আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘দুর্যোগ মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়াতে হবে’

বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে উষ্ণমণ্ডলীয় সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের ওপর বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) এবং জাতিসংঘের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন (এসক্যাপ) প্যানেলের ৪১তম অধিবেশন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

ফাইল ছবি

শেখ হাসিনা বলেন, “আবহাওয়া কোনো রাজনৈতিক অথবা ভৌগোলিক সীমারেখা মেনে চলে না। তাই বিশ্বব্যাপী দুর্যোগ প্রশমনে আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য বিনিময়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ”

দক্ষিণ-পশ্চিম মওসুমী বায়ুর জটিল ও বিরূপ আচরণ মোকাবেলায় দীর্ঘমেয়াদি ঋতুভিত্তিক পূর্বাভাস আরো সঠিক ও বিজ্ঞানসম্মতভাবে দিতে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাংলাদেশ যৌথভাবে কাজ করছে।

রোববার সকালে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার আন্তর্জাতিক উদ্যোগের সঙ্গে সমন্বয় করে জাতীয় পর্যায়ে আরো কার্যকর ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

“যদিও প্রাকৃতিক দুর্যোগ রোধ করা যায় না, তবে সময়োপযোগী নির্ভুল আগাম পূর্বাভাস ও সতর্কবাণী প্রদান এবং পর্যাপ্ত প্রস্তুতির মাধ্যমে দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।

উষ্ণমণ্ডলীয় সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় বিষয়ে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা এবং জাতিসংঘের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন প্যানেল সমন্বয় করায় এ অঞ্চলের জনসাধারণ ইতিমধ্যে অনেক সুফল পেয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বিদ্যমান পূর্বাভাস, সতর্কীকরণ ও দুর্যোগ প্রশমন ব্যবস্থার উন্নতি করতে প্রথাগত ব্যবস্থাকে আধুনিক প্রযুক্তিতে উন্নীত করার তাগিদ দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

সুনামির জন্য পূর্ব সতর্কীকরণ ব্যবস্থা স্থাপনে আন্তর্জাতিক উদ্যোগের সঙ্গে ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের সম্পৃক্ত হওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, একই সঙ্গে তথ্য বিনিময় এবং দুর্যোগের পূর্বাভাস ও সতর্কবাণী দিতে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের দক্ষতা বাড়াতে তার সরকার বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্প শেষ করেছে।

জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা জাইকার আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় কক্সবাজার, খেপুপাড়া ও মৌলভীবাজারে অত্যাধুনিক তিনটি ডপলার রাডার স্থাপনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জাইকার সহায়তায় খুব শীঘ্রই ঢাকা ও রংপুরে বিদ্যমান রাডার দুটি অত্যাধুনিক ডপলার রাডার দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে।

নৌ-দুর্ঘটনা কমাতে একটি প্রকল্প নেয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এটি বাস্তবায়িত হলে আগাম পূর্বাভাস প্রদানের মাধ্যমে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সৃষ্ট নৌ-দুর্ঘটনা ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। ”

অত্যাধুনিক গাণিতিক মডেল পরিচালনার জন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটার ও ডিজিটাল পর্যবেক্ষণাগার স্থাপনের লক্ষ্যে ‘নিউমেরিক্যাল ওয়েদার প্রেডিকশন স্থাপন’ প্রকল্পের বাস্তবায়ন চলছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

“অচিরেই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে এবং এর মাধ্যমে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর অধিকতর আগাম এবং অঞ্চলভিত্তিক পরিমাণগত আবহাওয়ার পূর্বাভাস প্রদানে সক্ষম হবে,” বলেন তিনি।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের কৃষি আবহাওয়া সংক্রান্ত কার্যক্রমকে শক্তিশালী করতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সাতটি কৃষি-আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আরো পাঁচটি স্বয়ংক্রিয় আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার স্থাপন বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, “এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে নেটওয়ার্কিংসহ অটোমেটিক ওয়েদার স্টেশন স্থাপনের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আবহাওয়ার উপাত্ত সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। ”

আবহাওয়ার পূর্বাভাস ও সতর্কবাণী দ্রুত প্রচারের লক্ষ্যে গণমাধ্যমের পাশাপাশি মোবাইল ফোনেও আবহাওয়া পূর্বাভাস পাওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এ সকল কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণহানির সংখ্যা এবং সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। ”

এই অধিবেশনে অংশগ্রহণকারী প্যানেলের আবহাওয়া বিজ্ঞানী এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞদের আলোচনা থেকে সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকি কমাতে বিভিন্ন সুপারিশ এবং নতুন বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতিগত ধারণা বেরিয়ে আসবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।

বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগর বিশ্বের অন্যতম ঘূর্ণিঝড় প্রবণ অঞ্চল। এ কারণে থাইল্যান্ড থেকে ওমান পর্যন্ত উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ৫০ কোটি মানুষের জীবন ও সম্পদ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

বিশেষ ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে দক্ষিণ-এশিয়া ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে পড়ে।

বাংলাদেশে ১৯৭০ ও ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়, ১৯৯৯ সালে ভারতের উড়িষ্যার সুপার সাইক্লোন, ২০০৮ সালে মিয়ানমারের ঘূর্ণিঝড় ’নার্গিস’-এর মত প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ধ্বংসলীলা এবং ব্যাপক প্রাণহানি ঘটনা এখনো মানুষের মনে ভীতি জাগায়।

অনুষ্ঠানে অন্যদের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব খন্দকার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ শাহ আলম, বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার উষ্ণমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় কর্মসূচি বিভাগের প্রধান তাওইয়ং পেং এবং উষ্ণমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় প্যানেলের সচিব ও পাকিস্তান আবহাওয়া বিভাগের মহাপরিচালক আরিফ মাহমুদ এবং এসক্যাপের প্রতিনিধি কেরান ওয়াং বক্তব্য দেন।


সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.