নিষিদ্ধ হলে জামায়াতে ইসলামী ভবিষ্যতে কী করবে এ নিয়ে জনমনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। কারণ একাত্তরে গণহত্যাসহ সাত ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য জামায়াতে ইসলামী এবং এর তৎকালীন সহযোগী সংগঠন ও নেতা-কর্মীদের দায়ী করে তাদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের সুপারিশ করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। ইতোমধ্যে হাইকোর্ট জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন। বিষয়টি আপিল বিভাগে বিচারাধীন। আপিল বিভাগ এ রায় বহাল রাখলে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করবে নির্বাচন কমিশন।
জামায়াত নিষিদ্ধ হওয়া তখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রথমে তদন্ত সংস্থার পরবর্তী কার্যক্রমের দিকে নজর রাখবে দলটি। এরপর ট্রাইব্যুনালে শুনানি শুরু হলে আইনি প্রক্রিয়ায়ই তা মোকাবিলা করবে। পাশাপাশি বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর রাজনৈতিক সহায়তা চাইবে তারা। এর পরও দলের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা হলে নতুন আঙ্গিক ও নতুন নাম ধরে রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু করবে জামায়াত।
রাজপথে আরও বেশি হার্ডলাইনে যাওয়ার বিষয়টিও তাদের ভাবনায় রয়েছে। এ শক্তি প্রদর্শন কত দিন অব্যাহত থাকবে, এর ওপর নির্ভর করছে রাজনৈতিক সহিংসতার মাত্রা কতটা বাড়বে সে প্রশ্নটি। নাম পরিবর্তন, আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের মতো আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাওয়াসহ নানা পরিকল্পনা থাকলেও দলটির অধিকাংশ নেতা-কর্মী দেখতে চান, আসলেই নিষিদ্ধ করা হয় কি-না। এ প্রসঙ্গে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান বলেন, 'রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য জামায়াতের বিরুদ্ধে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কল্পকাহিনী রচনা করে জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সরকারের তদন্তকারী সংস্থা কর্তৃক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। প্রতিবেদনে যে সাতটি অভিযোগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে এর সঙ্গে জামায়াতের কোনো সম্পর্ক নেই।
এর সবই মিথ্যা, বানোয়াট ও দুরভিসন্ধিমূলক। আইনগতভাবে ও জনগণকে সঙ্গে নিয়ে জামায়াতের বিরুদ্ধে সরকারের পরিচালিত সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করব। ' জানা যায়, নিষিদ্ধ জামায়াত-শিবির কর্মীদের ঠিকানা হবে কোথায় তা নিয়েও চলছে তুমুল আলোচনা। বছরের পর বছর যে কয়েক লাখ আনুগত্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নেতা-কর্মী তৈরি করেছে জামায়াত, তারা কোথায় যাবেন? শিবির কর্মীরাই বা কী করবেন? জানা গেছে, আপাতত আইনি লড়াইকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবে জামায়াত। আপিল বিভাগের রায় পক্ষে না এলে বিকল্প ভাবনাও রয়েছে তাদের।
এ ক্ষেত্রে রাজপথে আন্দোলনের পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ নেই এমন নেতাদের নেতৃত্বে নতুন দল গঠন করবে সংগঠনটি। আবার এমন ভাবনাও তাদের আছে, নিষিদ্ধ যদি শেষ পর্যন্ত হয়ই, তাহলে বাংলাদেশে নিবন্ধনকৃত অন্য যে ইসলামী দলগুলো রয়েছে, এগুলোর কোনো একটির ওপর ভর করতে পারে জামায়াত। জানা যায়, নিষিদ্ধ হওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন দলের একটি অংশ। আরেকটি অংশ মনে করছে, আপিল বিভাগের মাধ্যমে বাতিল হওয়া দলের নিবন্ধন ফিরে পাবে। সূত্র জানায়, জামায়াত নেতা-কর্মীদের বিশ্বাস, সরকার দলটিকে নিষিদ্ধের মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নেবে না।
এর পরও নিষিদ্ধ করলে রাজনীতির মাঠে টিকে থাকতে যা করণীয় এর সবই করবে জামায়াত। সংগঠনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য হামিদুর রহমান আযাদ জানান, জামায়াতের নিবন্ধনের বিষয়টি বিচারাধীন। হাইকোর্টের রায়টি বিভক্ত। এখানে অনেক সাংবিধানিক বিষয় জড়িত। তিনি বলেন, 'আশা করি হাইকোর্টের দেওয়া রায় উচ্চ আদালতে স্থগিত হবে।
জামায়াত ন্যায়বিচার পাবে। ' দলটির মজলিশে শূরার প্রবীণ এক সদস্য বলেন, 'তদন্ত সংস্থার কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করছি। প্রথমত আইনি পথে সমাধানের চেষ্টা করব। প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে নতুন কিছু ভাবব। ' জানা যায়, রাজনীতির মাঠে টিকে থাকতে বিকল্প সব পথেই হাঁটছেন নেতারা।
জামায়াত নিষিদ্ধ হলে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ নেই এমনদের সামনে রেখে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণ, জনকল্যাণ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে উদারনৈতিক নতুন দল গঠনের কথা ভাবা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে মিসরের মুসলিম ব্রাদারহুড এবং তুরস্কের জাস্টিস একে পার্টির ইতিহাস সামনে রেখে এগোচ্ছেন তারা। ব্রাদারহুড ও জাস্টিস একে পার্টির সঙ্গে জামায়াতের আদর্শিক মিল রয়েছে। রয়েছে যোগাযোগও। অনেকটা কাছাকাছি সময়ে এসব দল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে এসব দল কয়েকবার নিষিদ্ধ হয়। এরপর নতুন নামে রাজনীতি করতে থাকে দলগুলো। স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল হিসেবে কর্মকাণ্ড চালালেও একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করার জন্য কখনোই ক্ষমা চায়নি জামায়াত। বরং দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতারা স্বাধীনতার পরও বলেছিলেন, একাত্তরে তাদের ভূমিকা সঠিক ছিল। এটি ছিল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।
নিষিদ্ধ না হলেও জামায়াত এখন বিপর্যস্ত। মগবাজারের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, পুরানা পল্টনের মহানগর অফিসসহ অধিকাংশ মহানগর, জেলা-উপজেলা কার্যালয় এখন তালাবদ্ধ। প্রকাশ্যে কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারছে না দলটি। জামায়াত-শিবির দমনে কঠোর অবস্থানে রয়েছে সরকার। স্বাধীনতার পর এমন সংকটে আর পড়তে হয়নি দলটিকে।
নিষিদ্ধ দলের মতোই চলছে সংগঠনটির কার্যক্রম। চলমান উপজেলা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তৃণমূলে দলকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছেন নেতারা। দলটি নিষিদ্ধ ঘোষণা নিয়ে রয়েছে নানা বিতর্ক। প্রসঙ্গত, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করে। এ সময় তারা ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক লীগ (আইডিএল) নামে তাদের কার্যক্রম চালায়।
পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমানের সরকার বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করলে জামায়াত আবার রাজনীতিতে ফিরে আসে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।