আদর্শ শাসক ছিলেন প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম। পরিচালনা করেছিলেন দেশ। পুরো আরব জাহানের শাসক ছিলেন হজরত ওমর ফারুক (রা.)। বিলাসবহুল গাড়ি-বাড়ি আর সম্পদের আকর্ষণ ছিল না তাদের অন্তরে। আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা আর খোদাভীতিই ছিল তাদের অন্যতম পুঁজি।
একবার হজরত ওমর ফারুক (রা.) নবী রাসূল (সা.)-এর ঘরে গিয়ে দেখেন শুকনো কয়টা খেজুর ছাড়া আর কিছু নেই খাবার। শোয়ার জন্য নরম কোনো বিছানার ব্যবস্থা ছিল না। ফলে পিঠে চাটাইয়ের দাগ বসে গিয়েছিল। এ অবস্থা দেখে ওমর (রা.) বলে উঠলেন, রোম-পারস্যের বাদশারা কত আরাম-আয়েশে থাকে। আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করুন যেন আপনার সাহাবাদের কিছু সম্পদ হয়ে যায়। ওমরের কথা শুনে তিনি ভীষণ রেগে গেলেন এবং বললেন, তুমি এখনো শোধরাওনি। সম্পদের সঙ্গে আমাদের কী সম্পর্ক। আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়া দিয়েছেন আর আমাদের জন্য রেখেছেন আখেরাত। এই ছিল শাসক, যার শোয়ার কোনো আয়েশি বিছানা ছিল না। সব কিছু বর্জন করেছিলেন আখেরাতের আশায়। নবী চাইলে কী না পেতেন? তিনি চাইলে ওহুদ পাহাড় স্বর্ণ করে দিতেন মহান আল্লাহ। কই তিনি তো বিলাসী জীবন চাননি। একেই বলে প্রকৃত ও আদর্শ শাসক।
নবীর আদর্শে আদর্শবান হয়ে দেশ পরিচালন করেছিলেন হজরত ওমর ফারুক (রা.)। খলিফা হয়েই ঘোষণা দেন, আমার রাজ্যে যদি একটা কুকুরও মারা যায় না খেয়ে তার জবাব দিতে হবে আমাকে আল্লাহর কাছে। সে চিন্তাতেই রাতে অাঁধারে প্রজাদের দুয়ারে ঘুরে ঘুরে খোঁজ নিতেন কারও কোনো সমস্যা আছে কিনা।
সিরিয়া বিজয়ের পর যখন তিনি সে এলাকা সফর করেন, তখন সফরসঙ্গী ছিল তার এক গোলাম। আর দুজনের মধ্যে বাহন ছিল একটি মাত্র উট। কিছুক্ষণ তিনি উটে চড়তেন আর গোলাম লাগাম টানত। কিছুক্ষণ গোলাম উটে চড়ত আর তিনি লাগাম টানতেন। এভাবেই চলছিলেন পথ। সিরিয়ার প্রবেশদ্বারে এসে গোলাম আরজ করল আপনি উপরে উঠুন, নয়তো মানুষ আমাকেই খলিফা মনে করবে। হজরত ওমর (রা.) উত্তর দিলেন, কে কী মনে করল সেটা দেখার বিষয় না। সিরিয়াল মতো এবার তুমিই উটের ওপর থাকবে। খলিফাতুল মুমিনীন এভাবেই সিরিয়া প্রবেশ করছেন।
এই ছিল শাসকের শান। বিলাসবহুল গাড়ি-বাড়ি আর আয়েশি জিন্দেগিতে থেকে দুঃখী মানুষের দুঃখ জানা যায় না। বোঝা যায় না জনগণের করুণ দশা। আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা আর ভয় রেখে চলেছিলেন তারা। তাই তাদের শাসনামলে কোনো অন্যায় কাজ হয়নি। বনের হিংস্রপ্রাণীও সাহস করেনি কারও ওপর অন্যায় আক্রমণ করতে। তাই তো ওমরের শাসনামলে বাঘ-ছাগলকে এক ঘাটে পানি পান করতে দেখা যেত। ছাগলের ওপর আক্রমণ করার দুঃসাহস দেখায়নি বাঘ। সেই অনাবিল শান্তির দিনগুলো ফিরে পেতে হলে যেতে হবে পেছনের যুগে। গ্রহণ করতে হবে নবীর আদর্শ আর ওমরের তাকওয়া। আল্লাহপাক শাসকগোষ্ঠীর বিবেক দান করুন। আমিন।
লেখক : খতিব, বাইতুল মারুফ জামে মসজিদ, টিভি রোড, রামপুরা, ঢাকা।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।