প্রজন্ম শব্দের অর্থ জন্ম থেকে জন্মান্তর । অর্থাৎ পূর্ব পুরুষ , বর্তমান পুরুষ ও উত্তর পুরুষ । তাও পূর্ব পুরুষ থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত কোন সম্পদ ভোগ করলে বা কার্য সম্পাদন করলে তাকে প্রজন্ম হিসেবে চিহ্নিত করা হয় । সেই হিসেবে আন্দোলন সংগ্রামকে যদি একটি কার্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয় তবে পূর্ব পুরুষের সাথে সম্পর্কবিহিন শাহবাগের গনজাগরন মঞ্চের আন্দোলন যেখানে সংঘটিত হয়েছিল সেই জায়গাকে কেন প্রজন্ম চত্বর নাম দেয়া হোল তার ব্যাকারন গত ব্যখ্যা আমার জানা নেই । ধরে নিলাম এই গনজাগরন মঞ্চ একটি সম্পদ বা কার্য এবং ভবিষ্যৎ বা উত্তর পুরুষের জন্য উদাহরণ হিসেবে রেখে যাওয়া হয়েছে ।
কিন্ত আন্দোলন সংগ্রাম তো কোন সম্পদ নয় যে উত্তর পুরুষের জন্য তা রেখে যাওয়া যায় । আন্দোলন সংগ্রাম একটি চেতনা থেকে উৎপত্তি হয় । আর সম্পদ হলেও তা ইতিহাসের সম্পদ । কোন ব্যাক্তি বা গোষ্ঠীর সম্পদ নয় যা উত্তর পুরুষরা উত্তরাধিকার সুত্রে পাবে ।
রাজনৈতিক চেতনা বরাবরই আপেক্ষিক ।
ব্রিটিশদের কাছ থেকে ভারতকে স্বাধীন করার সময় রাজনৈতিক চেতনা ছিল একরকম । আবার ভারত পাকিস্তান ভাগ হওয়ার রাজনৈতিক চেতনা ছিল আর এক রকম । মুক্তিযুদ্ধ চেতনা তার থেকে ভিন্ন । ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন এর চেতনা এখন ইতিহাস এর রাজনৈতিক শিক্ষণীয় বিষয় । ভারত ও পাকিস্তান ভাগ হওয়ার চেতনা দ্বি-জাতি ত্বত্বের চেতনা যা অনেকটা সম্প্রদায়িক ।
রাজনীতির ভিন্ন ভিন্ন সময়ে যে চেতনারও পরিবর্তন হয় মুক্তিযুদ্ধ তার অন্যতম প্রমান । মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে যে চেতনা তৈরি হয়েছিল পূর্বের সমস্ত রাজনৈতিক আদর্শই সেখানে বিলিন ও বিতারিত হয়েছিল । রাজনৈতিক চেতনা নির্ধারিত হয় সেই সময়ের সামাজিক ও অর্থনীতির চাহিদার উপর । সেই চাহিদা যখন পরিবর্তন হয় তখন রাজনৈতিক চেতনারও পরিবর্তন হয় । সমাজ যেহেতু পরিবর্তনশীল ও প্রগতিশীল কাজেই রাজনৈতিক চেতনাও পরিবর্তনশীল ও প্রগতিশীল ।
সমাজ ও রাজনৈতিক চেতনাকে কখনও এক জায়গায় রাখা যায় না । যারা রাখার চেষ্টা করে তারা সমাজের প্রগতিশীলতার বিপক্ষে অবস্থান নেয় । সমাজ সাম্প্রদায়িকতাকে গ্রহন করে না তারপরও রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িকতার চরম ব্যবহার দেখা গিয়েছে ১৯৪৭ সালে ১৯৬৫-৬৬ সালে । রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িকতার ব্যবহার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয় । সেই সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সমাজ প্রগতির বিপরীতে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থে ।
যারা সমাজ ও রাজনীতিকে এক যায়গায় থামিয়ে রাখতে চায় তারাও নিজেদের স্বার্থে তা করতে চায় । সমাজ প্রগতির স্বার্থে নয় ।
ইদানিং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কথাটি রাজনীতিতে খুব বেশি ব্যবহার হচ্ছে । মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হচ্ছে স্বাধীনতার আখাংকার চেতনা । ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত এই চেতনায় রাজনীতি সংগঠিত হয়েছিল ।
মুক্তিযুদ্ধ এই দেশের মানুষের কাছে সম্মানের ও গৌরবের একটি ঐতিহাসিক অধ্যায় । এই গৌরবকে গৌরবের সাথে ইতিহাসে স্থান দেয়া এই প্রজন্মের করনীয় কাজ । বর্তমান প্রজন্ম দেশ গড়ার রাজনীতি করবে । রাজনীতি পরিচালিত হবে দেশ গড়ার অবস্থান থেকে । ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি রাজনৈতিক কর্মসূচী ।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সেই কর্মসূচির বাস্তবায়ন ও সমাপ্ত হয় । স্বাধীন বাংলাদেশ গঠন হচ্ছে ১৯৭১ পরবর্তী রাজনৈতিক কর্মসূচী । তা না করে আজ ৪৩ বছর পরও দেশ গড়ার রাজনীতি এখানে অনুপস্থিত । অনুপস্থিত বিধায় বিভিন্ন রাজনৈতিক অপশক্তি মাথা চারা দেয়ার সুযোগ পায় । জঙ্গিবাদ তেমনই একটি রাজনৈতিক অপশক্তি ।
দেশের অর্থনীতির গতি প্রবাহ তরান্বিত থাকলে দেশের জনগণ কখনও কোন রাজনৈতিক অপশক্তিকে প্রশ্রয় দেয় না । প্রশ্রয় দেয় তখনই যখন জনগণ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভাবে একটি হতাশাজনক পরিস্থিতিতে অবস্থান করে । বাংলাদেশ ধীর গতিতে হলেও একটি গতিশীল অর্থনীতির দেশ । এই গতিকে আরও তরান্বিত করতে পারলে জনগণ সকল রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রকে মোকাবেলা করে বেড়িয়ে যাবে ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।