আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

২০১৫ সালেই এমডিজি অর্জন হবে...



জাতিসংঘের মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল এমডিজি বা সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে। আগামী ২০১৫ সালের মধ্যেই সবগুলো টার্গেট পূরণের পথে রয়েছে বাংলাদেশ। দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিশু মৃত্যুহার হ্রাস, শিক্ষা ও খাদ্য নিরাপত্তায় কয়েকটি লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতিও পেয়েছে। প্রতিটি লক্ষ্য পূরণে এক বা একাধিক লক্ষ্যমাত্রা ও সূচক রয়েছে। সব মিলিয়ে ২১টি লক্ষ্যমাত্রা এবং ৬০টি সূচক আছে, যা দিয়ে এমডিজি অর্জনের সাফল্য পরিমাপ করা হয়।

এর মধ্যে ৩৪টি সূচকে পরিমাণগত লক্ষ্য আছে। বাংলাদেশ শুরুর কয়েকটি বছর এমডিজি অর্জনে পিছিয়ে পড়লেও বিগত পাঁচ বছরে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে দেশটি এগিয়েছে। এমডিজিতে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রাগুলো অধিকাংশই হয় অর্জিত হয়েছে, নয় অর্জনের পথে রয়েছে। এলডিসি তো বটেই, বিশ্বের অনেক উন্নয়নশীল দেশকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ এমডিজি অর্জনে এগিয়ে আছে।
সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এমডিজির আটটি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে বাংলাদেশ পুরো বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিতে সক্ষম হবে।

তবে এ ক্ষেত্রে জামায়াত-শিবিরের সহিংসতা বন্ধ এবং কয়েকটি মৌলিক ইস্যুতে সরকার ও বিরোধী দলের সমঝোতা জরুরি বলে মনে করা হচ্ছে।
জানা গেছে, বিশ্বের অনেক উন্নয়নশীল দেশকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ এমডিজি লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে আছে। লক্ষ্যগুলো অর্জনে ইতোমধ্যে নয়টি সূচকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। আরও ১০টি সূচকে অর্জন লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি রয়েছে। এ সাফল্যে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে তিনটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেছে।

দারিদ্র্য বিমোচনে এমডিজির লক্ষ্যমাত্রা চলতি বছরের মধ্যে পূরণ হবে বলে বলে আভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। আন্তর্জাতিক এ ঋণদাতা সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৯০ সালে বাংলাদেশের ৫৭ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে ছিল। এমডিজি অনুযায়ী ২০১৫ সাল নাগাদ তা কমিয়ে ২৮ দশমিক ৫ শতাংশে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে গত এক দশকের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বিশ্বব্যাংক মনে করছে, নির্ধারিত সময়ের দুই বছর আগেই চলতি বছরের শেষ নাগাদ এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ পোভার্টি এ্যাসেসমেন্ট শীর্ষক এক প্রতিবেদনে সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক এ তথ্য প্রকাশ করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত এক দশকে ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ধারাবাহিকভাবে কমে এসেছে। ২০০০ সালে যেখানে দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ছিল ৬ কোটি ৩০ লাখ, ২০০৫ সালে তা কমে সাড়ে ৫ কোটি এবং ২০১০ সালে তা আরও কমে ৪ কোটি ৭০ লাখে নেমে এসেছে। এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার এ দুটো লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশ সঠিক পথেই রয়েছে।
বিশ্বব্যাংক বলছে, প্রধানত দুটি কারণে বাংলাদেশ এ সফলতা অর্জন করেছে।

এর একটি হলো মজুরি বৃদ্ধি। সরকারি-বেসরকারি সব ক্ষেত্রেই শ্রমের মজুরি বেড়েছে গত এক দশকে। আর জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমে এসে নির্ভরশীল লোকের সংখ্যা কমে যাওয়াও এ সাফল্যের একটি কারণ। আগে যে পরিবার মাত্র একজন লোকের ওপর নির্ভরশীল ছিল, সেই পরিবারে এখন উপার্জনক্ষম লোকের সংখ্যা একাধিক হয়েছে। এতে বলা হয়, ২০০০ সালে দেশের মোট দরিদ্র মানুষের মধ্যে ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ সুবিধা পেত।

দশ বছর পর ২০১০ সালে এ সংখ্যা বেড়ে ২৮ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়ায়। এখন এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি।
আওয়ামী লীগ এবারও তাদের নির্বাচনি ইশতেহারে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। আগামী ২০২১ সাল নাগাদ দারিদ্র্যের অনুপাত ১৩ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও এমডিজি অর্জনের প্রথম ধাপ পূরণে এগিয়ে থাকায় বাংলাদেশ পুরস্কৃত হয়েছে।

বিশ্বখাদ্য ও কৃষি সংস্থা(এফএও)-এর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়েছে। দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বাংলাদেশের বিশেষ ভূমিকার স্বীকৃতি প্রদান করতে পেরে এফএও সম্মানিত বোধ করছে। ৩৮টি দেশ ক্ষুধার বিরুদ্ধে যুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে নির্ধারণ করা মানদ- অর্জনে সক্ষম হয়েছে। এ মানদ- আগামী ২০১৫ সালের মধ্যে অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এ ছাড়াও জাতিসংঘের অন্যান্য লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ এগিয়ে আছে।

এর আগে শিশুমৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে এমডিজি-৪ অর্জনে এগিয়ে থাকায় বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্যমাত্রার এমডিজি-২-এর ক্ষেত্রে ২০১১ সালের মধ্যেই প্রায় ৯৫ শতাংশ শিশুকে প্রাইমারি স্কুলে পাঠানো নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। লিঙ্গসমতা ও নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে এমডিজি-৩ অর্জনের পথে আছে বাংলাদেশ। মাতৃস্বাস্থ্য উন্নয়নে এমডিজি-৫ আগামী ২০১৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ সফল হবে বলে গত বছর এক ঘোষণায় আশা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।
উল্লেখ্য, ১৩ বছর আগে ২০০০ সালে জাতিসংঘের সহস্রাব্দ সম্মেলনে উন্নয়নের একটি বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয় যা, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এমডিজি হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত।

আগামী ২০১৫ সালের মধ্যে জাতিসংঘের সদস্য সব দেশ এমডিজির আটটি লক্ষ্যমাত্রা পূরণে একমত হয়। এগুলো হচ্ছে-চরম দারিদ্র্য ও ক্ষুধা বিমোচন অর্ধেকের বেশি কমিয়ে আনা, বিশ্বব্যাপী প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা, লিঙ্গবৈষম্য দূর করে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা, শিশু মৃত্যুহার কমিয়ে আনা, মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়ন, এইডস-ম্যালেরিয়া দূর করা, পরিবেশের ভারসাম্য নিশ্চিত করা এবং উন্নয়নের জন্য বৈশ্বিক সহযোগিতা নিশ্চিত করা। সেই সময় জাতিসংঘের ১৮৯টি দেশ সর্বসম্মতিক্রমে এ ঘোষণা গ্রহণ করে। যদিও ইতোমধ্যে বাংলাদেশ এমডিজি অর্জনের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের মডেল হিসেবে বিশ্বে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। ইউএনডিপির সর্বশেষ ২০০৮ সালের মানবসূচক উন্নয়নে গত দশ বছরে বাংলাদেশ অভাবনীয় উন্নতি করেছে।

০.৫২৪ সূচক অর্জন করে ১৭৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৭তম। সংশ্লিষ্টদের মতে, এর সবকিছুই সম্ভব হয়েছে সরকারের গৃহীত সময়োপযোগী সঠিক পদক্ষেপ ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টার ফলে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.