আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উল্টোগতিতে কারিগরি শিক্ষা বিফলে নির্বাচন

মহাজোটের নির্বাচনী ইশতেহারে কারিগরি শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে দেশের ২৩টি জেলায় একটি করে কারিগরি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা এবং সিলেট, বরিশাল ও রংপুর বিভাগে একটি করে মহিলা কারিগরি ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার কথা ছিল। কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন প্রজন্ম গড়ে তোলার কথাও নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ ছিল কিন্তু সরকারের শেষ সময়েও কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার বিকাশ এবং সংস্কারের কোনো কাজই হয়নি। কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নে নেওয়া হয়নি কোনো পরিকল্পনা ও প্রকল্প। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নে ১০০টি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করার প্রকল্পটি অনুমোদন হয়নি বাস্তবায়ন করতে না পারার আশঙ্কায়। তাই কারিগরি শিক্ষা নিয়ে আর কারও মাথাব্যথাও নাই। কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, এই শিক্ষাকে চরমভাবে অবহেলিত রেখেছে সরকার। ফলে অবকাঠামো সংকট, শিক্ষক-কর্মচারী স্বল্পতা, পরিকল্পনার অভাব ও শিক্ষা উপকরণের স্বল্পতায় কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা এই সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। কারিগরি শিক্ষার উন্নয়ন ও সংস্কারে কারিগরি শিক্ষা অধিদফতর, কারিগরি শিক্ষাবোর্ড ও মন্ত্রণালয়ের কারিগরি অনুবিভাগ থাকলেও এগুলোর দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। তবে শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই সরকারের আমলে সাধারণ, মাদ্রাসা ও আইসিটি শিক্ষার ব্যাপক উন্নয়ন ও সংস্কার হলেও কারিগরি শিক্ষা দিন দিন সংকুচিত করা হয়েছে। সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে শিক্ষা এবং কারিগরি শিক্ষা নিয়ে যেসব অঙ্গীকার করা হয়েছিল তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী দেশে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ৩০২টি সরকারি এবং বাকিগুলো বেসরকারি। তবে অধিকাংশ বেসরকারি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অবৈধ উপায়ে সনদ দেওয়া ও প্রশ্ন ফাঁসের মতো ঘটনার অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে, রাজস্বভুক্ত (পুরাতন) ২০ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে দীর্ঘদিন ধরে শূন্য আছে ৬০ শতাংশ শিক্ষকের পদ। প্রকল্পভুক্ত ২৯টি প্রতিষ্ঠানে ৮০ শতাংশ পদে কোনো শিক্ষকই নেই। তাদের পদোন্নতিও নেই। ৪৯টি প্রতিষ্ঠানের ৪৫টিতেই নেই উপাধ্যক্ষ। অধ্যক্ষ ছাড়াই চলছে ২৮টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। এক বা দুজন শিক্ষক দিয়ে চলছে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। প্রতিষ্ঠানগুলোর অসংখ্য বিভাগ একেবারেই শিক্ষকশূন্য। এ ছাড়া তিনটি সরকারি মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট বা একটি বিভাগ নিয়ে চলা সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটও নানামুখী সংকটে বিপর্যস্ত। প্রথম শিফটে ১২ হাজার ও বিকালের দ্বিতীয় শিফটে ১২ হাজারসহ প্রতিবছর প্রায় ২৪ হাজার নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি হয় এসব প্রতিষ্ঠানে। শিক্ষকরা জানান, দেশের সবচেয়ে বৃহৎ ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটেও আছে বহুমুখী সংকট। শিক্ষকদের কোনো পদোন্নতি নেই। প্রতিষ্ঠানটিতে এনভায়রনমেন্টাল টেকনোলজি বিভাগ চালু হলেও এই কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে না। কারণ কোনো শিক্ষক নেই। ৪০ বছরেও চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের কোনো উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন হয়নি। ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানে ৫টি হোস্টেল থাকলেও নামকাওয়াস্তে কার্যকর আছে একটিমাত্র মহিলা হোস্টেল। বাকি ৪টি হোস্টেল ব্যবহার অনুপযোগী। প্রতি শিফটে ৭৫ জন শিক্ষকের পদ থাকলেও নেই ৫০জনও। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি কারিগরি কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি এম এ সাত্তার বলেন, কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে দেশের সরকারি-বেসরকারি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে করুণ অবস্থা চলছে। এদিকে শিক্ষামন্ত্রী বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বক্তব্যে প্রতি উপজেলায় একটি করে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কথা বলে আসলেও সেটি বক্তব্যেই সীমাবদ্ধ থেকে গেছে। এখন পর্যন্ত দেশের কোনো উপজেলা বা থানায় একটি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও প্রতিষ্ঠা হয়নি। উল্টো শিক্ষক-কর্মচারী স্বল্পতায় সরকারি ভোকেশনাল ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম মারাত্দকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, কারিগরি শিক্ষার প্রসারতা নিয়ে আমার আন্তরিকতার কমতি ছিল না। তবে এই খাতে প্রত্যাশিত সংস্কার ও উন্নয়ন করতে পারিনি। কিছু কিছু উন্নয়ন করেছি।

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.