আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজন শুকুর আলী

বিড়িটার পাছায় জোরে একটা টান দিয়ে ট্রাকের আড়ালে মুখ লুকিয়ে ধোঁয়া ছাড়ে শুকুর আলী। তার আর তর সইছে না। আজ একে তো শুক্রবার তার তাস খেলার দিন তার উপর এবার একটা দাওয়াত আছে। লাশ গোরস্থানে পৌঁছে দিয়ে ট্রাক পৌরসভার গ্যারেজে রেখে গিয়ে মনে হয় দাওয়াত টা আর খাওয়া হবে না। দাওয়াত বলতে তেমন সম্মানজনক কোন খাওয়া দাওয়া না।

মৃত মানুষের চল্লিশা। এই ধরনের দাওয়াত সাধারনত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে। ধনীর চাইতে গরীব মিসকিন লোকের আধিক্য থাকে সেসব অনুষ্ঠানে। তবে শুকুর আলী সেই গণদাওয়াতে নিজেকে খুব ইমপরর্টেন্ট ব্যক্তি বলে মনে করে। কারন যে মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে এই চল্লিশা, সেই মৃত ব্যক্তিকে শুকুর আলীই পৌরসভার ট্রাকে করে গোরস্থানে পৌছে দিয়ে এসেছে।

হামিদ তালুকদারের সম্পত্তির কোন অভাব নেই। রেখে গেছেন বিস্তর সম্পত্তি। নিশ্চই তার চল্লিশায় ব্যাপক আয়োজন হবে। গতকাল বিকেলেই শুকুর আলী হামিদ তালুকদারের বাড়ী রেকি করে এসেছেন। বাড়ীর বাইরে গোটা পঞ্চাশেক খাসি বাঁধা আজকের চল্লিশা উপলক্ষ্যে।

বাড়ীর উঠোনের সামিয়ানার নীচে চলছে কিভাবে আজকের অনুষ্ঠানের সকল আয়োজন সম্পন্ন হবে তার ব্রিফিং। এর মধ্যেই তালুকদার সাহেবের চোট ভায়রা শুকুর আলীকে দেখে তাকে উদ্দেশ্য করে আরেকবার দাওয়াত দিয়ে দিয়েছে। এজন্যই নিজেকে আরও বেশী ইমপরর্টেন্ট মনে করছে আজকের চল্লিশায়। কিন্তু লাশ বাড়ী থেকে দ্রুত বের করার কোন লক্ষনই শুকুর আলীর চোখে পড়ছে না। কথা ছিলো বাদ জুমা লাশ নিয়ে গোরস্থানের উদ্দেশ্যে রওনা হবে।

কিন্তু এই মাত্র তালুকদার সাহেবের মেজ মেয়ে-জামাই-নাতি এসেছেন। মৃত বাড়ীর ভেতরে আরেকচোট জোর কান্নার আওয়াজ শুকুর আলীর মেজাজ খারাপ করে দেয়। আজকের দাওয়াতটাই না জানি মিস করে হয়ে যায় এই জন্য। বাড়ীর বাইরে প্রচুর মানুষের সমাগম। তারা ফিসফিস করছে।

এর মধ্যেই মৃত ব্যক্তির বড় বোনজামাই দেখতে পেলো শুকুর আলী। সালাম দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো মামা ভালো আছেন। বোনজামাই তার দিকে কটমট করে তাকিয়ে চলে গেলো। শুকুর আলী ততক্ষনাৎ সম্বিত ফিরে পেলে ভাবলো বড় একটা ভুল হয়ে গেছে। মৃত বাড়ীর আতœীয় স্বজনের কাছে তিনি ভালো আছেন কিনা সেটা তার জিজ্ঞাসা করা উচিত হয়নি।

সে যাক। এখন অতো কিছু ভাবলে হবে না। লাশ যতো তারাতারি বের হবে শুকুর আলীর দাওয়াত ধরার সম্ভবনাও তত বেশী আর তা না হলে আজ দুপুরে কলা আর চিড়া ছাড়া কপালে কিছু জুটবে না। শুকুর আলীর মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। সে আজ সকালেই খবর পেয়েছে আজিজ খান ভোররাতে হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেছেন।

তো মারা যখন গেছেই তখন তো শুকুর আলীকে লাগবেই। কারন শুকুর আলী এই পৌর এলাকার একমাত্র লাশবাহী ট্রাকের হেলপার। কেউ মারা গেলেই তার ডাক পরে। এই জন্য সে মাঝে মাঝে নিজেকে শহরের খুব গুরুত্বপূর্ন লোক মনে করে। কারন শহরের সব বড় বড় লোক তাকে চেনে।

তার নাম ধরে ডাকে। কিন্তু সমস্যা হলো এলাকার ছোট ছোট পোলপান তার নামের বিকৃতি করে তারে শুক্রে বলে ডাকে। এটা তার চরম অপছন্দ। কিন্তু করার কিছু নাই। তার মতো লোকের অতো মাইন্ড করা চলে না।


- শুকুর তুই কিন্তু লাশ দাফন করে মানুষজনকে বাসায় এনে দিয়ে ট্রাক গ্যারেজে রাখবি, তারপর তোর ছুটি। জগলুল মেম্বার হুকুমের সাথে কথাগুলো বললো।
- আচ্ছা বড়ভাই। আপনি যেভাবে বলেন সেভাবেই হবে। শুকুরের তড়িৎ উত্তর।


- আর তুই রাতের বেলায় আমার বাসায় থাকবি আজ। তোর তো বাসায় বউছেলে মেয়ে নাই আজ।
- আচ্ছা বড়ভাই। আপনি যেভাবে বলেন সেভাবেই হবে।
জগলুল মেম্বার পান চিবুতে চিবুতে চলে গেলেন।

শুকুর আলী জগলুল মেম্বারকে কুত্তার বাচ্চা সহ বিভিন্ন প্রকার পশুর বাচ্চা বলে মনে মনে কয়েক বার গালি দিলো।
শুকুর আলীর আবাসস্থল এই জগলুল মেম্বারের বাড়ীর পাশে পতিত একটা বাগানে। আজ আটত্রিশ বছর ধরেই সেখানে বাস করছে শুকুর আলী। প্রথম জীবনে মেম্বারের বাড়ীর গরু ছাগলের দেখাশোনা করা ছাড়াও টুকটাক বাজার করা ও বাড়ী পাহারা দেওয়ার কাজ করতো। বাড়ী পাহারা মানে মেম্বার সাহেব একটা লুইচ্চা প্রজাতির প্রানী।

মাঝে মাঝেই তার বৌকে বাবার বাড়ীতে পাঠিয়ে দিতে বিভিন্ন রকমের মেয়ে মানুষ নিয়ে বাসায় এসে ফুর্তি করতো। তখন শুকুর আলীর দায়িত্ব থাকতো তার বাসার প্রবেশ পথে পাহারা দেওয়া। কেউ তার বাসার আসতে চাইলে শুকুর আলী তাদেরকে ফিরিয়ে দিতো মেম্বার সাহেবের শেখানো কথা মতো।
এই মেম্বার সাহেব একদিন রাতে শুকুর আলীকে রাতে ডেকে নিয়ে নতুন একটা পাঞ্চাবী দিয়ে বললো এইটা পড়। আজ তোর বিয়ে।

শুকুর আলী কিছুই ঠাহর করতে পারলো না। কি বিয়ে, কার সাথে বিয়ে। কিন্তু ভয়ে জগলুল মেম্বারকে কিছু জিজ্ঞাসা করতে পারলো না। সে রাতে মৌলভি ডেকে শুকুর আলীকে পাশের গ্রামের রতœার সাথে বিয়ে দিয়ে দিলো। রতœার বাবা মাটি কাটার সর্দার।

বর্ষাকালে যখন তার বাবার কাজকর্ম থাকতো না তখন রতœা জগলুল মেম্বারের বাড়ীতে ছুটা কাজ করতো। রতœার বাবার অধীনে অনেক লোক কাজ করে এই অহংকারেই রতœা শুকুর আলীকে পাত্তা দিতো না। মেম্বারের বাড়ীতে কাজ করতে গিয়ে রতœা যেভাবে শুকুর আলীকে দৌড়ের উপর রাখতো তাতে মনে হতো শুকুর আলী মেম্বারের বাড়ীতে নয় রতœার বাড়ীতে কাজ করে। এতে অবশ্য শুকুর আলী বেজায় খুশিই হলো। কারন রতœা দেখতে সুন্দরী কিন্তু তার নামে গ্রামে একটু আটকু উল্টাপাল্টা কথা প্রচলিত আছে।

অবশ্য শুকুর আলী সেসব নিয়ে চিন্তিত নয়। শুকুর আলী জানে ফলবান গাছে ঢিলটা একটু বেশীই পরে। যা হোক সমস্যা হলো যখন বিয়ের আট মাসের মাথায় শুকুর আলী পিতা হলো তখন এলাকার লোকজন রতœাকে নিয়ে আরও বেশী ফিসফাস শুরু করলো। শুকুর আলীকে গ্রামের কেউ কেউ বলতো কিরে শুকুর তোর ছেলের চেহারা তো জগুলুল মেম্বারের মতো হইছে। শুকুর আলী ভেবে পায়না জগলুল মেম্বারের মতো হইছে তো কি হইছে।

একজন মানুষের চেহারা তো আরেকজন মানুষের মতোই হবে। তার গ্রামে একবার চীন দেশ থেকে অনেক লোক এসেছিলো। সবার চেহারাই তো এক। আর কই পাশের বাড়ীর কালাম সর্দারের তো আজ এগার বছর হইলো বিয়ে হইছে তার তো কোন ছেলে মেয়ে হয়না। কই কেউতো তাকে নিয়ে হাসাহাসি করে না।

আর শুকুর আলীর না হয় একটু আগেই বাচ্চা হয়েছে। আসলে যত দোষ গরীবের,যত মস্করাও তাও গরীবের সাথে।

শুকুর আলীর খুব ইচ্ছা ছিলো খুব ধুমধাম করে নিজে বিয়ে করবে। অবশ্য সে অর্থিক ক্ষমতাও তার নাই। কিন্তু মেম্বার সাহেবকে বললে তিনি নিশ্চই না করতেন না।

কতো মানুষ বিয়ে করে খুব ধুমধাম করে। সামনে মটরসাইকেল এর বহর। তারপর গাড়ীর বহর। বরের গাড়ী আবার বাহারী ফুল দিয়ে সাজানো থাকে। ভিডিও করা হয়।

ছবি তোলা হয়। কেউ কেউ বাড়ীতে মরিচ বাতি জ্বালায়, পটকা ফোটায়, ব্যান্ড বাজায়। শুকুর আলীর বেলায় কিছুই হয়নাই। এই জন্য তার মনে অনেক অফসোস। সে মনে মনে ভেবে রেখেছে যদি রতœা খুব তারাতারি মরে যায় তাহলে সে আবার ধুমধাম করে বিয়ে করবে।

কিন্তু মরার সম্ভবনা সে দেখে না। শয়তান টাইপের মানুষ বাঁচে বেশিদিন। কিন্তু আবার ছেলেটার জন্য মায়াও লাগে। ঘরে যদি সৎমা এসে তার ছেলেকে নিজের ছেলের মতো করে মানুষ না করে তাহলে সে খুব কষ্ট পাবে। একটা দিক শুকুর আলী খুব গভীর ভাবে মিলিয়ে দেখেছে মানুষের বিয়ে করতে যাওয়ার সাথে কবরে যাওয়ার একটা মোটামুটি মিল আছে।

বিয়ে করতে গেলে যেমন গাড়ীর বহর যায়, বরের গাড়ীর দিকে যাত্রা পথের মানুষের আলাদা দৃষ্টি থাকে। কেউ কেই আবার জিগায় কার বিয়ে। ঠিক তেমনি লাশবাহী গাড়ীর সামনে পেছনেও গাড়ীর বহর থাকে। চলতি পথের মানুষের দৃষ্টি লাশবাহী গাড়ীর দিকে থাকে, কেউ কেউ আবার জিগায় কে মারা গেছে। অবশ্য অমিল ও আছে।

বিয়ের গাড়ীর সব সওয়াররা খুব হাসি খুশি মুডে থাকে কিন্তু লাশবাহী গাড়ীর সওয়ারদের চোখে পানি থাকে। শুকুর আলী ভেবে রেখেছে সে তার আশে পাশের মানুষকে বলে রাখবে সে যদি মারা যায় তাহলে যেন তার লাশও এইভাবে বহর নিয়ে গোরস্থানের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। বিয়ের সময় না হয় তার মনের আশাটা পুরন হয়নি, গোরস্থানে যাওয়ার সময় যেন তার আশাটা পুরন হয়।

ক্ষিদেটা পেটের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠে। কিন্তু লাশ বের করার কোন লক্ষন তার চোখে পড়ে না।

শুকুর আলী ভেতরে ভেতরে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। একবার ভাবে ওস্তাদকে বলি আমি দাওয়াতটা খেয়ে আসি। কিন্তু সাহস পায়না। কারন তার ওস্তাদের মেজাজ ও তার চেয়ে বেশী খারাপ। কারন তাকে ময়লাবাহী গাড়ীর ড্রাইভারী থেকে লাশবাহী গাড়ীর ড্রাইভার হিসাবে পোষ্টিং করা হয়েছে।

এতে করে তার কামাই কমে গেছে। কারন ময়লাবাহী গাড়ীর ময়লা যে ডাম্পিং ষ্টেশনে ফেলা হয় সেখানে তার লোক আছে। তারা ময়লা ঘেটে বিভিন্ন রকমের জিনিসপত্র বের করে সেগুলো বিক্রি করে যা আয় করে তার একটা নির্দিষ্ট অংশের ভাগ তার ওস্তাদ পেত। কিন্তু এখন আর সে ভাগ পায় না। এজন্য তার ওস্তাদের মেজাজ চরম পর্যায়ে আছে।

অবশ্য শুকুর আলী মাঝে মাঝে লাশবাহী ট্রাক থেকেও দান মারে। কেউ কেউ হয়তো এই কান্নাকাটির মাঝেও লাশ দাফন করে আসার পর তার হাতে কিছু দেয়। ট্রাকে যে ওস্তাদই থাক কেন, ওস্তাদ না জানলে শুকুর আলী পুরোটাই গায়েব করে দেয়। আর যদি কখনও লাশ নিয়ে দুরে কোথায় যাওয়া হয়ে তাহলে আসার সময় গেরস্থের অথবা মহাজনের কিছু জিনিস ট্রাকে করে আবার শহরে নিয়ে আসলে ভালো দান মারা যায়। এজন্য শুকুর আলী দুরে কোথায় লাশ নিয়ে যাওয়া হবে এই সংবাদে বেশী খুশি হয়, যদিও চল্লিশাটা খাওয়া হয় না তার।

শুকুর আলীর খুব ইচ্ছা তার ঘরে একটা রঙিন টেলিভিশন হবে। কিছু টাকাও জমিয়েছে সে। এতদিনে হয়ে যেত। গোপনে গোপনে টাকা জমানো শুরু করলে সে টাকা রতœার চোখে পড়লে গায়েব হয়ে যায়। এজন্য রতœার উপর শুকুর আলী নাখোশ।

কিন্তু সর্দারের মেয়ে তো তাই কিছু বলে সাহস পায়না। শুধু মনে মনে চায় তার বউটা মরে যাক। বেশ কয়েকবার এভাবে হওয়ার পর এখন সে বাইরের একটা সমিতিতে টাকা জমানো শুরু করেছে। ঘরে শুয়ে শুয়ে রঙীন টিভিতে সিনেমা দেখা আর বিড়ি টানার মজার আলাদা। এজন্য ডিশের লাইনের মালিক লাভলু ভাইকে অগ্রিম বলে রেখেছে তাকে যেন ফ্রি একটা ডিশের লাইন দেয়।

লাভলু ভাই তাকে কথা দিয়েছে। কিন্তু এই কথা দেওয়ার পর থেকেই যখন তখন লাভলু ভাই তার বাসায় আসে তার খোঁজে। এটা শুকুর আলীর ভালো লাগে না। বাসায় তার বউ একা থাকে ছোট ছেলেকে নিয়ে। কিন্তু কিছু বলতে পারে না কারন লাভলু আবার জগলুল মেম্বারের চাচাতো শালা।

আরেকটা বিড়ি ধরিয়ে ট্রাকের আড়ালে দাঁড়িয়ে শুকুর আলী শেষ ফাগুনের এই দুপুরে উদাস মনে বিড়ি টানতে থাকে।

একটু আগে বৈশাখ মাসের কালবৈশাখী ঝড় হয়ে গেছে। শুকুর আলীর ফেরার তাগাদা আগেই ছিলো কারন আজ সকালেই তার বাড়ীতে নতুন রঙিন টিভি আনা হয়েছে। লাভলু ভাই ডিশের লাইন ও দিয়ে গেছে। তারা গিয়েছিলো শহর থেকে প্রায় ষোল কিলোমিটার দুরে টিপু মুন্সির গ্রামের বাড়ীতে তার বউয়ের লাশ নিয়ে।

যাওয়ার সময় দেখে গেছে রাস্তায় বেশ কিছু ঝুড়ি, যেগুলোতে গ্রীষ্মকালীন সব্জী চাষীরা ঝুড়িতে ভরে রাস্তার পাশে রেখে দিয়েছে এই আশায় যদি শহরের দিকে কোন ফাঁকা গাড়ী পাওয়া যায় তাহলে সব্জীগুলো উঠিয়ে দিবেন চাষীরা। শুকুর আলী মনে মনে খুশি হয় যাক তাহলে আজকেও একটা দান মারা যাবে। সে চেয়েছিলো লাশ দিয়েই চলে আসবে আসার পথে সব্জীর ঝুড়িগুলো নিয়ে আসবে। কিন্তু বাসায় যেতে না যেতেই প্রচন্ড কালবৈশাখী ঝড় শুরু হয়ে গেলো। ঝড়ে বাসার ভেতরে টানানো সামিয়ানা উড়ে গেলো।

মুন্সি বাড়ীর উত্তর দিকের পাটখড়ির বেড়া ভেঙ্গে গেলো। দড়াম দড়াম করে বেশ কয়েকটা বাজ পড়ার শব্দও শোনা গেলো। তো বেরুতে বেরুতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। বাঁধের কাচাঁ রাস্তা দিয়ে খুবই সতর্কতার সাথে তার ওস্তাদ ট্রাক চালিয়ে নিয়ে আসছে আর সে একটু ডাইনে, একটু বামে এই বলে ওস্তাদকে সাহায্য করছে। এর একটু এগুলেই সেই ঝুড়িগুলো সে ট্রাকে উঠাবে এই ভাবনায় সে ভরপুর।

হঠাৎ মোড়ের উপর দ্রুতগতির এটা নছিমনকে সাইট দিতে গিয়ে ভেজা রাস্তায় স্লিপ খেয়ে শুকুর আলীর ট্রাকটা পিছলে পাশের গভীর খাদে পড়ে যায়। খাদে পানি ছিলো পর্যাপ্ত কিন্তু ট্রাকটা কয়েক বার উল্টেগিয়ে পানিতে পড়ার কারনে ভেতরেই শুকুর আলী ও তার ওস্তাদ ভালো মতো আহত হয়। নছিমনটা নিজের দোষ বুঝতে পেরে দ্রুত ঘটনা স্থল ত্যাগ করে। মানুষজন এসে ট্রাকের দরজা ভেঙ্গে দুজনকে দ্রুত বের করে আরেকটা নছিমনে করে শহরের সদর হাসপাতালে আনার পর কর্তব্যরত ডাক্তার শুকুর আলীকে মৃত ঘোষনা করে ও তার ওস্তাদকে হাসপাতালে ভর্তি করে নেয়। হাসপাতাল থেকে শুকুর আলীর লাশ নছিমনে করেই থানায় এবং সেখান থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে দেনদরবার করে নছিমনে করেই শুকুর আলীর লাশ তার বাড়ীতে আনা হয়।

সকল আনুষ্ঠানিকতা করে পরেরদিন দুপুরে তার লাশ গোরস্থানে দাফন করা হয়।

না শুকুর আলীর লাশ কোন ট্রাকে করে গাড়ী বহর নিয়ে গিয়ে পৌর কবরস্থানে দাফন করা হয়নি। তার নছিমনের আগে পিছে কোন মোটরগাড়ীর বহর ছিলোনা। যে নছিমনের ভুলের কারনে শুকুর আলীর জীবনের অবসান হয়েছে সেই নছিমনে করেই তার লাশ কবরস্থানে নেওয়া হয়েছে। সাথে তার কিছু আতœীয়স্বজন।

যে শুকুর আলী জীবতাবস্থায় সকল মানুষকে আপন মানুষ বলে মনে করেছে সেই শুকুর আলীর লাশের পাশে সে কাউকে পায়নি। শুকুর আলীদের জীবনে সবকিছু রুটিন মাফিক হয়না। হতে দেওয়া হয়না। ।

সোর্স: http://prothom-aloblog.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.