আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিএনপিতে অচিরেই শুদ্ধি অভিযান

বিএনপিতে অচিরেই শুরু হচ্ছে শুদ্ধি অভিযান। কেন্দ্র থেকে শুরু করে মহানগর, জেলাসহ সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটিতেও আমূল পরিবর্তন আনা হবে। এ লক্ষ্যে কারারুদ্ধ সিনিয়র কয়েকজন নেতার মুক্তির পর পরই তাদের নেতৃত্বে গঠন করা হবে শক্তিশালী তদন্ত কমিটি। আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে যারা অাঁতাতের মাধ্যমে নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থসম্পদ রক্ষা করতে তৎপর এবং ইচ্ছা করে আত্দগোপনে ছিলেন তাদের শনাক্ত করা হচ্ছে।

বিশেষ করে আন্দোলনে ব্যর্থ ঢাকাভিত্তিক কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে এবার শনির দশা অপেক্ষা করছে।

অনেক হেভিওয়েট নেতাও এ দফায় ছিটকে পড়তে পারেন। বিএনপি সমর্থক কয়েকজন পেশাজীবী নেতা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বুধবার রাতে রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে এ কথা জানান। স্থায়ী কমিটির দুজন সদস্য, একজন ভাইস চেয়ারম্যানসহ চেয়ারপারসনের একজন উপদেষ্টাও শুদ্ধি অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তারা বলেন, দলের হাইকমান্ডের ইচ্ছায়ই এ রকম পরিকল্পনা রয়েছে। তবে কেন্দ্রের আগে এ পুনর্গঠন বা শুদ্ধি অভিযান চালানো হবে মহানগর ও জেলা পর্যায়ে।

সব শেষে হবে কেন্দ্রে। এ ক্ষেত্রে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব থেকে শুরু করে ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবের মতো পদেও পরিবর্তন আসতে পারে। কারণ খালেদা জিয়া এ পদগুলোয় থাকা ব্যক্তিদের কার্যক্রম বছরখানেক আগে থেকেই পর্যবেক্ষণ করছেন। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এতদিন 'বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে' আত্দগোপনের যে কারণ উল্লেখ করে বেড়াচ্ছিলেন, সেটিও সম্প্রতি নাকচ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। বরং তিনি এ ব্যাপারে বিরক্ত হয়েছেন বলে জানা যায়।

পুনর্গঠনের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, 'এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। বিএনপি দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল। কাজেই পুনর্গঠন, কমিটি সংস্কার- এটা হওয়াই স্বাভাবিক। ' পুনর্গঠন বা পদ-পদবিতে রদবদলের বিষয়টিকে চলমান রাজনৈতিক প্রক্রিয়া হিসেবে মনে করেন দলের আরেক নীতিনির্ধারক ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনও। জানা গেছে, বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে এবার ঢেলে সাজাবেন খালেদা জিয়া।

এর মধ্যে জাতীয়তাবাদী কৃষক দল, যুবদল ও ছাত্রদলসহ বেশ কটি সংগঠনের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে সবার আগে। সপ্তাহদুয়েকের মধ্যেই সেটি করা হতে পারে। এ ছাড়া তিনি গুলশান কার্যালয়ের পুরো কাঠামো পুনর্গঠন করবেন। ফলে সেখানেও 'চাকরি হারানোর' আতঙ্কে আছেন অনেক নেতা। স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, বেগম জিয়া এবার যা করবেন তা পরিষ্কারভাবেই করতে যাচ্ছেন।

'একটু সংস্কারপন্থি আর একটু মোনাফেক' এ ধরনের লোকদের পর্যায়ক্রমে দল ও তার আশপাশ থেকে বিদায় করবেন। অন্যথায় বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়া দূরে থাক, অস্তিত্বই ধরে রাখতে পারবে না। তিনি এ জন্য সংশ্লিষ্ট পদগুলোয় উপযুক্ত লোকও খুঁজছেন। এমনকি দলের মহাসচিবের দায়িত্ব দেওয়ার জন্য নেতা খুঁজছেন। এ ক্ষেত্রে পছন্দের একজনকে বারবার প্রস্তাব দিলেও তিনি তা নিতে আগ্রহী নন।

কয়েক দিন আগেও এ ধরনের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এই নেতা। তবে শেষ পর্যন্ত স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনসহ আরও দুজন নেতার কথাই ভাবছেন খালেদা জিয়া। অবশ্য, ভারপ্রাপ্ত হিসেবে যুগ্ম-মহাসচিব রিজভী আহমেদের কথাও বিবেচনা করা হতে পারে। একাধিক সূত্রমতে, আন্তর্জাতিক লবিং-তদবির ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রেও দ্বৈতনীতি অবলম্বন করতে গিয়ে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন বিএনপির কূটনৈতিক লবিস্টরা। গত পাঁচ বছরে তাদের অর্ধেক ছিলেন গুলশান কার্যালয়ে রাষ্ট্রদূতদের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে।

আর বাকি অর্ধেক চলেছেন সরকারের তুষ্টির সঙ্গে খাপ খাইয়ে। 'গোপন চুক্তি'র আওতায় কেউ কেউ সরকারের এজেন্ডা অনুযায়ী কাজ করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে দলের দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে। বিএনপির ঢাকাস্থ কেন্দ্রীয় নেতাদের ৯৮ শতাংশের বিরুদ্ধেই অভিযোগ- তারা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে চলছেন। এভাবে তারা ব্যবসা-বাণিজ্য ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে ভালোভাবেই দিনাতিপাত করছেন। এর মধ্যে নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অনেক বাঘা ছাত্রনেতাও রয়েছেন।

যারা এখন দলের পক্ষ থেকে কোনো কর্মসূচি ডাকলে আত্দগোপনে চলে যান এবং পরে পরিস্থিতি শান্ত হলে ফিরে আসেন। আর কোনোরকমের প্রশ্ন উঠলেই তারা সবাই ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের উদাহরণ তুলে ধরেন বলে জানান স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য। অন্যদিকে, মহানগর বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে বলে বলে স্থায়ী কমিটির যে দুজন সদস্য এতদিন মুখে ফেনা তুলে ফেলেছিলেন, তারা দুই মাস ধরে একেবারে চুপসে আছেন। আত্দগোপনে তারা নিরাপদেই ছিলেন। খালেদা জিয়া এদের ব্যাপারেও চিন্তাভাবনা করছেন।

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.