অদ্ভূত বিষয়গুলোতে বিস্ময়াভূত হওয়া একটি চমকপ্রদ ব্যাপার!! প- এ পায়েল, প-এ পায়েল
পর্ব তিন পেতে এই লিংকে ঢুঁ মারেন, আর এগোন আমাদের সাথেই
৫।
বারান্দায় বসে আতাউর সাহেব পান খাচ্ছেন। রসু তাঁর পাশেই দাঁড়ানো। তিনি মাত্রই মুখে দিলেন পান। রসু অপেক্ষা করছে পান চিবিয়ে কখন তিনি পিক ফেলবেন।
কেননা পিক ফেলার পর পরই আতাউর সাহেব কথা বলবেন, এর আগে না। আতাউর সাহেব আরাম করে পান খাচ্ছেন। কোন তারাহুড়া নেই। রসু বসে বসে তাঁর পান চিবানো দেখছে। বেশ আয়েশ করে পান খওয়ার পর আতাউর সাহেব কথা বললেন,
বুঝলা রসুমিয়া? মেয়ের বাপ হওয়া হচ্ছে সবচেয়ে চিন্তার বিষয়।
সারাক্ষনের টেনশন।
জ্বি ভাইসাব।
তুমি কেমনে বুঝবা? জীবনে তো বিয়ে থা করো নাই। মেয়ের বাপ হওয়া তো দূরে থাক।
রসু একগাল হাসে।
হঠাৎ আতাউর সাহেবের কি মনে হয়, তিনি ঘাড় ফিরিয়ে রসুমিয়াকে আগা গোড়া দেখেন। তারপর আবার পান চিবোতে মনোযোগ দেন। পান চিবুতে চিবুতে বলেন,
রসুমিয়া তোমার বয়স কত?
রসু ভ্যবাচ্যাকা খেয়ে যায়। কেউ কখনো ওর বয়স জিজ্ঞেস করেনি। রসুমিয়া যেন কিছু একটা আন্দাজ করতে পারে।
একটু চিন্তা করে বলে, এই চল্লিশ।
চল্লিশ বছর বয়স তোমার না রসুমিয়া।
বেশি হইলে পয়তাল্লিশ। এর বেশি হবেই না ভাইসাব।
আতাউর সাহেব রসুর বিচক্ষণতা দেখে হাসলেন।
রসু তাঁর মনের খবর ঠিক ধরে ফেলেছে, তা না হলে বয়স লুকানোর চেষ্টা করবে কেন সে। আতাউর সাহেব ঠিক করলেন সরাসরি রসুকে জিজ্ঞেস করবে। তাঁর বাড়িতে থাকে রসুমিয়া, এটা তাঁর দ্বায়িত্বের মধ্যে পরে! শুধু দ্বায়িত্বটা বুঝতে একটু দেরি হয়ে গেল আরকি। আতাউর বললেন, রসুমিয়া, আমি তোমার বিয়ে দিব। পাত্রী পছন্দ থাকলে সরাসরি বলো, কোন প্রকার গড়িমসি আমার পছন্দ না।
রসুমিয়া চমকে উঠল। খুশিতে তাঁর মন গদগদ অবস্থা। তবু অনেক কষ্টে হাসি চেপে রেখে বলল, পূবপাড়ার রসিদ মিয়ার মেয়ে, বেশ ডাঙ্গর হইছে। সুন্দরীও।
মেয়ের বয়স কত?
বিশ তো হবেই।
তোমার তাদের বাড়িতে যাওয়া আসা আছে?
মাঝে মধ্যে যাই।
মেয়ে তোমারে পছন্দ করে?
মেয়ের কথা জানি না, মেয়ের বাপ খুব পছন্দ করে।
মেয়ে বিয়ে দিবে তোমার কাছে?
ভাইসাব আপনি বললে, নিশ্চই দিবে।
হুম করে একটা শব্দ করে আতাউর। রসুমিয়ার দিকে একবার দেখে তিনি উঠে পড়লেন।
বললেন, খবর পাঠাও। আমি যাব।
কাজলের কাছে পরতে যাবার সময় কুসুম আর রবিকে ডেকে রেহানা বেশ কিছু কথা বললেন। মন খারাপ করে কুসুম আর রবি কাজলের ঘরে যায়। কাজল খাটে শুয়ে ছিল।
ওদের দেখে উঠে পড়ে। পড়াতে বসার আগে সবসময় কাজল ওদের খবরাখবর নেয়। সারাদিন কেমন কাটল, কে কি করল এসব। আজ কাজল খেয়াল করে দু ভাইবোনের-ই মন খারাপ। মুখ কালো করে বসে আছে দুজন।
কাজল ভ্রু নাচালো। বলল, কি হয়েছে তোমাদের?
রবি একবার কুসুমের দিকে তাকালো। কুসুম কোন কথা বলছে না দেখে নিজেই উত্তর দিল রবি, আমাদের মন খারাপ।
সেটা তো দেখেই বোঝা যাচ্ছে, কিন্তু কেন মন খারাপ?
কুসুম চুপচাপ বই খুলল। ওর দেখাদেখি রবিও বই খুলল।
কাজলও আর কথা বাড়ালো না। পড়াতে শুরু করল ওদের।
পায়েল ছাদে হাটাহাটি করছে। হাতে ওর একটা বই। ছাদে বসে পরবে বলে নিয়ে এসেছিল ও।
কিন্তু পড়ায় ঠিক মন বসাতে পারছে না পায়েল। মায়ের কাছে শুনেছে রসুচাচা নাকি বিয়ে করছে। পায়েলের চেয়েও ছোট্ট একটি মেয়েকে। মেয়ের বাবা গরীব। আতাউর সাহেব প্রস্তাব দেওয়ায় খুশি মনেই নাকি তারা বিয়ে দিবে বলে রাজী হয়েছে।
পায়েল ব্যাপারটা মেনে নিতে পারছে না। রসু চাচা যথেষ্ঠ বয়স্ক লোক। বিয়ে করবে না তা বলছে না পায়েল, বিয়ে করুক তবে তাঁর সাথে মানানসই একজনকে। এত ছোট একটা মেয়েকে বিয়ে করে তাদের বাড়িতেই নিয়ে আসা হচ্ছে ভেবে মন অশান্ত হয়ে উঠেছে ওর। সমস্ত রাগ গিয়ে পরল ওর বাবার ওপর।
বাবা-ই বা কেমন মানুষ বয়সের তফাতটা একবারও ভেবে দেখল না!
পড়া শেষে কুসুম-রবি চলে যাওয়ার জন্য বেড়িয়ে পড়ছিল। কাজল ওদের ডেকে দাঁড় করালো। টেবিল থেকে একটা বই নিয়ে কুসুমের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, এই বইটার নাম পঞ্চতন্ত্র। সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখা। রম্যরচনাঢ় বইটি পড়লে যে কারোরই ভাল লাগবে।
বিশেষ করে হাসি পাবে। তোমরা মন ভাল করার জন্য পড়তে পারো।
এই কথা শুনে রবি ও কুসুমের মুখ হাসি হাসি হয়ে গেল। বইটা হাতে নিয়ে দেখল একবার। কাজল আবারও বলল, তবে তোমরা বইটা বুঝবে না, তাই এটা তোমাদের বুবুকে দিবে।
বুবু নিশ্চই সুন্দর করে বুঝিয়ে বুঝিয়ে তোমাদেরকে পড়ে শুনাবে।
কুসুম ও রবি একবার একে অন্যের দিকে তাকালো। তারপর কুসুম বইটা কাজলের হাতে ফেরত দিয়ে বলল, বইটা বুবুকে দেওয়া যাবে না।
কাজল বেশ অবাক হল। বলল, কেন?
কুসুম আর রবি আবারও একে অন্যের দিকে তাকালো।
রবি বলল, মা মানা করেছে।
কুসুমও বলল, মা বলেছে আপনার সাথে বুবুকে নিয়ে কোন কথা না বলতে। আর আপনিও যাতে বুবুকে নিয়ে কোন কথা না বলেন। আপনি বুবুকে বই দিয়েছেন। মা বলেছে আর কখনো কিছু না দিতে।
কাজল ভ্যাবচ্যাকা খেয়ে গেল। কি বলবে ঠিক বুঝতে পারছে না ও। কিছুক্ষন ওদের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, আচ্ছা ঠিক আছে।
কুসুম আর রবি চলে গেল। কাজল ওদের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।
ওরা বাড়ির ভিতরে ঢুকে পরলে কাজলের চোখ গেল পায়েলের জানালার দিকে। জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে ঠিক ওর দিকেই তাকিয়ে আছে পায়েল। কাজল মাটির দিকে তাকালো। তারপর ভিতরে চলে গেল।
বাড়ি জুরে হৈচৈ।
কুসুম আর রবি দৌড়ে পায়েলের ঘরে এল। উত্তেজনায় ওদের মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। খুশিতে দুজনেই গদগদ। কুসুম প্রায় চিৎকার করে বলল, বুবু বুবু, তারাতারি নিচে আসো। রসুচাচা বউ নিয়ে এসেছে।
রসুচাচার বউ দেখবা আসো আসো। বলেই দৌড় দিল ওরা। ওরা না জানালেও পায়েল বুঝতে পারতো যে বউ নিয়ে এসেছে রসুচাচা। কেননা পুরো বাড়িতে হৈচৈ ওর কানেও আসছে। খুব আয়োজন করেই বধূ বরণ চলছে।
সবচেয়ে বেশি শোনা যাচ্ছে মায়ের গলা। মা এই বিয়েতে এত খুশি দেখে মায়ের ওপরও রাগ হল খুব পায়েলের।
বধূ নিয়ে রসুমিয়া ঘরে গেল। বাড়ি এখন মুটামুটি শান্ত। কুসুম ও রবি পায়েলের ঘরে বসে রসুমিয়ার বউ নিয়ে গল্প করছে।
কুসুম বলল, জানো বুবু, বউটা না কি সুন্দর।
রবি সাথে বলল, বুবুর চেয়ে সুন্দর না। বুবু বেশি সুন্দর।
পায়েল এ কথা শুনে রবির গাল টিপে দিল। বলল, ধুর বুদ্ধ।
তুই সুন্দরের কি বুঝিস? পায়েল কুসুমকে জিজ্ঞেস করল, বউ খুশি ছিল কুসুম?
কুসুম উচ্ছসিত হয়ে বলল, ভীষণ খুশি।
বউ দেখতে কে কে ছিল জানতে চায় পায়েল। কাজলের কথা তো এভাবে জিজ্ঞেস করা যায় না তা ও ভাল করেই জানে। কুসুম একে একে সবার কথা বলতে থাকে। কাজলের কথা বলে না।
পায়েল ভাবে, কাজলও কি তাহলে ওর মত এই অসম বিয়ের বিপক্ষে? মনে মনে খুশি হয় পায়েল।
বউ নিয়ে রসুমিয়া ইদানিং ঘরের ভিতরেই থাকে। একবার ডেকে সহজে তাঁকে পাওয়া যায় না। আতাউর সাহেব ব্যাপারটা ভালভাবেই নেয়। ভাল্ভাবে নিতে পারেনা রেহানা।
রসুমিয়াকে ডেকে কিছু কথাও শুনিয়ে দেন তিনি। বলেন, কি রসুমিয়া? বিয়া করছো তো সপ্তাহ গড়াইয়া গেল। এখনো বউয়ের গায়ের গন্ধের মায়া যায় নাই? কাজ কামে মন দাও। নতুন বিয়া করছো বলে তো আর সব দিক দিয়া ছাড় পাবা না। তোমার ভাইসাবের কি লাগে না লাগে একটু খেয়াল করো।
ঈদ চাঁদে সরকারি ছুটি থাকে তিনদিন। আর তুমি বিয়া উপলক্ষ্যেই তো সপ্তাহখানেক ছুটি কাটাইয়া দিলা।
রসুমিয়া কাচুমাচু মুখে তাকিয়ে ছিল। এতক্ষনে কথা বলল সে,
জ্বি ভাবিসাব। আমি কাজে মন দিতেছি।
বউ আজকে বাপের বাড়ি যাবে। ওকে ঐ বাড়িতে রেখে এসেই আবার কাজ ধরব। তয় ভাবিসাব আরেকটা কথা।
রেহানা রসুর দিকে তাকায়, বলো।
ভাবিসাব ঘরে আমার জোয়ান বউ, পাশেই থাকে জোয়ান মাস্টার।
যদি মাস্টারের ঘরটা পাল্টায় দিতেন, নইলে আমার ঘরটা... এই বলে থামে রসুমিয়া। কেননা সে খেয়াল করে রেহানা ভীষণ বিরক্তি নিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। রেহানা রসুকে চলে যাতে বলে। রসু রেহানার ঘর থেকে বের হয়ে আবার নিজের ঘরেই ঢোকে। আর কাজ!
চলবে.........[/sb
পঞ্চম পর্ব পড়ুন এখানে
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।