিক ও পরিশ্রমী নাগরিকরা বিশ্বদরবারে এদেশকে সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে যাবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যার মাধ্যমে দক্ষ ও সৃজনশীল জনশক্তি প্রস্তুতকরতে পারলেই যুগের চাহিদা মিটানো যাবে। শিক্ষার মাধ্যমে শ্রমের মর্যাদাবোধ সৃষ্টি এবং জাতীয় উন্নয়ন সম্পর্কিত সমস্যা সমাধানে সবাইকে অনুপ্রাণিত করা না গেলে ব্যক্তি শুধু নয় গোটা সমাজই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

মেধা ও প্রবনতা অনুসারে জীবিকা অর্জনের জন্য যথারীতি প্রশিক্ষণ প্রদান না করা গেলে নতুন নতুন আইডিয়া, সৃজনশীল চিন্তা ও সৃষ্টিশীল ধারণা পাওয়া যাবে না। প্রয়োজনীয় বস্তুর উদ্ভাবন এবং সত্য মিথ্যা চিহ্নিতকরণ সহজতর করতে পারলেই আধুনিক-প্রগতিশীল-ডিজিটাল সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দেয়া সম্ভব হবে।

ভালত্ব ধারণার উপলব্ধি থাকলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নেতা মানিক ধর্ষণে সেঞ্চুরী করে আনন্দানুষ্ঠান করতে পারত না। শিক্ষা আত্মার উন্নয়ন ও চেতনার সমৃদ্ধি ঘটালে কি জনগণের করের টাকায় পড়ুয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা নিরীহ পথচারি বিশ্বজিতকে রাজপথে প্রকাশ্যে হত্যা করতে পারত? শিক্ষা ন্যায়কে উদ্ভাসিত করলে কি ভিকারুননিসা নূন স্কুলের বসুন্ধরা শাখার (দিবা) বাংলার শিক্ষক পরিমল জয়ধর জোরপূর্বক ছাত্রীদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্খাপন ও সে দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করতেন? ব্যক্তিকে তার কর্তব্য ও দায়িত্বপালনে সম্পূর্ণ উপযুক্ত করে তোলেনি বলে বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষ, হল দখল বা আধিপত্য বিস্তার এবং টেন্ডার ভাগাভাগি নিয়ে কোন্দল দেখা যায়। প্রকৃত শিক্ষা নারী পুরুষ সবাইকে সামাজিক অর্থনৈতিক বুদ্ধিবৃত্তিক এবং রাজনৈতিকভাবে যোগ্য করে তোলে।

অথচ আমাদের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট, নিত্যনৈমিত্যিক গন্ডগোলে ক্লাশ বন্ধ হয়ে থাকার কারণে সেশন জট তৈরী হচ্ছে, দীর্ঘায়িত হচ্ছে ছাত্রজীবন। শিক্ষা মানুষের কুপ্রবৃত্তিকে মূলোৎপাটন করার কথা থাকলেও দেখছি উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে স্বার্থপরতা,অপরাধপ্রবণতা বেড়ে চলছে। এক সময় ছাত্র রাজনীতির গৌরবময় ঐতিহ্য ছিল। আজ তার লেশ মাত্র নাই। রাজনৈতিক দল গুলির লেজুড় বৃত্তি করে ছাত্র রাজনীতি তার গ্রহন যোগ্যতা হারিয়েছে।

মেধাবীরা আজকাল এতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলায় ছাত্র রাজনীতি মেধা শূন্য হয়ে পড়েছে। ছাত্ররাজনীতির গুণগত পরিবর্তন ও শিক্ষাব্যবস্থায় কাঙ্খিত সংস্কার না হলে এঅবস্থা থেকে উত্তরণের কোন সম্ভাবনা নেই।

শিক্ষার উদ্দেশ্য মহৎ হলেও বর্তমানে অধিকাংশ শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের আচার আচরণ ও কার্যক্রমে মহত্ত্বের কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। শিক্ষার উদ্দেশ্য এখন বলা যায় পুরোটাই বাণিজ্যিক হয়ে যাচ্ছে। গড়ে উঠেছে অসংখ্য কোচিং, প্রাইভেট স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়।

অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা শিক্ষাগত যোগ্যতাকে অর্থনীতিক আয়ের একটা মাধ্যমে হিসেবে মনে করছে। নৈতিক ও মানবিক মুল্যেবোধহীন শিক্ষায় শিক্ষিত একজন ব্যক্তি যখন কোনো প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করে, তখন তার মধ্যে নিজ স্বার্থ সিদ্ধি ছাড়া অন্যান্য উদ্দেশ্য গৌণ হয়ে যায়। এজন্যই স্বার্থসিদ্ধিতে একজন কর্মকর্তা নীতিবহির্ভূত যেকোন অন্যায় করতেও দ্বিধা করে না। শিক্ষার্থীকে নৈতিকতা, ত্যাগ, জনকল্যাণ, উদারতা, মহানুভবতা এবং সততা শিক্ষার ব্যবস্থা করতে না পারলে সুদ-ঘুষ-দুর্নীতিমুক্ত সমাজ কখনো প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। শিক্ষক মহোদয়গণ শিক্ষার্থীদের সামনে নিজেদেরকে আদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করতে পারলেই কেবল পরিশুদ্ধ মানুষ তৈরি হওয়া সম্ভব।

গুরু যদি নৈতিক এবং মানবিক মূল্যেবোধ সম্পন্ন না হন তবে শিষ্যের মাঝে কিভাবে সততা, ন্যায়, মায়া, মমতা, সহিষ্ণুতা, পরোপকার, ত্যাগ দেখা যাবে। শিক্ষার্থীর চরিত্র তখনই সুন্দর হবে যখন শিক্ষক আদর্শবান ও চরিত্রবান হবে।

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে সততা ও যোগ্যতার সমন্বিত মানুষ বের হচ্ছেনা এটা খুবই ভাবনার বিষয়। নেপোলিয়ন বলেছিলেন, আমাকে ভাল মা দাও, আমি তোমাদিগকে ভাল জাতি দিব। তিনি খুবই শিক্ষিত মায়ের কথা বলেননি বরং বলেছেন চরিত্রবতী,ধৈর্য্যশীলা ও ন্যায়বান এক মায়ের কথা।

আমিও বলব আমাকে উত্তম শিক্ষক দাও আমি তোমাকে উত্তম শিক্ষার্থী উপহার দিব। চিন্তার ব্যাপার হচ্ছে এমন মা কিংবা শিক্ষক আমরা কেন পাচ্ছিনা? কাংখিত মানের সৎ, যোগ্য ও দেশপ্রেমিক নাগরিক তৈরির জন্যে মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকায়ন জরুরী আর সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থাতেও ধর্মীয় বা নৈতিক শিক্ষাকে গুরুত্বের সাথে অন্তর্ভুক্তকরণ প্রয়োজন। নৈতিক শিক্ষা ছাড়া শিক্ষিত মানুষ যে চরিত্রবান, মানবতাবোধ সম্পন্ন ও মনুষত্ববোধে উজ্জীবিত মানুষ হবে এমন নিশ্চয়তা দেয়া যায়না আবার আধুনিক শিক্ষা ছাড়া সময়ের দাবি পূরণে উপযুক্তমানের ব্যক্তিত্ব হিসাবে গড়ে তোলাও অসম্ভব। ফলে শিক্ষাব্যবস্থার আধুনিকায়নের সাথে সাথে নৈতিক শিক্ষার সমন্বয় ঘটানোর বিকল্প কোন পথ নেই।





এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.