আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

"হিমুর হাতে একটি সাটায়ার"

***এই লিখা কাউকে আঘাত করার জন্য নয়। ইহা একটি সম্পূর্ণ ব্যঙ্গধর্মী রম্য রচনা। এর চরিত্র এবং বিষয় বস্তু সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবে কারো সাথে মিলে গেলে তা শুধুমাত্র কাকতালীয় বলে গন্য করা হবে। ***

"হিমুর হাতে একটি সাটায়ার"

চৈত্র মাসের ঝাঁঝাঁ রোদ, যাত্রা পথের উদ্যেশ্য ফার্মগেট।

বাস দেখলেই মনে হয় মানুষের ভারে এই বুঝি উল্টে গেল। কাজেই যেতে হবে হেঁটে হেঁটে। শাহবাগ ক্রস করতে না করতেই দেখি কে যেন আমাকে এক গলি থেকে ডাকছে।
আরে হিমু ভাই না? হ্যা হিমু ভাই ই তো !
তাকিয়ে দেখি আই মরান। এসেই একটা কদমবুচি করে ফেললো।


আই মরান হথাৎ করেই গম্ভীর মুখে বলল_ হিমু ভাই আপনার সাথে আমার কিছু প্রাইভেট কথা আছে।
আমি খুবি আন্তরিকতার সাথে বললাম_ জি বলুন কি বলতে চান? রাজনীতিতে জড়িত দের সাথে তো আর সাধারন ভাবে কথা বলা যায়না।
হিমু ভাই! কাঁদো কাঁদো গলায় আই মরান বলল, আফনে আমারে আপনি কইরা কইতাসেন? এর আগে আমার মরন হইলনা কেন? হিমু ভাই আফনে আমারে আপনি কইলেন? আমার শাস্তি হউনের দরকার। এ কথা বলেই আই মরান জুতা খুলে নিজের গালে ঠাস ঠাস করে দুইটা বাড়ি দিলো।
আরে করছিস কি? আমি বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করলাম।

তোরা কি সব স্টেজ বানাইলি, এখন তো তোরা ন্যাশনাল হিরো। তাই হঠাৎ করেই মুখ দিয়ে আপনি চলে আসল।
হেহে হিমু ভাই যে কি কন না? ওইসব বোদাই গো মত আপনি ও একই কথা কইলে হইব? আপনারে বুঝা মুশকিল হিমু ভাই। বুঝেন না নিজের দলের প্রেসার এ পইরা এইসব করতে হইসে। জনগন রে তো কিছু একটা দিয়া বুঝ দেওন লাগবো।


আমি বললাম ওহ আচ্ছা...... ভালো তো !
হিমু ভাই সিলেট যাইবেন? ফিস ফিস করে আই মরান বলে, যেন কোন গোপন কথা বলছে।
তা হঠাৎ সিলেট কেন? আমি জিজ্ঞেস করি।
আফনেরে কি কমু হিমু ভাই? আফনে তো সব এ জানেন। হাত কচলাতে কচলাতে আই মরান আবারো ফিস ফিস করে বলে খবর পাইছি ওইখানে নাকি এক বাবা আছে। হিমু ভাই...... সে এক বিশাল কারবার।

বাবার পাশে বসলেই নাকি পিনিক চইলা আসে। গাঁজা খাওন লাগেনা, আর সে কি ভুর ভুর গাজার গন্ধ হিমু ভাই। বাবা গাজার পাতা পানি দিয়া গিলা গিলা খায়। হাজার হাজার মানুষ বাবার আসরে বইসা গাঁজা ছাড়াই পিনিক করে। উফ হিমু ভাই আমার তো গায়ের পশম দাড়ায়ে যাইতেছে, দেখেন দেখেন এই বলে আই মরান পাঞ্জাবি এর হাতা গুটিয়ে দেখায়।


আমি কথার মোড় ঘুরাবার জন্য বললাম, আকামাহিদুজ্জামান ভাই এর কি অবস্থা রে? তাকে আমার একটু দরকার ছিল ।
আকামাহিদুজ্জামান ভাই? উনি তো বেজায় ভাল মানুষ। আমারে তো উনি ই সিলেট লইয়া যাইব। তা হিমু ভাই আফনের উনার লগে কি কাম?
এই দেশের একটু খোঁজ খবর নিতাম আর কি, দেশের ঠিকাদারি নাকি আকামাহিদুজ্জামান ভাই একাই নিয়ে নিছে? আর তোদের কে পচানো নাকি তার একমাত্র কাজ?
হেঁহেঁ ...... হিমু ভাই যে কি কন না! আফনেরে গোপন কথা কই, এগুলান তো ইন্টারনাল বেপার সেপার। ভাই এমনিতে খুবি ভালো মানুষ, আমারে ব্যাপক স্নেহ করেন।

আফনের লগে দেখা হইলে আমার সালাম দিয়েন আর সিলেটের বেপার টা একটু কনফার্ম কইরেন।



আবার কবে হরতাল শুরু হবে, কবে রাস্তা ঘাট একটু ফাঁকা হবে এই সব ভাবছিলাম আকামাহিদুজ্জামান ভাইয়ের ড্রইং রুমে বসে।
কি হিমু সাহেব যে! কি খবর কেমনা আছো?
কেমন জানি সুন্দর একটা গন্ধ পাচ্ছি। গন্ধটা একদম পরিচিত না আবার অপরিচিত ও না। গন্ধের উৎস ধরার চেষ্টা করছি, ধরতে পারছিনা।

হঠাৎ করে মনে হল গন্ধ টা আসছে আকামাহিদুজ্জামান ভাই এর হাতের গ্লাস থেকে।
আমাকে গ্লাসের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললেন, নতুন আনিয়েছি, স্কচ এইটা। খুবি ভালো জিনিস , বুঝলা?
আমি আর উত্তর দিতে গেলাম না , বললাম_ ভালো আছেন আকামাহিদুজ্জামান ভাই?
আকামাহিদুজ্জামান ভাই জবাব দিলেন না, তবে সিগারেট ধরালেন। গম্ভীর মুখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন বেশ কিছুক্ষণ, এর পর ভ্রূ কুঁচকিয়ে প্রশ্ন করেলেন,
কি হেতু তে আসা হয়েছে তোমার? কোন প্যাঁচ ছাড়া তো তোমার আসার কথা না !
হিমু!
জি ভাই।
ঝেড়ে কাশো তো !
আমি হেসে বললাম , দেশের খোঁজ নিতে আসা আপনার কাছে ভাই।

আপনার কাছে নাকি পুরা দেশের ঠিকা পরেছে? আর তারিয়াক জিয়ান নাকি সোনার মানুষ? তা বলতে পারেন এইসব ব্যাপারে একটু খোঁজ খবর নিতে আসলাম আর কি।
আকামাহিদুজ্জামান ভাই একটু মুচকি হাসলেন, বললেন একটা জোকস দেখছিলা ? ওই যে তারিয়াক জিয়ান বলছে আমি ঘুষ খাইনাই আর সাথে সানি লিওন বলছে আমি ভার্জিন ?
হুম, এই ধরনের কিছু একটা বাদল এর কাছ থেকে শুনেছিলাম। কি নাকি মুখ বই তে বের হয়েছে জোকস টা?
আরে ওইটা তো ফেক একাউন্ট থেকে আমি ই দিয়েছিলাম, এই বলে সিগারেটে টান দিতে থাকলেন আকামাহিদুজ্জামান ভাই। সবই রাজনীতির খেলা বুঝলা? তুমি এইসব নিয়ে মাথা ঘামাইওনা , তুমি সাধু সন্যাসি মানুষ তুমি এইসব বুঝবানা ।
আমি হাই তুলতে তুলতে বললাম, হায়রে ডেমোক্রেসি! অফ দ্যা পিপল, বাই দ্যা পিপল ফর দ্যা পিপল।


আকামাহিদুজ্জামান ভাই যেন তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন। এইসব সস্তা ফিলসফি আমার সাথে কপচাইবানা হিমু খবরদার। এইসব থার্ড রেটেড কথা বার্তা আমার জানা আছে।
আমি বেশ কায়দা করে বললাম_ আমার নাম হিমু, আমি এখন একটি ছড়া বলব
ছেলে গুম হল পাড়া জুড়াল
রাজনীতি এল দেশে
ভালো মানুষের ভান করে
আকামাহিদুজ্জামান যায় হেসে।
নিজের দলের দোষ ক্রুটিতে চোখ বন্ধ করে রাখে
তার একটা আঙ্গুল সর্বদা থাকে
আই মরানের ঝাঁকে ।


রাজনীতিক রা ঘুষ খেয়ে সব শেষ করেছে
সাধারণ মানুষ খাজনা দিবে কিসে?

এতক্ষনে আকামাহিদুজ্জামান ভাই এর ধৈর্য চ্যুতি ঘটল। তিনি প্রায় বিদ্যুৎ চমকের মত উঠে এসে প্রচণ্ড একটা চড় বসিয়ে দিলেন আমার গালে। তার চিৎকারে সারা বাড়ির লোকজন সব এক হয়েছে। হিষ্টিরিয়া রোগীর মত রাগে কাপছেন আকামাহিদুজ্জামান ভাই। এই শুয়োরের বাচ্চা রে ঘাড় ধরে বের করে দে, সাথে পাছার কষে দুইটা লাথি ও মেরে দিস।


সবার অশেষ কৃপা, ধাক্কা দিয়ে বের করে দিলেও লাথি টা আর দেয়নাই। ধাক্কা খেয়ে রাস্তার উপর যেয়ে পড়লাম । আকামাহিদুজ্জামান ভাই এর সাথে আরেকটা দরকার ছিল, মুখ বই তে একটা একাউন্ট খুলে দিতে বলতাম উনাকে। একাউন্ট খুলার জন্য ইন্টার এর সার্টিফিকেট আর জন্ম নিবন্ধনের কাগজ ও নিয়ে এসেছিলাম ব্যাগে করে। কিন্তু আবার ভিতরে যাওয়া সমুচিন হবেনা বলে রাস্তায় বেড়িয়ে পড়লাম।


অনেক দূর হাঠতে হাঠতে শেষমেশ একটা রাধাচূড়া গাছের নিচে এসে দাঁড়ালাম। পত্রে- পুষ্পে সে ঝলমল করছে। আমি গাছের গায়ে হাত রাখতেই গাছ বলে উঠল......

“হে মানব সন্তান! তোমরা কাউকে অন্ধের মত বিশ্বাস করিওনা। কেউ নিজ স্বার্থ ত্যাগ করিতে পারিলেই তবেই শুধুমাত্র তাকে বিশ্বাস করিও। আর একমুখী ভালো মানুষ দের কাছ থেকে বাচিয়া থাকিও।

তুমি ভালো থেকো হিমু,তোমরা সবাই ভালো থেকো আর ভালো থাকুক সমগ্র দেশবাসি”।

সোর্স: http://prothom-aloblog.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।