গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে সরকার। এর ফলে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের গড় খুচরা মূল্য ৫.৭৫ টাকা থেকে ৪০ পয়সা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬.১৫ টাকায়। তবে আবাসিকে (১ থেকে ৫০ ইউনিট পর্যন্ত) এবং সেচে ব্যবহৃত বিদ্যুতের দাম বাড়ছে না বলে নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। বিদ্যুতের এ বর্ধিত দাম কার্যকর হবে ১ মার্চ থেকে। গত সপ্তাহে তিন দিনের গণশুনানি শেষে দেশের পাঁচটি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা ও কোম্পানির আবেদনের প্রস্তাব আমলে নিয়ে বিইআরসি গতকাল বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে মূল্য বৃদ্ধির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়। এর আগে গতকাল এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে বিইআরসি। এটি অনুমোদনের জন্য সরকারের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে বিইআরসি কর্তৃপক্ষের বৈঠক হয়। বৈঠকে বিদ্যুতের দাম গড়ে ৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বিইআরসি চেয়ারম্যান এ আর খান জানান, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) গ্রাহকদের বিদ্যুতের মূল্য ৭ দশমিক ১৭ শতাংশ, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ, ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার (ডিপিডিসি) ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) ৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং পল্লী বিদ্যুয়াতন বোর্ডের (আরইবি) গ্রাহকদের বিদ্যুতের মূল্য ৫ দশমকি ৪১ শতাংশ বেড়েছে। এতে গড় মূল্য বৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ। তবে কৃষকদের জন্য মূল্য বাড়ছে না। সব কোম্পানির বিদ্যমান নূ্যনতম চার্জ, সার্ভিস চার্জ, ডিমান্ড চার্জ ও বিলম্ব চার্জ অপরিবর্তিত থাকবে। যদিও আরইবি এসব চার্জ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিল। এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নূ্যনতম ব্যবহারকারীদের জন্য বিদ্যুতের মূল্য বাড়ছে না। তবে নূ্যনতম ব্যবহারসীমা ৭৫ ইউনিট থেকে কমিয়ে করা হয়েছে ৫০ ইউনিট। দায়িত্ব নেওয়ার দুই মাসের মাথায় বিদ্যুতের দাম বাড়াল নতুন সরকার। এর আগের মেয়াদে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ে ১১ দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছিল। সর্বশেষ ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে খুচরা বিদ্যুতের দাম ১৫ এবং পাইকারি ১৭ শতাংশ বাড়ানো হয়। তবে এবার বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির বিরোধিতা করেছে বিএনপিসহ বিভিন্ন বাম দল ও ভোক্তা সংগঠন। কিন্তু প্রতিবাদের মুখেই বিইআরসি মূল্য বৃদ্ধির এ ঘোষণা দিল। বিইআরসি এর আগে তার নিজস্ব কার্যালয়ে ৪, ৫ ও ৬ মার্চ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গণশুনানি গ্রহণ করে। গণশুনানির প্রথম দিন বিপিডিবির ১৫ দশমিক ৫০ এবং ওজোপাডিকোর ৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাবের বিপরীতে বিইআরসির টেকনিক্যাল কমিটি যথাক্রমে ৬ দশমিক ৬৬ ও ৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধির সুপারিশ করে। দ্বিতীয় দিন গণশুনানিতে ডিপিডিসি ও ডেসকোর ২৩ দশমিক ৫৫ ও ১৫ দশমিক ৯০ শতাংশ বৃদ্ধি প্রস্তাবের বিপরীতে যথাক্রমে ৬ দশমিক ৩ ও ২ দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়। গণশুনানির শেষ দিন আরইবির ১২ দশমিক ৫৮ শতাংশের বিপরীতে বিইআরসি ৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধির সুপারিশ করে। সে হিসাবে এবার গড়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ল ৬.৯৬ শতাংশ। বিইআরসি জানায়, তারা নূ্যনতম বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী গ্রাহকদের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা রেখে মূল্য সমন্বয় করেছে। বিদ্যুতের দাম সমন্বয়ের ক্ষেত্রে তারা সব শ্রেণীর ভোক্তার স্বার্থ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওপর আর্থিক প্রভাব, গরিব-নিম্নমধ্যবিত্ত ও কৃষি খাতের কথা বিবেচনা রেখেই মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিইআরসির সদস্য সেলিম মাহমুদ ও প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন।
বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের বিক্ষোভ আজ : বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে আজ সারা দেশে জেলা, উপজেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। রাজধানীতে থানায় থানায় এ কর্মসূচি পালিত হবে। একই ঘটনায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনও বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির পর গতকাল রাতে দলের নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রিজভী আহমেদ। অবিলম্বে বিদ্যুতের নতুন মূল্য থেকে সরে আসার আহ্বান জানান তিনি।
এ সময় বিএনপি নেতা কাজী আসাদুজ্জামান, অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, আসাদুল করীম শাহীন, আবুল হোসেন, যুবদল নেতা মাহবুবুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী আহমেদ বলেন, সরকার নিজেদের অন্যায়, অপকর্মের জবাবদিহির ভয়ে দুঃশাসনের চক্রান্তের জাল বুনে যাচ্ছে। ড. খন্দকার মোশাররফ সরকারের সেই চক্রান্তের শিকার। তিনি বলেন, নিজেদের লুটপাট থেকে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে ফেরাতে দুদকের মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মোশাররফকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে গ্রেফতার করা অন্যায়। বিরোধী কণ্ঠকে প্রতিহিংসামূলকভাবে শ্বাসরোধ করার শামিল।
অন্যান্য সংগঠনের কর্মসূচি : বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি আজ বিকাল ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে। বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি মুক্তিভবনে এক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেছে। গণসংহতি আন্দোলন আজ বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভের পাশাপাশি রবিবার জ্বালানি মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা রবিবার সকালে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।