Quazi Hassan’ World of Writings রাজা: আমি ঠিক করেছি, আমার দেশে কারোর মেরুদণ্ড থাকতে পারবে না।
মন্ত্রী: জ্বী জাঁহাপনা, আপনি যখন বলেছেন, তখন কারোর মেরুদণ্ড থাকতে পারবে না।
রাজা: কিন্তু সমস্যা হল, মানুষ তো মেরুদণ্ড নিয়ে জন্মায়।
মন্ত্রী: জ্বী জাঁহাপনা, আপনি যদি বলেন, ওদের ধরে এনে, এক এক করে মেরুদণ্ড বের করে নেওয়া যেতে পারে।
রাজা: এইটা কি একটা আক্কেলের কথা বললে।
মেরুদণ্ড বের করতে গেলে, বেটা জনগণ-তো সব অঘরে প্রাণ হারাতে থাকবে। এমনিতেই শরীরের মধ্যে ফরমালিন, আর্সেনিক, আর সব ভেজালে ভরা। ব্যাটারা যে কি করে হাটা চলা করে!
মন্ত্রী: জ্বী জাঁহাপনা, সেটাই তো ভাল। কিছু জনগণ মরলে তো সব দিক দিয়ে ভাল। জনগণ যত কম হবে, দেশ চালাতে তত সুবিধা।
বিরোধী দল হরতাল, মিছিল, ভাংচুরের জন্যে মানুষ পাবে না।
রাজা: তুমি দেখছি গর্দভের গর্দভ। জনগণ ছাড়া দেশ চলে না-কি। আমার সৈন্য, সামন্ত আর চেলা চামুণ্ডা তা হলে কে হবে। ওরা ট্যাক্স না দিলে বিদেশের ব্যাংক একাউন্টে ডলার জমবে কি করে? ওদের মলিন চেহারা দেখিয়ে ফরেন এইড এনে; সাঙ্গ পাঙ্গদের টু পাইস কামানোর ব্যবস্থা হচ্ছে।
মন্ত্রী: জাঁহাপনা আমার তো মাথায় আসছে না এখন আমরা কি করতে পারি। জনগণ থাকতে হবে আবার তাদের মেরুদণ্ড বের করে নিতে হবে। এই দেখেন আমার মাথার মধ্যে এর মধ্যেই স্পার্ক করা আরম্ভ হয়ে গেছে। যে কোন মুহূর্তে ধোঁয়া বের হওয়া আরম্ভ হতে পারে।
রাজা: তোমাকে যে কেন মন্ত্রী বানিয়েছিলাম।
কোন কাজ দিলেই মাথা গরম হতে থাকে, স্পার্ক হয় আর আমাকে ধোঁয়ার ভয় দেখাতে থাক। এত দিনের চামচা না হলে, কবে তোমাকে ফায়ার করে দিতাম।
মন্ত্রী: জাঁহাপনা ওই কথা বলবেন না। নিজের যোগ্যতা বলে মন্ত্রীর চাকরি পেয়েছি, আর সেই যোগ্যতা বলেই চাকরিটা টিকিয়ে রেখেছি।
রাজা: হ্যাঁ হ্যাঁ তোমার মত অকর্মণ্য পৃথিবীতে আর এক জন আছে কি-না, সন্দেহ।
পার তো শুধু একটা কাজ করতে---আমাকে ব্ল্যাক-মেল করতে।
মন্ত্রী: আমাকে আর ক্ষেপীয়ে মাথা থেকে ধোঁয়া বের করিয়ে দিবেন না; আমি কিন্তু এখনই যেয়ে রাজ রানীকে যেয়ে আপনার ফষ্টি নষ্টির সব ঘটনা জানিয়ে আসব।
রাজা: থাক থাক ওই কাজ করার দরকার নাই। তবে তিন দিন সময় বেঁধে দিলাম। এর মধ্যে বের করা চাই, জনগণের মেরুদণ্ড কিভাবে বের করে ফেলা যায়।
তারা যাতে আর কখন মাথা উঁচু করতে না পারে, আমার চোখে চোখ রেখে কথা বলতে না পারে।
মন্ত্রী: সময় বেঁধে দেওয়ার দরকার নাই। আপনার সমস্যার সমাধান আমার মাথায় এর মধ্যে চলে আসতে শুরু করেছে।
রাজা: তোমার মাথা থেকে সমাধান......আমাকে হাসালে। হা হা হা
মন্ত্রী: এই দেশের মানুষ, মেরুদণ্ড নিয়ে জন্ম নিলেও, তাদের বয়স যত বাড়তে থাকে; মেরুদণ্ড তত গলতে থাকে।
এই ধরেন চাকরিতে ঢুকতে ঢুকতে ৮০% গলে যায়, আর চাকরি টিকানোর জন্যে বাকিটাও গলিয়ে ফেলে। এই যেমন, আপনার চাকরি করতে করতে আমার মেরুদণ্ড গলে গেছে সেই কবে! হি হি হি !!
রাজা: কি আবোল তাবোল বোকছো...।
মন্ত্রী: জী জনাব......আপনার রাজত্বে এখন সবারই এই অবস্থা। মেরুদণ্ড গলা আরম্ভ হয় সেই ছোট বেলা থেকেই। পড়ালেখা না করে, টিচারের পেছনে ঘুরে পরীক্ষার প্রশ্নের জন্যে আর চাকরিতে ঢোকার জন্যে দেয় এক বস্তা ঘুষ।
তার পরে চাকরি টিকানোর জন্যে মোসাহেবি করে মেরুদণ্ড গলিয়ে একেবারে ফ্যানা ফ্যানা দশা। নিজের জ্ঞান বুদ্ধি হারিয়ে তো ফেলেই। ছোট বড় সব দুর্নীতি, অনিয়মের সাথে আপোষ করে। এর পরে আপনিই বলেন, এই মানুষদের মেরুদণ্ড বলে কি আর কিছু বাকি থাকে।
রাজা: কি আবোল তাবোল বলছ......সব জনগণ কি আর পড়ালেখা করে, তোমার মত চাকরি করে?
মন্ত্রী: তা ঠিক যেই ব্যবস্থা করা আছে, পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে কিংবা পড়ালেখা না করেও এরা মেরুদণ্ড হারাচ্ছে।
অর্থের লোভে চেলা চামুণ্ডা হচ্ছে। ভেজাল করতে, অন্যায় করতে বিন্দুমাত্র লজ্জা পর্যন্ত পাচ্ছে না। কিন্তু বিবেক দংশন ঠিকই হচ্ছে, মাথা তুলে দাঁড়ানোর সাহস পর্যন্ত হারিয়ে ফেলছে। জাঁহাপনা এর পরেও যদি বলা হয় ওদের মেরুদণ্ড আছে, তা হলে মেরুদণ্ডকে অপমান করা হবে। ওদের পিঠের থেকে মেরুদণ্ড বের করার সার্জারি করার চেষ্টা করলে, দুধে ময়লা পানি মেশান ঘোল ছাড়া আর কিছু পাওয়া যাবে না।
ডিসেম্বর ২৪, ২০১২
http://www.lekhalekhi.net
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।