জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকার বিরোধী আন্দোলনে ব্যর্থতা, এসি রুমে থেকে কর্মসূচীর ঘোষণা দিয়ে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মাঠে নামিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের আত্মগোপনে থাকা, মাঝে মধ্যে দেশে বিদেশে আত্মগোপন করা, বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান কর্তৃক লাদেনীয় কায়দায় ভিডিও বার্তার মাধ্যমে কর্মসূচীর ঘোষণা ছাড়াও নানাবিধ কারণে দলের হাইকমান্ডসহ বিরোধীজোটের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের প্রতি তৃণমূল নেতা-কর্মীদের ক্ষোভ চরমে পৌঁছেছে। আর এতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের মধ্যকার বিরোধ, এ যেন কাঁটা ঘায়ে নূনের ছিটা। উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থিতা বাছাই ও একক প্রার্থী নির্বাচন, বিভিন্ন উপজেলায় বিএনপির যোগ্য প্রার্থী বাদ দিয়ে জামায়াতের প্রার্থীকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সমর্থন করাকে কেন্দ্র করে দলের তৃণমূল পর্যায়ের বেশীরভাগ নেতা-কর্মীই হতাশ এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি ক্ষুব্ধ। প্রতিবাদে স্থানে স্থানে বিক্ষোভ করছে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। এমনকি তৃণমূল নেতাদের মতামতের বাইরে গিয়ে সিদ্ধান্ত দেয়ায় সিলেটে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছে।
কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি অভিমান করে ইতোমধ্যে নিজেদের মনোনয়নপত্রও প্রত্যাহার করে নিয়েছেন তৃণমূলের অনেক বিএনপি নেতা। অন্যদিকে, দলের চেয়ারপার্সনসহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতারা জামায়াতের সঙ্গে দল ও নিজেদের সখ্যতা বজায় রাখতে দলের তৃণমূলের ত্যাগী নেতাদের বিরুদ্ধে "শৃঙ্খলাভঙ্গ এবং দলের স্বার্থবিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে" এমন অভিযোগ এনে বিএনপি এখন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীতা নিয়ে বহিষ্কারাদেশ প্রদান/প্রত্যাহারের খেলায় মেতে উঠেছেন। দলের একাধিক নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রভাবশালী নেতাদের কথামত একটি প্রেস রিলিজ দিয়ে কেন্দ্র থেকে বহিষ্কারের কারণে তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা চরম ক্ষুব্ধ হচ্ছেন। জানা যায়, গত এক সপ্তাহের মধ্যে দল থেকে ৪২ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর মধ্যে একজন সাবেক সংসদ সদস্যও রয়েছেন।
১০ম জাতীয় নির্বাচনে জামায়াতের পরামর্শে দাবার চালে পরাজিত খালেদা তথা বিএনপি, জামায়াতের সঙ্গ ছাড়তে বিএনপির উপর সরকার ও আন্তর্জাতিক মহলের অব্যাহত চাপ এবং সঙ্গ ত্যাগ না করতে বিএনপিকে জামায়াতের হুমকি ইত্যাদির ফলে বিএনপি আজ দিশেহারা ও হতাশ। এছাড়া নির্বাচনে বিএনপি পাকিস্তানের ট্রেন খুঁজে না পেয়ে বিএনপির হাইকমান্ডের মাথা খারাপ হয়ে গেছে, আবোল-তাবোল বকছেন। ফলশ্রুতিতে, কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে তৃণমূল নেতাদের দূরত্ব বেড়েই চলেছে। কমতে শুরু করেছে চেয়ারপার্সনের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস। এদিকে চেয়ারপার্সন কর্তৃক দল গোছানোর সিদ্ধান্তে দলের তৃণমূলসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন কমিটিতে পদ প্রাপ্তিকে কেন্দ্র করে আভ্যন্তরীণ কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।
তৃণমূল পর্যায়ের এক নেতা মন্তব্য করেন যে, "বহুদিন থেকেই বিএনপি করে আসছি, দলের জন্য অনেক ত্যাগ-তিতীক্ষা স্বীকার করেছি কিন্তু মুল্যায়ন পায়নি। কেন্দ্রীয় নেতারা নিজেদের ইচ্ছামত দলের সুযোগ সুবিধা ভোগ করে আর তৃণমূল নেতা-কর্মীদেরকে তারা শুধু নিজেদের প্রয়োজনে খাটায়"। অপর এক নেতা বলেন, "কেন্দ্রীয় নেতাদের কারণেই জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আন্দোলনে বিএনপি ব্যর্থ হয়েছে, আর এর দায়ভার তৃণমূল নেতা-কর্মীদের উপর চাপিয়ে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় নেতারা"।
মির্জা ফখরুলসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি ক্ষুদ্ধ কয়েকজন তৃণমূল নেতা বললেন, সম্প্রতি প্রকাশিত আল কায়েদার অডিও বার্তার সাথে জড়িত না থাকার বিষয়টি প্রমাণের জন্য তারা অতি উৎসাহী হয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে। এ যেন ফখরুলের "ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি কলা খাই নাই"- গোছের আচরণ।
তাদের এরকম অতি উৎসাহী আচরণের ফলেও তৃণমূলের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।
মির্জা ফখরুলের বিরুদ্ধে অধিকাংশ তৃণমূল নেতা-কর্মীদের অভিযোগ-তিনি হেলমেট পরে দলীয় কার্যালয়ে আসেন, বোরকা পরে আদালতে যান জামিনের জন্য। অবান্তর কথা বলতে বলতে তিনি নিজে খেই হারিয়ে ফেলেছেন। আর এখন তিনি এবং দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা আন্দোলনের ব্যর্থতার জন্য তৃণমূলকেই দায়ী করছেন। কিন্তু তৃণমূল নেতাদের ভাষ্যমতে, “আমরা কখনও এ ব্যর্থতার দায়কে বরদাশ্ত করব না।
প্রয়োজনে তৃণমূল বিএনপি গঠন করব”। বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ে জনশ্রুতি রয়েছে, বেগম জিয়া কথিত গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় (মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’র দিন) নিজে দুপুর ২টায় ঘুম থেকে উঠে আবোল-তাবোল বকতে শুরু করেন। এমন ঘুম বিলাসী নেত্রীর আন্দোলনের ডাকে কি তাঁর পাশে কাজের বুয়া ছাড়া সচেতন ও দেশপ্রেমিক জনগণকে দেখার প্রত্যাশা করা যায়? তাইতো সেদিন তাঁর পাশে কোন নেতা-কর্মী নয় বরং কাজের বুয়াকে প্রত্যক্ষ করেছে বাংলার জনগণ। আর তাই খালেদা জিয়া কিংবা তার ছেলে তারেক রহমানের নেতৃত্বে আর বিএনপি করতে রাজি নয় বিএনপি’র তৃণমূল নেতারা।
দলের তৃণমূল পর্যায়ের এসব ত্যাগী নেতা অচিরেই গঠন করতে যাচ্ছে তৃণমূল বিএনপি।
আর তৃণমূল বিএনপির লক্ষ্য হবে, জনগণের সুখে দুঃখে পাশে থেকে দেশের উন্নয়নে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।