পলাতক দুই দুর্ধর্ষ জঙ্গি নেতা কোথায়? ১১ দিন আগে ত্রিশালে পুলিশ খুন করে প্রিজনভ্যান থেকে পালিয়ে যাওয়া এই দুই শীর্ষ জঙ্গির হদিস না মেলায় এমন প্রশ্ন এখন সর্বমহলে। ঘটনার পর পরই রেড অ্যালার্ট জারি করে জেলায় জেলায় তন্ন তন্ন করে খোঁজ করলেও তাদের অবস্থান নিশ্চিত হতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এদিকে জামিনে মুক্তি পেয়েই আরও শতাধিক জঙ্গি এখন লাপাত্তা। কোনো তথ্য নেই পুলিশ ও গোয়েন্দাদের কাছে।
সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, এদের গ্রেফতার করতে না পারলে নিরাপত্তা হুমকিতে থাকবে গোটা দেশ।
আত্দগোপনে থাকা দুর্ধর্ষ জঙ্গিরা যে কোনো সময় বড় ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারে। আটক জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেওয়ার মতো পরিকল্পনা অাঁটতে পারে তারা। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার সূত্রগুলো বলছে, পলাতক জঙ্গিদের ব্যাপারে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। পাকড়াওয়ে অভিযান চলছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। তাদের ধারণা, এখনো দেশ থেকে পালিয়ে যেতে পারেনি পলাতক দুই জঙ্গি।
র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কর্নেল জিয়াউল আহসান বলেছেন, পলাতকদের ব্যাপারে এখনো কোনো খবর নেই। তবে পলাতক ও আত্মগোপনে থাকা জঙ্গিদের আইনের আওতায় আনতে কাজ চলছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ধরা পড়ার পর আদালত থেকে জামিন পেলে পুলিশের কী করার থাকে। তারা আত্দগোপনে থেকে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করে। পলাতক জঙ্গিদের ধরতে গোয়েন্দা নজরদারি করা হচ্ছে।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি কাশিমপুর কারাগার থেকে ময়মনসিংহ আদালতে নেওয়ার পথে ত্রিশালে জামা'আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর তিন শীর্ষ নেতা সালাউদ্দিন ওরফে সালেহীন, রাকিব হাসান ওরফে হাফেজ মাহমুদ ও জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমা মিজানকে প্রিজনভ্যান থেকে জঙ্গিরা ছিনিয়ে নেয়। ঘটনার চার ঘণ্টা পর রাকিব ধরা পড়লেও পরে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, পলাতক দুজন উত্তরাঞ্চলের চার জেলায় অবস্থান করতে পারেন এমন ধারণা করছে গোয়েন্দারা। বগুড়া, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং নওগাঁকে টার্গেট করে এসব অভিযান চলছে। বিশেষ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকায় জঙ্গিদের শক্ত অবস্থান রয়েছে বলে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে।
তবে এখনো তাদের সঠিক অবস্থানের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পলাতক দুই জঙ্গিকে গ্রেফতারে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ইউনিটও কাজ করছে। কারাগার সূত্র জানায়, গত কয়েক বছরে ১৯২ জঙ্গি জামিনে কারাগার থেকে ছাড়া পেয়েছে। এদের মধ্যে শতাধিক জঙ্গির আর কোনো খবর নেই। এরা গ্রেফতারও হয়নি।
তদন্ত-সংশ্লিষ্টদের ধারণা, পলাতক এসব জঙ্গি নিজেদের সংগঠিত করার চেষ্টা করছে। পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, কারাগার ও পুলিশের কাজে সমন্বয় না থাকায় যেসব জঙ্গি আদালত থেকে জামিন নিয়ে বেরিয়ে গেছে তা গোয়েন্দাদের জানা নেই। যখন কোনো বন্দী বিশেষ করে জঙ্গি ও শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিনে মুক্তি পায়, এ সংবাদ গোয়েন্দাদের কাছেও থাকে। কিন্তু কাশিমপুর কারাগার থেকে গুরুত্বপূর্ণ আসামিরা মুক্তি পেলেও কখনো কখনো গোয়েন্দাদের অজানা থেকে যায়। গত বছর শীর্ষ সন্ত্রাসী বিকাশ মুক্তি পাওয়ার ক্ষেত্রেও গোয়েন্দারা ছিল অন্ধকারে।
ত্রিশালে প্রিজনভ্যান থেকে তিন জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনার পরই নতুন করে কারাগারে আটক জঙ্গিদের হিসাব-নিকাশ শুরু হয়। দেশের কোনো কারাগারে কতজন জঙ্গি সদস্য রয়েছে, কতজন জামিন নিয়ে পালিয়েছে, এর হিসাব-নিকাশ শুরু হয়েছে। সূত্র জানায়, আদালত থেকে জামিন নিয়ে অনেক জঙ্গি কারাগার থেকে বেরিয়ে আর আগের ঠিকানায় অবস্থান করে না। এ জন্য তাদের নজরদারি করা কঠিন হয়ে পড়ে। পালিয়ে যাওয়া জঙ্গি দুই নেতার খোঁজ পুলিশ, র্যাবের একাধিক টিম ও গোয়েন্দারা নিশ্চিত করতে পারছে না।
কারণ জঙ্গিবিরোধী অভিযান ও গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার হওয়ায় ধূর্ত জঙ্গিরা আপাতত চুপ মেরে আছে। সূত্র আরও জানায়, পলাতক দুই জঙ্গি ছাড়াও জামিন নিয়ে গাঢাকা দেওয়া জঙ্গিদের মধ্যে ২০ জন রয়েছে দুর্ধর্ষ। এদের গ্রেফতারেও চলছে চিরুনি অভিযান। পলাতক জঙ্গিদের মধ্যে জাকারিয়া, সবুজ, সাজেদুর, মানিক, মাজিদ, ফারুক, শফিক, মিলন, কফিল উদ্দিন ওরফে রব মুন্সি, আজিবুল ইসলাম ওরফে আজিজুল, শাহান শাহ, হামিদুর রহমান, বজলুর রহমান, বাবর, শরিফ, খাইরুল ইসলাম, নাদিম, ময়েজ উদ্দিন, মহব্বত ওরফে তিতুমীর ওরফে নাহিদ এবং ওয়ালিউল্লাহ ওরফে হামিদ অন্যতম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।