ট্রুথ নট সেইড টুডে, কুড টার্ন টু আ লাই টুমোরো
২৬মার্চ অনেক কারণেই স্মরণীয়। ড়েবের জন্মদিন। ২০০৪ সালের ২৬মার্চ 'লুকিং ফর শত্রু' খ্যাত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাবরের ব্রেইনচাইল্ড ড়েবের জন্ম। আমেরিকার সোয়াট টিমের আদলে আমাদেরও পুলিশের মিলিটারাইজেশনের শুরুয়াদ। এরপরে গেল ১০বছরে মোট কতবার অস্ত্রউদ্ধারকালে অন্ধকারে ক্রসফায়ার, বন্দুকযুদ্ধ, জিজ্ঞাসাবাদকালে হৃদযন্ত্রের বৈকল্যে মৃত্যু হইছে তার হিসাব নাই।
হাজারখানেক? পুলিশের মিলিটারি হয়ে উঠার পথে, যত্রতত্র গুলি চালিয়ে মীমাংসা করবার এন্তেজাম করতে ড়েব একটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। পুলিশের সাথে 'শুট টু কিল' ট্রেনিং পাওয়া আর্মি-আনসারের মিশেলে একটা সংকর বাহিনী। এর সাফল্যে পরে চিতা কোবরার মতো দল গড়ে তোলা হয়। পোষাকে আর নামধামেই একটা ভীতি জাগানিয়া বিষধর ভাব। নিজের দেশের ভেতরেই নাগরিকের সাথেই তাদের বোঝাপড়া।
কিন্তু তাদের হাতে থাকে যুদ্ধাস্ত্র। রাষ্ট্র নিজের দেশের মানুষের সাথেই একটা যুদ্ধে নেমে যায়। এন্টি-টেররিজম ইউনিট। কিন্তু এই যুদ্ধে পরাজিতপক্ষই পরাজিত হয়ে মিষ্টি খেয়েছে। ক্রসফায়ারকে সন্ত্রাসদমনে জনপ্রিয় করতেই সংবাদমাধ্যমে প্রচার হয় অমুক সন্ত্রাসীর ক্রসফায়ারে মৃত্যু, মৃত্যুকালে তার নামে চাঁদাবাজি, রাহাজানি সহ এতোগুলি মামলা ছিল।
যেন মামলা থাকলে গুলি খাওয়া ফরজ। সুতরাং, উনি ক্রসফায়ারের যোগ্য দাবিদার। জনমনেও পুলিশ বলতে ভেড়াবাহিনী ও ড়েব বলতে সকাল সন্ধ্যে রাতে কালোচশমা পরে ঘুরে বেড়ানো সাক্ষাৎ যম হিসেবে সুনাম কামিয়েছে।
আওয়ামীলীগ সরকার আমলেও এই 'সুনামের' ধারা জারি রেখে ক্রসফায়ারকে বলা হতে থাকে 'বন্দুকযুদ্ধ' আর জিজ্ঞাসাবাদে খুনের চেয়ে গুম পরবর্তী খুনেই হাতপরিস্কার রাখা সুবিধাজনক পন্থা হিসেনে ব্যবহার করা হয়েছে। সবচেয়ে বড়কথা হচ্ছে, এসবে কারো বিচার হয় না।
সাধারণত সুবিচার চেয়ে গলা ফাটানো মানবাধিকার সংস্থা বা বিরোধীদল বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের বিপক্ষে বললেও ড়েবের কোন সদস্যের বা তাদের আদেশ দেয়া সরকারী উর্ধ্বতন রাজনীতিবিদ কাম আইনপ্রনয়নকারীকে মামলার ফ্যাসাদে ফেলেন না, ক্ষমতায় গেলেও না। সব শাসকের পছন্দ বড় ডান্ডা, যাতে যারে তারে ঠান্ডা করে দেয়া যায়। তাই গদির ছোয়া পেলেই উনারা ড়েবের সুনাম করতে থাকেন।
২০০৪-২০০৫ সাল ড়েবের বড় কামিয়াবির বছর। জঙ্গিদমনে তারা ছিলেন সিদ্ধহস্ত।
কিন্তু জঙ্গিলালনে পুলিশবাহিনী কেন খ্যাতি পাচ্ছিলো, কেন জঙ্গিদের বেড়ে ওঠার ঘটনাকে সরকারি দল 'মিডিয়ার অতিরঞ্জন' বলে চালিয়ে দিচ্ছিলো সেগুলি এড়িয়ে গিয়ে ড়েবকে বোলানো হলো। শুধু জঙ্গি দমনেই ড়েবের চাহিদা ফুরিয়ে যায় নি। যেন দেশে অফুরান জঙ্গি-ভান্ডার আছে তাই ড়েবকে নিয়মিত ব্যবহার করে চলে শাসকগোষ্ঠি। ড়েবের দেখাদেখি পুলিশও বুকে মাথায় গুলি চালাতে থাকে আওয়ামী লীগ আমলে। গেল দেড়বছরে আড়াইশো খুন হয়েছে।
আসাদুজ্জামান নূরের উপর হামলা করা আসামিরা মারা পড়তে থাকেন। রাজনৈতিক সহিংসতার আছরে আরো বেশি ব্যবহার হচ্ছে গুলি। মাঝে পিপারস্প্রে নিয়ে যে বাহাস হলো সেটা যেন গুলির ব্যবহারে বাকহারালো।
বিচারবিভাগের নানা ফাঁকফোকর বন্ধ করে পুলিশে আস্থা না ফেরালে, পুলিশের মিলিটারাইজেশন না থামালে এই পাইকারি গুম-খুন-বন্দুকযুদ্ধ থামবে না। এই না থামার ফলাফলস্বরূপ প্রতাপশালী শাসক তৈরি হবে।
ভোট বা ভোটবিহীন নির্বাচনে শাসকের চেহারার পরিবর্তন হলেও তার আচরণে বিন্দুমাত্র পরিবর্তন আসবে না।
১.ক্রসফায়ার সেটা উপকারি বা অপকারি যাই হোক বন্ধ করুন।
২.পুলিশের মিলিটারাইজেশন বন্ধ করুন। ড়েবকে মিলিটারিমুক্ত করে সিভিলিয়ান পুলিশ ফোর্স হিসাবে গড়ে তুলুন।
৩.বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড, রিমান্ডে নির্যাতনকে না বলুন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।