আমি এমন এক সাধারন মানুষ হতে চাই যে অসাধারন হবার পেছনে দৌঁড়ায়না এবং বিনা প্রশ্নে কিছু গ্রহন করেনা ।
পিছন থেকে দুইজনে টেনে ধরেছে । একজনে কলার মোচড় দিচ্ছে আর অপরজনে দাঁত – মুখ খিঁচে গালি দিচ্ছে । প্রায় সব গালিই মা- বাপের যৌন সম্পর্ক স্থাপন সম্পর্কিত । যেন আর কোন মনুষ্য জীব তার পিতা – মাতার যৌথবদ্ধ যৌনতার চূড়ান্ত ফসলরুপে পৃথিবীতে আসেনি ।
ঠোঁট চাটতে গিয়ে বুঝলো কেটে রক্ত বেরুচ্ছে । রক্তই চেটে নিলো । কি আর এমন ক্ষতি রক্ত চাটলে ? প্রতিদিনই দেখে সবাই সবাইকে চাটে । ঘেঁয়ো কুকুর ডাস্টবিন চাটে , লুম্পেন দেশ চাটে , আমলা বুরোক্রেসিকে চাটে , এনজিওবাজরা এনজিওর ফান্ড চাটে , পুলিশ ঘুষ চাটে , আইনজ্ঞরা আইন – কানুন আর মোটা মোটা আইনের বই চাটে , শহুরে নাগরিক আলোকজ্জ্বল ঝলমলে শহরকে চাটে , মোল্লা মসজিদ চাটে , টকশোওয়ালারা মাইক চাটে । সর্বত্রই চাটাচাটির প্রতিযোগীতা ।
এক আশ্চর্য ধরণের চাটাচাটির তোড়জোড় মাইরী । আগে মাথায় কিছু ঢুকতোনা । এখন সব ঢোকে । বোঝে কচকচে কিছু কাগজের নোটের উপরে পৃথিবী টিকে আছে । খাওয়া , ঘুম থেকে শুরু করে সঙ্গী-সঙ্গিনীর সাথে প্রেম – ভালোবাসার নামে বিছানায় যেই শরীর চটকাচটকি চলে সবেতেই কোন না কোন ভাবে কচকচে সেই নোটের শক্তিশালী অস্তিত্ব থাকেই যাকে ভদ্র ভাষায় টাকা বলে ।
সে বলে রুপাইয়া । অভিষেক বচ্চনের কোন এক ছবির গানের ছিলো “ সাবসে বড়া রুপাইয়া “ । তারপর থেকে শব্দটা হেব্বি মনে ধরেছে । অন্যরা যখন টাকা বলে তখন তুমুল ভাব নিয়ে সে বলে রুপাইয়া । এই ভাব নেওয়ায় তার বেশ লাভ হয়েছিলো ।
বিলকিস তার মুখে “ রুপাইয়া “ শব্দটা শুনেই আপাদমস্তক পটে গিয়েছিলো । আহা কি সব দিন ছিলো সেগুলা ।
একটু দূরেই কোথায় যেন বিয়ের অনুষ্ঠানে ধুন্ধুমার নাচা – গানা হচ্ছে । মানুষজন বিয়ের অনুষ্ঠানে গেলেই আপাদমস্তক ভুলে যায় যে সে মানুষ । খাওয়ার টেবিলে বসে খাটাশের মতো , খায় শুয়োরের মতো , রেজালা – বোরহানি নিয়ে টানাটানি করে কিসের মতো সেটা ভাবতে গেলে বশীর হঠাৎই ভয়ে নিষ্ঠুর খুনীর চোখের চাইতেও শীতল হয়ে যায় ।
ভেবেছিলো দু – চারটা চড়-থাপ্পড় খেয়েই তাকে ছেড়ে দেবে । কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে আসল যে লিডার সে ইয়া মস্ত বড় ছুরি নিয়ে ঘষাঘষি করছে । চিন্তায় আরো একবার রক্তে ভেজা নোনতা ঠোঁট চেটে নিলে ছুরি হাতে সেই লোক তার আরো সামনে চলে এলো । এদিকে অদূরে বিয়েবাড়িতে নাচ-গানের আওয়াজ ক্রমশ বাড়তে বাড়তে কানের পর্দা ফাটিয়ে নেবে এমনটা মনে হতে থাকলো বশীরের । নাকি তারই সবকিছু গোলমাল হয়ে আসছে ধীরে ধীরে ?
হঠাৎ চোখের সামনে তীব্র আলোর ঝলকানিতে তার সামনে পিছের প্রত্যেকের চোখ ঝলসে গেলো ।
বশীর মনে করতে পারেনা কি ঘটে গেছে । কিন্তু তাকে ধরে রাখা মানুষগুলো থেকে শুরু করে ছুরিওয়ালা প্রত্যেকেই দূরে ছিটকে পড়েছে । বশীর মুহূর্তের দুর্বলতায় ভেবেছিলো আসমানের উপরের আল্লাহ বুঝি তাকে বাঁচাতে মানুষরুপে ফেরেশতা পাঠিয়েছে । মাইক্রোতে টানাহ্যাচড়া করে তাকে ঢোকানোর পরে যখন তার ভুল ভাঙ্গে ততক্ষণে বড্ড দেরী হয়ে গেছে । অচেনা বশীরকে ব্যবহার করেই তারা তাদের সুবিধামতো অনেক জায়গায় টোপ ফেলতে চায় এটা বোঝার পর বশীর বুঝলো শেষ মুহূর্তে মায়ের মুখটা মনে করতে না পারলে এই জীবনে আর তার মুখ চোখের সামনে ভেসে উঠবেনা ।
কি আশ্চর্য !!!!!! মিনিট বিশেক পর সেই মাইক্রো যখন সেই স্থানেই ফিরে এসে বশীরের লাশ ফেলে দিয়ে গেলো ততক্ষণে বিয়েবাড়ীর অতিথিদের জনা দুয়েক যারা ভালো পর্যবেক্ষক তারা বশীরের লাশ দেখতে পেয়ে তা নিয়ে তুলকালাম বাঁধিয়ে মজা দেখতে লাগলো । যেন গলা – পেট ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া যেই লাশ তাদের চোখে পড়েছে সে তাদের অনন্তকালের চেনা ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।