আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুলিশের মোবাইল ফোনে কথা বলে শীর্ষ সন্ত্রাসী ও জঙ্গিরা

কারাগারে অন্তরীণ থেকেও মোবাইল ফোনে যোগাযোগ থেমে নেই বন্দীদের। মাঝে মাঝে কারা অভ্যন্তর থেকে কথা বললেও অধিকাংশ সময় আদালতে যাওয়ার সময় পুলিশের কাছ থেকে মোবাইল ফোন নিয়ে তাদের স্বজন এবং অনুসারীদের সঙ্গে কথা বলে থাকেন। আইনত কোনোরকম সুযোগ না থাকলেও পুলিশের কতিপয় সদস্য সামান্য অর্থের বিনিময়ে বন্দীদের মোবাইল ফোনে কথা বলতে দেন। কেবল মোবাইল ফোন নয়, অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে হ্যান্ডকাফ ছাড়াই স্বচ্ছন্দে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন বন্দীরা। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রবিবার ময়মনসিংহের ত্রিশালে পুলিশের প্রিজনভ্যান থেকে জামা'আতুল মুজাহিদীনের (জেএমবি) তিন জঙ্গিকে ছিনতাইয়ের আগে পুলিশের কাছ থেকে মোবাইল ফোন নিয়ে বাইরে থাকা নিজেদের অনুসারীদের দণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গিরা কথা বলেছে বলে জানা গেছে।

আর এ বিষয়টিই এখন আলোচনার ঝড় তুলেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের কাছ থেকে মুঠোফোন নিয়ে হরহামেশা কথা বলে থাকেন কারাগারে বন্দী শীর্ষ সন্ত্রাসী থেকে শুরু করে জঙ্গি, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, সাধারণ অপরাধীসহ প্রায় সব ধরনের লোকজন। এর পাশাপাশি কারাগারের ভেতরে থেকে স্পর্শকাতর মামলার অপরাধীদের অনেকেই নিজে মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। এসব অপরাধী একাধিক সিমও ব্যবহার করেন। যা কোনো অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়।

কিন্তু পুলিশকে ম্যানেজ করে স্পর্শকাতর মামলায় বন্দী এবং দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীরা কারাগারে বসে কিংবা কারাগার থেকে পুলিশের গাড়ি কিংবা প্রিজনভ্যানে করে আদালতে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের কাছ থেকে মোবাইল ফোন নিয়ে তাদের নিকটজনদের সঙ্গে কথা বলে। এ জন্য তারা পুলিশের হাতে কিছু নগদ অর্থও ধরিয়ে দেয়। এতে খুশি হয়েই পুলিশ ফোন ব্যবহার করতে দেয়। কিন্তু সেই ফোনে অপরাধীরা কার সঙ্গে কথা বলে কিংবা তাদের মধ্যে কী কথা হয় সেদিকে কর্তব্যরত পুলিশ কোনো নজরদারি রাখে না। এই নজরদারি না থাকার ফলেই গত ২৩ ফেব্রুয়ারি জেএমবির শীর্ষ সন্ত্রাসীরা তাদের সহযোগীদের সহযোগিতায় প্রিজনভ্যান থেকে পালিয়ে যায়।

এ ঘটনায় জঙ্গিদের হামলায় একজন পুলিশও নিহত হন। পরবর্তীতে পুলিশ তিন জঙ্গির একজন রাকিবকে গ্রেফতার করতে পারলেও দুর্ধর্ষ জঙ্গি সালাউদ্দিন এবং বোমা মিজান এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাদের দুজনের মাথার দাম এরই মধ্যে ১০ লাখ টাকা ঘোষণা করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরাও কারাগারে বন্দী থাকা অবস্থায় পুলিশের কাছ থেকে মোবাইল ফোন নিয়ে স্বজনদের সঙ্গে কিংবা দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে থাকি। কিন্তু পুলিশ যেভাবে সবাইকে ফোন ব্যবহারের জন্য সহযোগিতা করে সেটা বিপজ্জনক।

তিনি বলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসী কিংবা জঙ্গিদের কোনোভাবেই ফোন দিয়ে কথা বলতে দেওয়া ঠিক হয়নি। তিনি বলেন, এই বিষয়টিই সোমবারের মন্ত্রিসভা বৈঠকে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেও কীভাবে সন্ত্রাসীরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে থাকে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন একাধিক মন্ত্রী। ভবিষ্যতে যাতে কোনো পুলিশ সদস্য কোনো ধরনের অপরাধীকে মোবাইল ফোনে কথা বলতে সহযোগিতা না করেন সে জন্য কড়া নির্দেশনা দিতেও বলা হয়েছে।

ওই মন্ত্রী আরও বলেন, সন্ত্রাসীরা কারাগারে বসেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ও ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করে।

জঙ্গিরাও একই কায়দায় তাদের তৎপরতা চালায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কারাগারে বসে মোবাইল ফোনের পাশাপাশি কারাবন্দী শীর্ষ সন্ত্রাসী ও জঙ্গিরা ইন্টারনেট মডেমসহ অত্যাধুনিক ল্যাপটপ ব্যবহারের বিষয়ে বছর দুয়েক আগে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে রিপোর্ট দেয়। এতে উল্লেখ করা হয়, অপরাধীরা ডিজিটাল পদ্ধতিতে আন্ডারওয়ার্ল্ড, মাদক ব্যবসা ও জঙ্গি কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করছে। ওই গোয়েন্দা প্রতিবেদনের পর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ছয়টি জ্যামার বসায় কারা অধিদফতর। কিন্তু স্থাপনের কিছুদিন পরই জ্যামারের ফ্রিকোয়েন্সি কমিয়ে দেওয়া হয়।

একইভাবে সম্প্রতি কাশিমপুর-২ কারাগারেও দুটি জ্যামার বসানো হয়। কিন্তু সেগুলো আদৌ কার্যকর কি না তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য কারাগারে জ্যামার বসানোর কথা থাকলেও অধিকাংশ কারাগারেই সেগুলো স্থাপন হয়নি। এ ছাড়া সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে জমা পড়া গোয়েন্দা প্রতিবেদনের পর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ও কাশিমপুর কারাগারে কিছুদিন নিয়মিত অভিযান চালানো হয়। কিন্তু এখন আর সেই অভিযান পরিচালিত হয় না বলে জানা গেছে।

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.