আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সোভিয়েত বৈমানিক এবং মহাকাশচারী ইউরি গ্যাগারিন। তিনিই সর্বপ্রথম ব্যক্তি যিনি ১৯৬১ সালের ১২ই এপ্রিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের ভস্টক নামক নভোযানের নভোচারী হয়ে পৃথিবীর কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করে সাফল্যের সংগে পৃথিবীতে ফিরে আসেন। এর ফলে গ্যাগারিন মানবজাতির ইতিহাস মহাশূন্যে প্রবেশকারী প্রথম মানুষ হন। ঐতিহাসিক এই ভ্রমনের জন্য গ্যাগারিন আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করে দেশে বিদেশে বহু পুরস্কার এবং পদক লাভ করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের ব্যাপার ১৯৬৮ সালের ২৭ মার্চ মাত্র ৩৪ বছর বয়স্ক গ্যাগারিন মস্কোর উপকন্ঠে সাধারন জংগী বিমানের উড্ডয়নের প্রশিক্ষনে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
আজ এই মহাকাশচারীর ৪৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। মৃত্যুৃবার্ষিকীতে তাকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়।
ইউরি গ্যাগারিন ১৯৩৪ সালের ৯ মার্চ মস্কো থেকে ১৬০ কিলোমিটার পশ্চিমের এক ছোট গ্রাম ক্লুসিনো ( Klushino) জন্মগ্রহন করেন। তার প্রকৃত নাম ইউরি আলেকশেইভিচ গ্যাগারিন। বাবা অ্যালেক্সি পেশাগত ভাবে ছিলেন যৌথখামারের একজন কাঠমিস্ত্রী এবং মা আন্না দুগ্ধখামারে কাজ করতেন।
সাধারণ সেই কৃষক পরিবারের জীবন আরও কোটি কোটি রাশানের জীবনের মতই চিরতরে পরিবর্তিত হয়ে যায় ১৯৪১ সালে যখন ৩০০০ কিলোমিটার সীমান্ত জুড়ে হিটলারের নাৎসি বাহিনীর কামানের গর্জনে। ছোট্ট ইউরি যুদ্ধের মাঝে বেড়ে উঠতে থাকেন উৎকণ্ঠা এবং জীবনের কালো দিককে সাথী করে। কৈশরেই ইউরি মহাকাশ এবং গ্রহ সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং তার মহাকাশ যাত্রা নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু করেন যা একদিন বাস্তবে পরিণত হয়। লুবার্টসিতে এক বছর একটি ভোকেশনাল কারিগরী স্কুলে পড়ার পর, গ্যাগারিন সারাতোভে একটি কারিগরী উচ্চ বিদ্যালয়ে আরও পড়াশোনার জন্য নির্বাচিত হন। সেখানে পড়ার সময়ে তিনি "অ্যারোক্লাবে" যোগ দেন, এবং সেখানে হাল্কা বিমান চালনার প্রশিক্ষণ নেন, যা ছিল তার শখের একটি বড় অংশ।
(ভ্যালেন্টিনা গোরেচেভার সাথে ইউরি গ্যাগারিন)
১৯৫৫ সালে কারিগরী বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে ইউরি ওরেনবার্গে পাইলট'স স্কুলে যুদ্ধবিমান চালনা প্রশিক্ষণে ভর্তি হন। সেখানে ভ্যালেন্টিনা গোরেচেভার সাথে তার পরিচয় হয়। ১৯৫৭ সালে মিগ-১৫ চালনায় উইং লাভের পর তিনি ভ্যালেন্টিনা গোরেচেভার বিয়ে করেন। যুদ্ধবিমান চালনা প্রশিক্ষণে পোস্ট-গ্র্যাজুয়েশন লাভের পর তাকে নরওয়েজীয় সীমান্তের কাছে মুরমানস্ক অবলাস্টে অবস্থিত লুওস্তারি এয়ারবেইজে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর পর ১৯৫৭ সালের ৫ই নভেম্বর তিনি সোভিয়েত বিমান বাহিনীতে লেফটেনেন্ট পদ লাভ করেন এবং ১৯৫৯ সালের ৬ই নভেম্বর সিনিয়র লেফটেনেন্ট পদে পদন্নতি পান।
সেই বছরের ৪ অক্টোবর ঘটে যায় ইতিহাস, মহাকাশে প্রবেশ করে প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ স্পুটনিক! ইউরি তখন ব্যস্ত তার পরীক্ষা নিয়ে, যার পরপরই চাকরির সুবাদে বদলি ঘটে সুমেরু বৃত্তের কাছে মারমানস্ক অঞ্চলে। ১৯৫৯র অক্টোবরের সারা সোভিয়েত ইউনিয়নের সমস্ত বিমান ঘাটি জুড়ে শুরু হয় এক রহস্যময় দলের আগমন। তারা বিশেষ অজানা কাজের জন্য কিছু পাইলটকে বাছাই করছিল। সেখানে সারা সোভিয়েত ইউনিয়নের সম্ভাব্য ২২০০ প্রার্থীর মধ্য থেকে তন্ন তন্ন করে বাছাই করে নেওয়া ২০ জন কসমোনাটের যাদের একজন একজন ২৬ বছর বয়স্ক ইউরি যেখানে তার সাথে পরিচয় হয় বাকীদের। যাদের মাঝে পরবর্তীতে মহাকাশযাত্রা করে বিশ্বখ্যাত হয়েছেন জন গেরম্যান তিতভ এবং অ্যালেক্সেই লিওনভ।
তিতভ (Gherman Stepanovich Titov) ইতিহাসের কনিষ্ঠতম নভোচারী যিনি মাত্র ২৫ বছর বয়সে মহাশূন্যে গমন করা সোভিয়েত কসমোনাট এবং প্রথম মানুষ যিনি মহাশূন্যে ২৪ ঘণ্টার বেশী থেকে ১৭ বার পৃথিবীকে প্রদিক্ষণ করেছিলেন, ঘুমিয়েছিলেন, স্পেস সিকনেসে আক্রান্তও হয়েছিলেন এবং প্রথমবারের মত মহাশূন্য থেকে পৃথিবীর ছবি তুলেছিলেন।
(১৯৫৭ সালে অভিযানের পোশাক পরিহিত অবস্থায় নভোযানে লাইকা)
স্পুটনিকের পর মহাকাশের প্রথম জীব হিসেবে লাইকা নামের কুকুরটা ইতিহাসের বিখ্যাততম সারমেয় হয়ে গেল। তার পরপরই ৩৫০০ চিঠি এসেছিল সোভিয়েত একাডেমী অফ সায়েন্সের কাছে স্বেচ্ছাসেবীদের কাছে থেকে, সবাইই মহাকাশে যেতে ইচ্ছুক, কেউই জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবিত ছিল না, সবাই চেয়েছিল নীল গ্রহটাকে আসল রূপে একপলক দেখতে, ইতিহাসে অমরত্ব নিশ্চিত করতে। ভোস্টকের আটো সীটে আটার জন্য কিছুটা খর্বাকৃতির নভোচারী দরকার ছিল সেই হিসেবে লিওনেভ রেস থেকে ছিটকে পড়েন। উচ্চতায় ৫ ফিট দেড় ইঞ্চি ইউরি টিকে যান, এবং তিতভও।
১৯৬১ মার্চের শেভ ভাগে ইউরি জরুরী কাজে বিকানুর যান । সেখানে কসমনাটদের শেখানো হয় স্পেস স্যুট পরা এবং খোলা। বিশেষ ইন্টারভিউয়ের জন্য হাজির হন আরেক মহাপরাক্রমশালী ব্যক্তি, সোভিয়েত মহাকাশ যাত্রার কসমোনাট প্রসিক্ষণের প্রধান জেনারেল নিকোলাই পেত্রোভিচ কামানিন। করোলভ এবং কামানিন তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখছিলেন এই দুইজনের উপরে, এবং কামানিনের মতে তিতভ ছিলেন অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী চরিত্রের, ফলে তাকে রাখা হয় ২য় মহাকাশ অভিযানের জন্য যা কিনা ২৪ ঘণ্টার বেশী সময় পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে থাকবে আর ইউরিকে নির্বাচিত করা হয় প্রথম মানুষ হিসেবে দুই ঘণ্টারও কম সময়ের প্রথম যাত্রার জন্য। অবশেষে বিশেষ মিটিং ডেকে জানানো হয় ইউরি গাগারিন হতে যাচ্ছেন প্রথম অভিযানের কমান্ডার এবং তিতভ তার ব্যাকআপ।
এরপর ঐতিহাসিক যাত্রা শুরু আগের টানটান উত্তেজনায় শুরু হল ১০৮ মিনিটের সেই অবিস্মরণীয় মহাযাত্রার। পূর্ব নির্ধারিত সময়ে ১২ এপ্রিল, ১৯৬১, মস্কো সময় সকালে ৯ টা ৬-এ রকেটের উড্ডয়ন শুরু। এরপরে স্বয়ং ইউরির কথাতেই বলা হয়েছে ঘণ্টায় ২৮,০০০ কিলোমিটার বেগে ছুটে চলা মহাকাশযান থেকে রিপোর্টে তিনি জানান সব ঠিক আছে, জানালা দিয়ে মেঘ দেখা যাচ্ছে, সব কিছুই দেখা যাচ্ছে এবং সবকিছুই খুবই মনোমুগ্ধকর। মহাশূন্য থেকে ১০৮ মিনিট পরে অবতরণ করলেন প্রথম নভোচারী ইউরি, ছোট গ্রাম Smelkovkaতে, ট্রাক ড্রাইভার ইয়াকভ লুসেঙ্কো তাকে দেখলেন প্যারাস্যুটে করে ঝাপিয়ে পরতে, সেদিকে তিনি এগোলেন গ্রামবাসীদের সাথে নিয়ে, এবং গাগারিন হাসিমুখে তাদের বললেন- আমি ইউরি অ্যালিক্সিয়েভিচ গাগারিন, মহাকাশের প্রথম মানুষ। এখনই অনেক মানুষ, গাড়ী, ক্যামেরা আসবে এইখানে, তোমার কোথাও যেও না, এই স্মৃতি আমরা বাঁধিয়ে রাখব।
মায়ের সাথে দেখা করে ক্রন্দনরত মাকে মিথ্যা সান্ত্বনা দিয়ে ইউরি বলেছিল, আমি আর এমন কাজ করব না মা, প্লিজ কান্না থামাও।
এরপর শুরু হয়ে যায় ইউরির এক অন্যধরনের জীবনে, যেখানে সে একজন সুপার হিরো, বিশ্বের নানা প্রান্তে যেতে হয়, মিশতে হয় হাজারো লোকের সাথে, পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলোতেও লাখো লাখো মানুষ তার জন্য দাড়িয়ে থাকে। কানাডায় দার্শনিক বাট্রান্ড রাসেলের সাথে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে একটা সেমিনারে মূল আকর্ষণ হিসেবে অংশ নেন তিনি। এর পরপর জান কিউবাতে, বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর সাথে দেখা করেন। কিন্তু নিজের এই সুপার হিরো ইমেজ অসহ্য বোধ হচ্ছিল ইউরির কাছে, তার মতে সে খুব সাধারণ একজন মানুষ, ভুলচুক সবসময়ই হয়, দুর্বলতা আছে তার।
জাঁকালো এই সকল অনুষ্ঠানের মাঝে গুরু করোলভের জন্য অন্য অনুভূতি কাজ শুরু করে ইউরির মনে, করোলভ ছিলেন রাষ্ট্রীয় সিক্রেট, তার কোন মেডাল পরার অনুমতি ছিল না, প্যারেডে থাকার অনুমতি ছিল না, মিডিয়াতে কথা বলা দূরে থাক। নোবেল প্রাইজ কমিটি পৃথিবীর প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ এবং প্রথম মানবকে মহাশূন্যে পাঠানোর পিছনের মূল মানুষটিকে পুরস্কার দেবার ইচ্ছা প্রকাশ করে সোভিয়েত কতৃপক্ষকে চিঠি দিলেও তারা সেটার কোন উত্তর দেবার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে নি। এর মাঝে সোভিয়েত মহাকাশ অভিযানের উপরে আসে সবচেয়ে বড় আঘাত, ক্যান্সারে ভুগে করোলভ মাত্র ৫৯ বছর বয়সে মারা যান ১৯৬৬র প্রথম দিকে, এত বড় আঘাত সামাল দেওয়া আর সম্ভব হয় নি অত বড় রাষ্ট্রের পক্ষেও। জীবনের শেষ অপারেশনের মাত্র দুই দিনে আগে ইউরি এবং লিওনভ দেখা করতে গিয়েছিলেন গুরুর সাথে, তাদের কাছে জীবনে প্রথমবারের মত তার উপরে চলা নির্মম অত্যাচারের কথা বলেন করোলভ, বলেন পুলিশের পীড়নের কথা, সাইবেরিয়ার নির্বাসনের কথা, সেখান থেকে ফেরার পথে মুচিগিরি এবং মজুরি করে ট্রেন ভাড়া জোগাড়ের কথা। গুলাগের দিনগুলোর কথা আর কোথাও বলেননি সর্বকালের অন্যতম সেরা এই বিজ্ঞানী।
গুরুর মৃত্যুর পরে ইউরি বলেছিলেন করোলভের দেহভস্ম চাঁদে না নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত আমার শান্তি নেই। কসমোনাটরা যোগসাজশ করে উনার দেহভস্মের কয়েক মুঠো পরের মহাকাশযাত্রা অভিযানের সময় শূন্যে ছড়িয়ে দিয়েছিলে বলে শোনা যায়।
এত জনপ্রিয়তার মাঝেও নিজের অজান্তেই পরম শক্তিশালী শত্রু তৈরি করে ফেলেছিলন সদাহাস্যরত ইউরি গ্যাগারিন। নিকিতা ক্রুশ্চেভ তাকে যেমন তার আমলের সাফল্যের প্রতীক হিসেবে সারা বিশ্বের কাছে তুলে ধরত, ততই পরবর্তী সোভিয়েত প্রধান ব্রেজনেভের কাছে চক্ষুশুল হয়ে গেলেন তিনি। অথচ তাদের মধ্যে ব্যক্তিগত কোন সমস্যা ছিল না।
ব্রেজনেভ ক্ষমতায় আসার পরে ইউরির প্রভাব, সুযোগ সুবিধা প্রায় রাতারাতি উধাও হয়ে গেল। এই নিয়ে তিনি শুধু বলেছিলেন ব্রেজনেভকে আমি পছন্দই করতাম কিন্তু কোনদিন তার কাছে যেয়ে মনের কথা বলতে পারলাম না। অন্যদিকে প্রতিপক্ষ ক্রুশ্চেভের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত হওয়ায় গ্যাগ্যারিনকে যতদূর সম্ভব দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ব্রেজনেভ। এর মধ্যে সয়ূজ দুর্ঘটনায় ভ্লাদিমির কোমারভ মারা যান, যেই মিশনে ব্যাকআপ হিসেবে ছিলেন ইউরি। এই ভয়াবহ ঘটনার পর সয়ূজের পরবর্তী যান ঠিক করতে ২ বছরের সময়সীমা নির্ধারণ করে ইউরির আকাশে ওড়ার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
যদিও যুদ্ধ বিমান চালানোর অনুমতি আদায় করে ফেলেন তিনি পরবর্তীতে। তার পরের ঘটনা যথেষ্ট রহস্যজনক, ১৯৬৮র ২৭ মার্চ মিগ বিমানের প্রশিক্ষণ দেওয়ার সময় তার বিমানটি বিধ্বস্ত হয়, ইউরি সহ অপর বৈমানিকের দেহ খণ্ড খণ্ড হয়ে পুরো এলাকার উপরে ঝরে পরে। মাত্র ৩৪ বছর বয়সে ইউরি আমাদের ছেড়ে চলে যান চিরতরে, অথচ উনার স্বপ্ন ছিল চাঁদে যাবার। এখন পর্যন্ত তার মৃত্যুর কারণ চুলচেরা করে জানা সম্ভব হয় নি, তবে তার পরিবারের অনেকেই মনে করত স্বয়ং ব্রেজনেভের আদেশে তাকে হত্যা করা হয়েছে,যদিও এই ধারণার পক্ষে কোন প্রমাণ পাওয়া যায় নি। হতে পারে কোন পাখির সাথে লেগে প্লেনটি দুর্ঘটনায় পড়েছিল, অথবা পাশ দিয়ে ছুটে যাওয়া কোন দ্রুত গতির বিমানে সুপার সনিক বীমের ফলে সৃষ্ট অয়েভে স্পিন করে এই দুর্ঘটনা ঘতেছিলে।
কেজিবি এই ঘটনার তদন্ত করেছিল একাধিকবার, এমনকি বছর কয়েক আগেও নতুন করে খতিয়ে দেখা হয়েছিলে একমাত্র সোভিয়েত সুপারহিরো যিনি কিনা আদতে মানবজাতির সুপারহিরো, তার মৃত্যুর কারণ।
অবশেষে ২০ বছর পর উন্মোচিত হলো ইউরি গ্যাগারিনের অকাল মৃত্যু রহস্য! তার বিমান বিধ্বস্ত হওয়া এবং মৃত্যুর কারণ নিয়ে এতদিন অনেক জল্পনা, কল্পনা, তদন্ত হয়েছে। অবশেষে এই ব্যপারে সত্য কথাগুলো বলার জন্য মুখ খুলেছেন অ্যালেক্সেই লিওনভ। তিনি হচ্ছে মহাশূন্যের বুকে হেঁটে বেড়ানো প্রথম মানুষ। বহুদিন পর লিওনভ এই মর্মস্পর্শী ঘটনার অনেক অজানা তথ্য আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন।
লিওনভ গত ২০ বছর ধরে এই চেষ্টা করে গিয়েছেন ১৯৬৮ সালের সেই মর্মান্তিক দিনটিতে আসলে কি হয়েছিল সেটা প্রকাশ করতে। কিন্তু তাঁকে অনুমতি দেয়া হয় নি। সম্প্রতি উন্মোচিত হওয়া তদন্ত রিপোর্ট বলছে, গ্যাগারিনকে বহনকারী বিমানের খুব কাছ দিয়েই একটি অজ্ঞাত SU-15 যুদ্ধ বিমান উড়ে যাচ্ছিল। লিওনভ সেসময় প্যারাসুট প্রশিক্ষণ দেয়ার দায়িত্ব ছিলেন। তিনি এখনো সেদিনটি স্মরণ করতে পারেন।
সেদিন অনেক তুষারপাত আর সাথে বৃষ্টিও হচ্ছিল। এছাড়া বাতাসের বেগ বেশি থাকায় লিওনভ সেদিনের প্রশিক্ষণ সেশন বাতিল করবেন বলে চিন্তা করছিলেন। ঠিক এই সময়েই তিনি প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান। লিওনভ তখনই বুঝতে পারেন কোথাও ভয়াবহ কিছু একটা হয়েছে। লিওনভ জানতেন সেদিন SU-15 যুদ্ধবিমানের পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন হবার কথা।
কিন্তু সেটির ওড়ার কথা ১০ হাজার মিটার বা তারও বেশি উচ্চতায়। অথচ গ্যাগারিনদের বিমানের সাথে সংঘর্ষ হওয়া বিমানটি উড়ছিল মাত্র ৪০০-৫০০ মিটার উচ্চতায়! বিমানটি ঘণ্টায় ৪৫০ মাইল বেগে আছড়ে পড়ে গ্যাগারিনদের বিমানের উপর। এর মাত্র ৫৫ সেকেন্ড পর বিমানটি নভোসেলোভো নামে একটি গ্রামে বিধ্বস্ত হয়। ভালাদিমির ও গ্যাগারিনের মৃতদেহ সেখানেই পড়ে থাকতে দেখা যায়।
ইউরি গাগারিন ছিলেন এমন একজন যাকে মানুষ ভালবেসেছিল।
মানবজাতির সুপারহিরো তিনি। আজ এই মহাকাশচারীর ৪৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। মৃত্যুৃবার্ষিকীতে সদা হাস্যময় ইউরি গ্যাগারিনকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।