আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজন গ্যাং নেতার জবানবন্দী এবং অজানা রহস্য (গ্যাং নাম স্টাইল!)

এতোই সাধারণ যে চোখে পড়ে না। এখন এই কথা কেউ বিশ্বাস করে না যে, একদা আমি একটি গ্যাং দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলাম। আমাদের দলের পক্ষে যতটুকু খারাপ হওয়া সম্ভব ছিলো, আমরা হয়েছি। কি ছিলনা আমাদের কুকর্মের তালিকায়? অন্যের সম্পদ হরন, নিজ এলাকার দখল রাখার জন্য প্রতিপক্ষের উপর হামলা, অচেনা দুষ্কৃতীকারীদের উপর চোরাগুপ্তা হামলা, প্রতিপক্ষের কাউকে জীবন্ত ধরতে পারলে নির্যাতনের মাধ্যমে তথ্য আদায়- ইত্যাদি ছিলো আমাদের নিত্য দিনের কর্ম। এক এক করে আমি আজ আমার এই সব পাপের ১৬৪ ধারা দিব।

আপনি জেনে ভীত(!) হবেন যে এই দলের প্রত্যেক সদস্যের বয়স ছিলো ৪ থেকে ৬ বছর!! এলাকা পরিচিতিঃ সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার চিকনাগুল ইউনিয়নের পানিছড়া নামক এলাকায় অবস্থিত সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিঃ। ইতিহাস সচেতন ব্যক্তিমাত্রই জানার কথা যে এটি হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম গ্যাস ক্ষেত্র। একটা গ্যাং দল গড়ার জন্য কি আদর্শ জায়গা তাই না!! ভয়ংকর(!) এই গ্যাং দলের সদস্য পরিচিতি নিরাপত্তার কারনে গ্যাং দলে যে নামে পরিচিত ছিলাম (গ্যাং নাম!) সেই নামই ব্যবহার করছি। লিডারঃ এই ভয়ংকর দলের লিডার ছিলো মুন্না। লিকলিকে শরীরে কি প্রচন্ড শক্তি লুকিয়ে আছে, তা যারা দেখেনি তারা বিশ্বাস করবেনা।

এর সাথে ছিলো দলের মাঝে সবচেয়ে দ্রুত দৌড় দেয়ার ক্ষমতা। যে কোনো বিপদজনক কাজ অতি চাতুর্যের সাথে সমাধা করার এবং দ্রুত পলায়ন করার এক অসাধারন ক্ষমতা ছিলো তার। তার এসব যোগ্যতাই তাকে গ্যাং লিডার পদে প্রতিষ্ঠিত করে। তার আরেকটা যোগ্যতা (এবং এটাই প্রধান) ছিলো যে, তার আব্বার একটা মোটর সাইকেল ছিলো। সেই মোটর সাইকেল যখন বাসায় থাকত তখন সে আমাদের মাঝেমাঝে এই জিনিসটা ধরতে এবং উঠে বসতে দিত!! সেকেন্ড ইন কমান্ডঃ আমি, মাই সেলফ (বুদ্ধিমান হইলে আপনারা আমার আসল নামও জানতে পারবেন!) আমি শুধুমাত্র কিছু “কুট বুদ্ধি”র জোরে এই পদে টিকে গেছি।

গ্যাং করলেও আপনি এই নিশ্চয়তা দিতে পারবেন না যে আপনি ধরা খাবেন না, কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে আমি কোনোদিনও ধরা খাই নাই!! কিভাবে জানি প্রতিবারই “পিছলা” দিয়ে বের হয়ে গেছি। এছাড়াও আমি আরেকটা যে কাজ পারতাম তা ছিলো এই যে, আমি আমাদের লিডারকে বিভিন্ন কাজ কিভাবে সূক্ষ্মভাবে করা যায় সে বুদ্ধি দিতাম। লিডারও খুশি হত। এছাড়া আমার একটা সুন্দর রাইফেল ছিলো, সেইটাও সেকেন্ড ইন কমান্ড হওয়ার একটা কারন!! পান্ডা ১: প্রত্যেক গ্যাং দলেই কিছু পান্ডা টাইপের লোকজন লাগে। যাদের কাজ ছিলো লিডারের সব নির্দেশ চোখ বন্ধ করে করে যাওয়া।

বিভিন্ন মারামারিতে অংশ নেয়া, মাইর খাওয়া। আমাদের সৌভাগ্য যে আমরা এই কাজের জন্য কোকোলাই কে পেয়েছিলাম। বাম হাতের এই ছেলেটা প্রচন্ড শক্তিশালী। পিটিয়ে ছাতু বানানো তার কাছে মোয়া খাওয়ার মতই সহজ এবং আনন্দদায়ক। বুদ্ধিও রাখে ঘটে।

প্রয়োজন মত সটকে পড়ে অসংখ্যবার নিজেকে বাঁচিয়েছে। পান্ডা ২: দেলু ছিলো আমাদের দলের সবচেয়ে নিরীহ সদস্য। হাতের পেশিতে সামান্য শক্তি থাকার কারনে এবং আর কোনো গ্যাং দলে চান্স না পাওয়ার কারনে এই দলে টিকে গেছে। কিন্তু ছেলেটা খালি ধরা পড়ত আর বাসায় বিচার যেত, আফসোস। পাপ স্বীকার আমি এখন এক এক করে আমার পাপ স্বীকার করছি।

আমি জানি আমাকে এবং আমার দলের অন্যদের আপনারা এখন আর খুঁজে পাবেন না। মহান গ্যাং লিডার ডন বলেছেন, “ডন কো পাকাড়না......” ইয়ে..... আমি হিন্দি ঠিক বুঝি না, আপনারা বাকিটা কি হবে মনে মনে পড়ে নিয়েন। তবে এতোটুকু শুনেছি যে তিনি বলেছিলেন, গ্যাং লিডার এবং তার সেকেন্ড ইন কমান্ড কখনো ধরা পড়ে না। কাজেই আমার আর ভয় কি? পাপঃ অন্যের সম্পদ হরন কলোনির ভিতর গাছ-গাছড়ার অভাব ছিলো না। আম গাছ, বড়ই গাছ, কাঁঠাল গাছ, জাম্বুরা গাছ, কলা গাছের কমতি নাই।

সময় পেলেই আমরা আমাদের হুন্ডা নিয়ে (নিজেদের তৈরি করা হুন্ডা, নিজেদের ২টি পা দিয়ে এবং মুখে প্রচন্ড ভু ভু গর্জন করে এই হুন্ডা চালাতে হত) কোন একটা বাসার কাছে চলে যেতাম। হুন্ডা থেকে নেমে কিছু ঢিল জোগাড় করতাম। তারপর সাঁই সাঁই ঢিল ছুড়ে কাংক্ষিত বস্তু নামিয়ে ফেলতাম। তারপর সে বাসার দারোয়ান (বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কলোনির খালাম্মারা) বের হয়ে আমাদের ধরার আগেই আমরা চম্পট। কার সাধ্যি আছে ধরে? পাপঃ প্রতিপক্ষের উপর হামলা গ্যাস ফিল্ডের একটা বড় রাস্তার ২ পাশে ছিলো সবার বাসা।

পশ্চিম পাশে থাকতাম আমরা, পূর্ব পাশে আমাদের প্রতিপক্ষের সদস্যেরা। তাদের দলের মধ্যে সাদ্দাম, বুড্ডা ছিলো অন্যতম। এই দুইজন এবং তাদের সাঙ্গপাঙ্গদের যদি আমরা পেতাম আমাদের এলাকায় তাহলে তাদের অবস্থা হত মারাত্মক!! কিল, ঘুষি কোনকিছুই বাদ পড়ত না। ফলস্বরূপ বিচার যেত আমাদের গ্যাং সদস্যদের বাবা মায়ের কাছে (কিন্তু আমার বাসায় যেত না, কারন মাইরের সব দায়িত্ব ছিলো কোকোলাই এবং দেলুর হাতে, কাজেই বিচার যাবে তাদের বাসায়। কদাচিৎ মুন্না থাকত তাদের সাথে, বস তো!! ছোটখাট কাজে থাকে না।

) নির্যাতনের মাধ্যমে তথ্য আদায়ঃ এই ঘটনার কথা উল্লেখ করেই আজকের মতো আমি আমার জবানবন্দী শেষ করব। সে দিন আমরা আমাদের আস্তানায় (মুন্নাদের বিল্ডিং এর ছাদে) মিটিং শেষ করে ফিরছি। ওমা, আমাদের এলাকায় ওই গ্রুপের বুড্ডা দেখি দিব্যি গায়ে বাতাস লাগিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে!! এর আগের সপ্তাহে সে এবং সাদ্দাম, দেলু এবং কোকোলাইয়ের বাসায় বিচার দেয়াতে তারা হালকা উত্তম-মধ্যম খেয়েছে। লিডার মুন্না এই ঘটনা শুনে যারপরনাই আতঙ্কিত হয়েছিলো । কোনদিন না আবার তার বাসায় বিচার যায়? কিন্তু আজ বুড্ডাকে আমাদের এলাকায় দেখে সে সব কিছু ভুলে গেলো।

আমরা টু শব্দ না করে বিল্ডিং_র আড়াল থেকে দেখতে লাগলাম ব্যাপারটা কি। বুড্ডা কি একা? নাকি তার সহযোগী সাদ্দাম দলবল নিয়ে আড়ালে আছে আমাদের ধরার জন্য? কিছুক্ষন অপেক্ষা করার পরও কাউকে দেখা গেলো না। পুরোপুরি নিশ্চিত হলাম যে বুড্ডা গাধাটা আমাদের রাজ্যে একা একাই চলে এসেছে। তার বন্ধু সাদ্দাম তো দূরে থাক, বডিগার্ড মামা পর্যন্ত কোথাও নাই। এই তো চান্স।

বেটা নিশ্চয়ই ভুলে ভুলে আমাদের রাজ্যে ঢুকে গেছে। ধরে আজকে ভালোমতো ডলা দিয়ে ছেড়ে দিব। মুন্না (পান্ডাদের উদ্দেশ্যে)ঃ যা তো, ধইরা আন। কোকোলাইঃ যদি তার মামা দেখে? আমিঃ দেখবো না, জলদি যা। দেলু (নিরীহ পাণ্ডা)ঃ যদি কাইন্দা দেয়? মুন্নাঃ দিলে দিসে, ধইরা আন।

কোকোলাই একাই বুড্ডাকে পাজকোলা করে ধরে নিয়ে আসলো (আগেই বলেছি বামহাতী এই ছেলের গায়ে পশুর শক্তি!) মুন্নাঃ বল, এইখানে কেন আসছোস? বুড্ডাঃ খেলতে। আমরা ৪ জনই হতবাক!! শত্রু এলাকায় আসছে খেলতে? মুন্নাঃ সত্যি কইরা বল। তোরে সাদ্দাম পাঠাইসে না? বুড্ডা (তখন হালকা ফ্যাচ ফ্যাচ শুরু হইসে)ঃ না, আমি খেলতে আসছি। দেলু (মনে রাখবেন নিরীহ ছেলে!)ঃ ছাইড়া দে...কানতাসে তো। মুন্নাঃ না, এরে এখন মাইর দিতে হইবো।

তারপর ছাড়মু। আমি এবং কোকোলাইও এই ব্যাপারে একমত হলাম। এখন প্ল্যান করতে হবে কিভাবে শাস্তি দেয়া যায়। বুদ্ধির ব্যাপারে লিডার মুন্না কখনো পান্ডাদের সাথে আলাপ করে না। তাই আমি এবং মুন্না আলাদা সরে এলাম বুদ্ধি বের করার জন্য।

অনেক শলা-পরামর্শ করে আমরা যে প্ল্যানটা করলাম তা ছিলো একেবারে ফাস্টক্লাস (তখন তাই মনে হয়েছিলো। ) প্ল্যান মোতাবেক বুড্ডাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হলো বিল্ডিং এর পিছনে। ওই জায়গাটা একটু নিরিবিলি। মানুষজন তেমন নাই, মুরগী-বিড়াল এরাই রাজত্ব করে এই জায়গায়। পাঠক এর পরের অংশটুকু খুবই লোমহর্ষক।

যাদের হার্ট দুর্বল, দয়া করে তারা আর পড়বেন না। পড়লেও নিজ দায়িত্বে পড়বেন। বুড্ডাকে দেলু আর কোকোলাই শক্ত করে ধরে রাখলো। মুন্না কলার ধরে হালকা চড়-থাপ্পড় দিল। দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড তখন লাঠি হাতে ব্যস্ত মুরগীর একটি বিশেষ জিনিস(?) খুঁজতে।

একটু পর মুন্না এসে যোগ দেয় তার সাথে। মুরগীর রাজত্বে এই বিশেষ বস্তু পেতে ৫মিনিটের মতো সময় লাগলো। অতপর লিডার হাতে একটি লাঠিতে মুরগীর ইয়ে() নিয়ে বুড্ডার গালে ভালোভাবে কাঠি দিয়ে ঘষে ঘষে লাগিয়ে দিল। এরপর লাঠিটা আমার হাতে দিয়ে বললো, এইবার তুই এই লাঠি ওর গালে লাগা। আমি তাই করলাম।

বুড্ডা তখন চিৎকার করে কেঁদে চলেছে। আমরা দেরী করলাম না। তাড়াতাড়ি নিরাপদ জায়গায় সটকে পড়লাম। অতপরঃ ২ দিন ধরে দেলু আর কোকোলাই বাসা থেকে বের হয় না। মুন্না আর আমি একটু চিন্তিত হলাম।

ওই দুইটা “গুম” হয়ে যায়নি তো? আমাদের বেশীদিন দুঃশ্চিন্তায় থাকতে হল না। পরের দিন ২ জনই হাজির। কি ব্যাপার ২ দিন কই ছিলি? তারা জানালো, বুড্ডাকে নির্যাতন করার দিন রাতেই তার মামা এসে দেলু আর কোকোলাইয়ের বাসায় বিচার দিয়ে গেছে। ফলস্বরূপ দুই জনই তুমুল ধোলাই হজম করেছে বাসায়। তাদের গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছিলো।

তাই তারা বের হতে পারেনি। আমি আর মুন্না কথা বাড়ালাম না। একটু টেনশনে পড়ে গেলাম দুই জনেই। “আকাম” করলাম আমরা ২ জন, অথচ বিচার গেলো বাকি ২ জনের বাসায়...রহস্য কি? এই রহস্যের সমাধান আজো হয় নি। বিঃদ্রঃ নিরাপত্তার স্বার্থে আসল ছবি দেয়া হল না।

লিডার জানলে..... ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.