আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সহযাত্রী যখন সুন্দরী!

"আমার রঙ্গীন পাল নীল সাগরে, ভেসে যায় তরী আমার ঢেউ এর তরে, চলো স্বপ্ন বুনি নীল দরিয়ায়, অসীম নীলে তরী আমার যায় উড়ে যায়!"

আজিমপুর থেকে মুহাম্মাদপুর যাইবো টিউশনিতে। উঠিলাম ঢাকার বিখ্যাতো তেরো নাম্বার বাসে! বসিলাম মাঝামাঝি এক সিটে! ইডেন কলেজের সামনে যেতেই হেল্পার চিৎকার শুরু করিলো-ধান্মন্ডী পনেরো,স্টার কাবাব,শঙ্কর,মুহাম্মাদপুর! এক ললনা কে দেখিলাম বিদ্যুতের লাহান হাতে এক খান বই সাইজের মোবাইল লইয়া উঠিতে। ললনা উঠিয়া আশে পাশে না তাকাইয়া সোজা আইসা বসিলো আমার পাশের সিটে! আমি তো অবাক,আজ তিন বছর অবধি এই বাসে যাতায়ত করি,আজকের আগ পর্যন্ত কোনো ললনা আমার পাশে বসে নাই! আর আজিকে কিনা চাদের ন্যায় ললনা আইসা বসিয়া আমারে কন্যা রাশির জাতক বানাইয়া দিলো।

বেপার না,জানালার দিকে চাপ দিয়ে বসিয়া ললনা কে অনেক জায়গা দিয়ে নিজেকে নারীবাদী হিসেবে প্রকাশ করিবার চেষ্টা করিলাম। একটু পর ললনার বই সাইজের মোবাইল বাজিয়া উঠিলো।

ললনা ধরিয়া কহিলো,”কে? কে?” একটু পর কহিলো,”রঙ নাম্বার। “ কিছুক্ষণ পর আবার ফোন,ললনা আবার বলিলো-“রং নাম্বার!” এরপর আবার ফোন,এবার আর রিংটন বাজিলোনা! বুঝিলাম ললনা,ফোন সাইলেন্ট করিয়াছে! তো ফোন ধরিয়া ললনা এবার ঝারি দেওয়া শুরু করলো,”কি পেয়েছেন,মেয়েদের নাম্বার পেলেই ফোন দিতে ইচ্ছে করে,এরকম ব্লা ব্লা ব্লা!” এই বলিয়া সে কাটিয়া দেওয়ার কিছুক্ষণ পর আবার ফোন, এবার আর সে ধরিলোনা! এভাবে আরো তিন চার বার ঐ নাম্বার থেকে ফোন আসিলো,আর ললনা ধরিলোনা! আমি পাশে বসিয়া মিটি মিটি হাসিতেছি!

অতঃপর আবার ফোন! এবার ললনা আমার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকাইয়া কহিলো,”ভাইয়া,আপনি তো বুঝছেন বেপার টা,ভাল হয় যদি আপনি ফোনটা ধরে ঐ লোককে কিছু বলে দেন। “ এই কথা শুনিয়া আমার বুকের মধ্যে বিজলী চমকাইলো! বুকের মধ্যে ঢিব ঢিব এর উপস্থিতি সত্ত্বেও বলিলাম,”দেন ফোন টা!” ফোন ধরিলাম,ওপাশ থেকে ছেলে কন্ঠ,”হ্যালো,মিতা আছে?” আমি শুরু করিলাম,”দেখেন ভাই আপনি যেই নাম্বারে ফোন দিয়েছেন,সেই নাম্বারে ঠিক এক বছর আগে আমি ফোন দিয়েছিলাম। আজ এক বছর ধরে আমাদের সম্পর্ক। আপনি যদি এক বছর আগে আমার আগে ফোন দিতেন তাহলে হয়তো লাভ হতো!” এই কথা শুনিয়া ঐ পাশে চোরের মত কন্ঠ শুনিলাম,”সরি,ভাইয়া রঙ নাম্বার!” ফোন কাটিতেই আমি বুঝিলাম,আমি কি কথা বলিয়া ফেলিয়াছি! মাথা,দেহ সারা শরীর কাপিতে লাগিলো! মেয়েটাকে ফোন দেওয়ার জন্য হাত বাড়ালাম! মেয়েটি আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।

লজ্জায় তার মুখ পুরাই লাল।
আমি আস্তে করে বললাম,সরি! কাজ হইলোনা মনে হয়! মেয়েটি আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে ছিল যেনো সে ভূত দেখেছে!

বাস তখন পৌছালো ধানমন্ডী পনেরো তে! মেয়েটি আমার হাত থেকে ফোন টি নিলো! কানের কাছে আস্তে করে বললো,একটু নামবেন! এড়াতে পারলাম না,কি আছে জীবনে এই টাইপের একটা সাহস নিয়ে নেমে পড়লাম পিছু পিছু! এরপর কি হইলো সেসব না হয় পরে শুনলেন। তারপর থেকে প্রতি সপ্তাহে এক দিন যায় ধানমন্ডী পনেরোতে! এখন আর বাস থেকে পিছু পিছু নামিনা,পাশাপাশি ই নামি!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।