আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ মানতে ভাসানীর আহ্বান

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।


বন্ধু তোমার ছাড়ো উদ্বেগ, সুতীক্ষ্ন করো চিত্ত/ বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি বুঝে নিক দুর্বৃত্ত। ১১ মার্চ ১৯৭১, অগি্নবিদ্রোহে টালমাটাল পুরো দেশ। কবির এই উজ্জীবনী মন্ত্রে উদীপ্ত জাতি প্রতিবাদে, প্রতিরোধে তখন মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। স্বাধীনতার আন্দোলন ক্রমেই উত্তাল থেকে উত্তালতর হতে থাকে।

শান্তিপূর্ণভাবে অসহযোগ আন্দোলন সফল হওয়ায় বঙ্গবন্ধুর ওপর দেশবাসীর আস্থা বেড়ে যায় অনেক।
আগের দিন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের ফরমান জারির ফলে স্বাধীন বাংলার দাবিতে বিক্ষুব্ধ মানুষ তাদের সিদ্ধান্তে অবিচল ছিলেন। প্রাণের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশ অনুযায়ী সরকারের সঙ্গে সব ধরনের অসহযোগিতা অব্যাহত রাখেন। বঙ্গবন্ধু আহূত অসহযোগ আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে শরিক হয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি এবং
প্রশাসনের সচিবসহ সারা বাংলায় সরকারি-আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানের সর্বস্তরের কর্মচারীরা অফিস বর্জন করেন। টাঙ্গাইলে বিন্দুবাসিনী হাইস্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত জনসভায় ন্যাপপ্রধান মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী বঙ্গবন্ধু ঘোষিত স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ঘোষণা করেন।

তিনি বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান ৭ কোটি বাঙালির নেতা। নেতার নির্দেশ পালন করুন। লক্ষ্য অর্জনের জন্য সবাই একজোট হয়ে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম করুন। এ মুহূর্তে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনোরকম বিরোধ থাকা উচিত নয়। জনগণ এখন নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।


আগের দিনগুলোর মতো এই দিনেও সচিবালয়, মুখ্য সচিবের বাসভবন, প্রধান বিচারপতির বাসভবনসহ সব সরকারি-আধাসরকারি ভবন এবং বাড়ির শীর্ষে স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়তে দেখা যায়। ন্যাপ (ওয়ালী) পূর্ব বাংলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ, পাঞ্জাব আওয়ামী লীগ সভাপতি এম খুরশীদ, মুসলিম লীগ প্রধান মমতাজ দৌলতানার বিশেষ দূত পীর সাইফুদ্দিন এবং ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসংঘের সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি, কে উল্ফ আজকের এই দিনে শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে পৃথক পৃথক বৈঠকে মিলিত হন।
সংগ্রামী জনতা সেনাবাহিনীর রসদ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর স্বাভাবিক সরবরাহের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে। সিলেটে রেশন নেয়ার সময় সেনাবাহিনীর একটি কনভয়কে বাধা দেয়া হয়। যশোরেও এ ধরনের ঘটনা ঘটে।

রাতে সামরিক কর্তৃপক্ষ ১১৪ নাম্বার সামরিক আদেশ জারি করে নির্দেশ দেয় যে, কেউ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সরকারি সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করলে অথবা সশস্ত্রবাহিনীর রক্ষণাবেক্ষণ বা সেনাবাহিনীর গতিবিধিতে অন্তরায় সৃষ্টি করলে তাদের কার্যকলাপ আক্রমণাত্মক কাজের শামিল বলে গণ্য হবে, যা সংশ্লিষ্ট সামরিক বিধি অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো করাচি থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে একটি তারবার্তা পাঠান। এতে তিনি বলেন, উদ্ভূত সাম্প্রতিক ঘটনাবলীতে আমি গভীরভাবে মর্মাহত ও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছি। আমরা আজ বিরাট সঙ্কটের মুখোমুখি। দেশের ভবিষ্যৎ আজ অনিশ্চিত।

এ ব্যাপারে আমাদের উভয়ের অনেক দায়িত্ব রয়েছে। ধ্বংস এড়ানোর জন্য সম্ভাব্য সবকিছুই আমাদের করতে হবে। যে কোনো মূল্যে দেশকে রক্ষা করতে হবেই।
করাচিতে গণঐক্য আন্দোলনের নেতা এয়ার মার্শাল (অব.) আসগর খান সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, খুব দ্রুত পটপরিবর্তন হচ্ছে। দেশকে বিচ্ছিন্নতার হাত থেকে রক্ষা করতে হলে যথাশীঘ্র ব্যবস্থা নিতে হবে।

আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানই কার্যত এখন ঢাকার সরকার। সেখানে সব সরকারি কর্মচারী এবং সচিবরা তার নির্দেশ পালন করছেন। ঢাকায় কেবল সামরিক সদর দপ্তরে পাকিস্তানি পতাকা উড়ছে। তিনি আরো বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের হাতে অবিলম্বে ক্ষমতা ছাড়া না হলে দেশের দুই অংশকে এক রাখা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।
পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণ, নিপীড়ন-বঞ্চনার বিরুদ্ধে অগি্নবিদ্রোহের চূড়ান্ত রণপ্রস্তুতি চলছিল একাত্তরের এই সময়টায়।

বাঙালি জাতির মুখ্য চিন্তা ও লক্ষ্য তখন একটাই ছিল-স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান অনেক আগেই পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। একমাত্র সেনা ছাউনি ছাড়া টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া কোথাও পাকিদের নিয়ন্ত্রণে ছিল না। পুরো দেশ, মানুষ চলছিল একমাত্র এক ব্যক্তির নির্দেশে, তিনি হলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ও সামরিক জান্তার রক্তচক্ষু ও আদেশ উপেক্ষা করেই সব দোকানপাট, অফিস-আদালত, কল-কারখানা, কোর্ট-কাছারি বন্ধ রাখা হয়।


দেশজুড়ে চলতে থাকে মিটিং-মিছিল। সংঘবদ্ধ হওয়ার প্রচেষ্টা আরও জোরালো হয়। বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় দল গঠনের কাজ চলতে থাকে। শহরগুলোতে প্রতিদিনই মিছিল-মিটিং চলতে থাকে। পাকি বাহিনীর গুলিতে শহীদ হন অনেকে।

বাড়তে থাকে শহীদদের তালিকা। একেকটি মৃত্যু বীর বাঙালির রক্তে প্রতিশোধের ইচ্ছাকে আরো বাড়িয়ে তোলে। চারদিক উত্তেজনা বাড়তে থাকে। দেশের স্বাধীনতা আনতে অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিতে সবাই প্রস্তুত। এই দিনে ছাত্র ইউনিয়ন দেশবাসীকে সংগঠিত করতে একটি লিফলেট ছাড়ে।

সেখানে তারা পাকি হানাদারদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানায়। এভাবে একেকটি দিন যেতে থাকে আর বাড়তে থাকে উত্তেজনা। সংঘবদ্ধ হতে থাকে বাঙালি। বাড়তে থাকে বাঙালির মনের জোর।
অনিবার্য স্বাধীনতার দিকে দেশ যাচ্ছে।

পূর্ব পাকিস্তান হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। এটা বুঝতে পেরে পাকি সামরিক জান্তারা গোপনে বাঙালি নিধনের ঘৃণ্য খেলায় মেতে ওঠে। যে কোনো মূল্যে স্বাধীনতা ঠেকাতে পাকি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বাঙালির রক্তের হোলি খেলার ষড়যন্ত্র করতে থাকে। গোপনে পূর্ব বাংলায় পাকিস্তানি সামরিক শক্তি ও অস্ত্র-গোলাবারুদ মজুদ করতে থাকে। কিন্তু এই ঘৃণ্য পরিকল্পনার কথা সামরিক বাঙালি অফিসাররা জানতে পেরে তারাও ভেতরে ভেতরে স্বাধীনতার জন্য লড়াইয়ে শক্তি-সাহস সঞ্চয় করতে থাকে।

সুত্র
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.