আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুলিশের সোর্সদের নিয়ন্ত্রণে মাদক ব্যবসা

থানা পুলিশের সোর্সেরা নিয়ন্ত্রণ করছেন রাজধানীর মাদক ব্যবসা। পুলিশের পরোক্ষ সহযোগিতা থাকায় একরকম প্রকাশ্যে চলছে মাদক বিকিকিনি। পাড়া-মহল্লায় ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক ব্যবসা এখন জমজমাট। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, থানার সোর্সেরা আসামি ধরার নামে পুলিশের সঙ্গে গাড়িতে ঘুরে বেড়ান। যে কারণে সোর্সরূপী মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় মাদকের এখন ছড়াছড়ি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, অপরাধী গ্রেফতারে নানা তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহযোগিতা করাই সোর্সের কাজ। পুলিশ এসব সোর্স নিয়োগ করে অপরাধীদের মধ্য থেকেই। বিনিময়ে তারা অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা পায়। কিন্তু সোর্সেরা অপরাধী ও মাদক ব্যবসায়ীদের ধরিয়ে দিয়ে নিজেরাই ব্যবসা শুরু করছেন। এরা মাঝেমধ্যে বিরোধী গ্রুপের দু-চার জনকে গাঁজা, ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ ধরিয়ে দিয়ে নিজেদের ব্যবসা নিরাপদ রাখেন। ডিএমপির ৪৯ থানার কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তার ছত্রছায়ায় রাজধানীজুড়ে মাদকের স্পট তৈরি হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, যাত্রাবাড়ী, মতিঝিল, লালবাগ, চকবাজার, কামরাঙ্গীরচর, মিরপুর, ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, হাজারীবাগ, খিলগাঁও, সবুজবাগসহ বিভিন্ন এলাকার সোর্সেরা সরাসরি মাদক ব্যবসায় জড়িত। পুলিশের গাড়িতে চলাফেরার কারণে তাদের বিরুদ্ধে মানুষ ভয়ে মুখ খোলে না। পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারে সাধারণত পুলিশের সোর্স প্রয়োজন হয়। এ জন্য পুলিশের নিয়মিত বাজেটের একটা বড় অংশ সোর্সমানি হিসেবে বরাদ্দ রয়েছে। তবে এ সোর্সমানির টাকা কখনো সোর্সদের দেওয়া হয় না। তারা এলাকায় পুলিশের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা করেই তাদের পাওনা পুষিয়ে নেন। আর এ কারণে সোর্সেরা কখনো ওই টাকা দাবিও করেন না।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় জানান, সোর্সদের বিরুদ্ধে অভিযোগ শুনেছি। এদের বিরুদ্ধে ব্লাকমেইলিং থেকে শুরু করে নানা ধরনের অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। তবে সুনির্দিষ্টভাবে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হলে বিষয়টি অবশ্যই দেখা হবে। অনুসন্ধানে জানা যায়, যাত্রাবাড়ী-সায়েদাবাদের ফেনসি সম্রাজ্ঞী রাশেদা। তার পরিবারের সবাই ফেনসিডিল ও ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তাদের একটি মাদক চক্র রয়েছে। এ চক্রের সদস্যরা হলেন খোকা, আলমগীর ও জাহাঙ্গীর। এরা সবাই মাদক সেবক ও বিক্রেতা। প্রতিনিয়ত তারা মাদক ব্যবসার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। সন্ধ্যার পর এদের তৎপরতা বাড়ে। রাতে গ্রাহকরা ভিড় করে রাশেদার বাসায়। এ বিষয়ে কেউ প্রতিবাদ করলেই তাদের ওপর নেমে আসছে নির্যাতনের খড়গ। এ ছাড়া ছিনতাইকারী চক্রের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ী খোকা, মতিয়ার ও হাকিম জড়িত বলে জানা গেছে। রাশেদাসহ তার গ্রুপের সবাই পুলিশের সোর্স হিসেবে ওই এলাকায় কাজ করছেন। পুলিশকে তারা নিয়মিত মাসহারা দিয়েই এসব কাজ করছেন বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

গত ২৯ নভেম্বর সাভার পৌর এলাকার মধ্যগেন্ডায় আবদুর রশিদ নামে এক সোর্সকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। নিহতের বোন অাঁখি জানান, রশিদ এলাকায় জ্বালানি কাঠ ও ডাব বিক্রির পাশাপাশি থানা ও ডিবি পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করতেন। মাঝেমধ্যে এলাকার খারাপ ছেলেরা তার কাছে আসা-যাওয়া করত। তার কাজে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন লোকেরাই এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে। ২৪ নভেম্বর সবুজবাগে মিজানুর রহমান ও আমানুল্লাহ নামে পুলিশের দুই সোর্সকে পিটিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে আহত করে মাদক ব্যবসায়ীরা। সোর্স মিজানুর রহমান জানান, ওই এলাকার ফেনসিডিল ব্যবসায়ী আল আমিন ও জাহাঙ্গীরকে চার-পাঁচ বোতল ফেনসিডিলসহ এএসআই উদয়ন বড়ুয়ার কাছে ধরিয়ে দেন। তবে ওই দিনই উদয়ন বড়ুয়া টাকার বিনিময়ে তাদের ছেড়ে দেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। তারাই পিটিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে তাদের জখম করে। সবুজবাগ থানার এসআই মসিউর রহমান জানান, তারা দুজনই সবুজবাগ থানায় পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.