রাজশাহীর সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতাল এবং ক্লিনিকে বিরতিহীন ধর্মঘটে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন রোগীরা। ৬ ঘণ্টা ধরে চলা এ ধর্মঘটে চিকিৎসাব্যবস্থা নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শুধু বহির্বিভাগে সেবা বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হলেও কার্যত পুরো হাসপাতালেই ধর্মঘটের প্রভাব পড়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে একজন রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর মামলায় এক চিকিৎসককে কারাগারে পাঠানোর জের ধরে বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টা থেকে শুরু হয় এ ধর্মঘট। গতকালও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের বিএমএর অধীন চিকিৎসকরা কাজে যোগ দেননি। যদিও রামেকের জরুরি বিভাগ এবং আন্তঃবিভাগ চালু রয়েছে। রেজিস্ট্রার না থাকলেও প্রতিটি ওয়ার্ড ও বিভাগের ইন্টার্ন এবং নার্সরা চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকার কারণে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সেবা নিতে আসা সাধারণ রোগীরা। তবে বিত্তশালী রোগীরা চিকিৎসার জন্য ঢাকার উদ্দেশ্যে হাসপাতাল-ক্লিনিক ছাড়তে শুরু করায় তাদের স্বজনরা স্বস্তি পেলেও গরিব রোগীরা বাধ্য হয়ে পড়েই থাকছেন ক্লিনিক বা রামেকে। রাজশাহী শহরের ডলফিন নামের ক্লিনিকের মালিক ডা. শিমুলকে ভুল চিকিৎসায় রোগী মারার অভিযোগে বৃহস্পতিবার দুপুরে কারাগারে পাঠান আদালত। এর প্রতিবাদে ওই দিন রাতে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন রাজশাহী শাখা। সভা থেকে বেসরকারি ক্লিনিক, হাসপাতাল, নার্সিং হোম, ডায়াগনস্টিক সেন্টার চিকিৎসাসেবা বন্ধের ঘোষণা দেয়। পরে বিএমএ নেতারা তাদের সঙ্গে একাত্দ ঘোষণা করেন। আর গতকাল সকাল থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালসহ জেলার সব হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। বিএমএর কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ডা. তবিবুর রহমান শেখ বলেন, ডা. শিমুলের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এর পরও তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এটি হয়রানি বলেই মনে করা হচ্ছে। তাই ডা. শিমুলকে মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত সংগঠনের চিকিৎকরা কর্মবিরতি পালন করবেন। তবে এ ব্যাপারে রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আ স ম বরকতুল্লাহ জানিয়েছেন, শুক্রবার এমনিতেই ছুটির দিন। তারপরেও অনেক চিকিৎসক কাজে যোগদান না করায় বর্তমানে ইন্টার্নদের মাধ্যমে হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডে এবং জরুরি বিভাগে চিকিৎসাসেবা স্বাভাবিক রাখা হয়েছে। ধর্মঘট দীর্ঘায়িত হলে পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। জানা গেছে, ডলফিন ক্লিনিকের মালিক ডা. শামিউল উদ্দিন আহম্মেদ শিমুল। তিনি রাজশাহী জেলা স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদের (স্বাচিপ) সাংগঠনিক সম্পাদক ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। আদালত ও মামলা সূত্র জানায়, গত বছরের ৯ ডিসেম্বর জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার শেখটোলা গ্রামের আনোয়ারুল হক টিপুকে (৩৫) পিটিয়ে পা ভেঙে দেয়। এর পর তাকে প্রথমে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। সেখানে কয়েক দিন চিকিৎসা শেষে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। বাড়িতে গিয়ে টিপুর পায়ে সমস্যা দেখা দিলে তাকে মহানগরীর ডলফিন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। পরদিন রাত ১০টায় তার পায়ের অপারেশন করতে চেতনানাশক ইনজেকশন দেওয়ার পর তিনি মারা যান। ওই রাতেই ভুল চিকিৎসায় স্বামীর মৃত্যুর অভিযোগ এনে ক্লিনিকের মালিক শিমুলের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত দুই চিকিৎসকসহ চারজনের বিরুদ্ধে বোয়ালিয়া থানায় মামলা করেন নিহত টিপুর স্ত্রী শারমিন আক্তার।
ধর্মঘটে চিকিৎসা না পেয়ে রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ : গতকাল দুপুরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আশরাফুল ইসলাম নামে এক রোগী মারা গেছেন। পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, হাসপাতালের কোনো চিকিৎসক তাকে চিকিৎসা দেননি। তার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে। তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে তিনি মারা যান। তার ছোট ভাই আরিফুল ইসলামের অভিযোগ, ধর্মঘটের কারণে চিকিৎসক না থাকায় তারা চিকিৎসা পাননি। নার্সরা যা জানেন তা-ই করেছেন। মূলত চিকিৎসার অভাবেই তার ভাই মারা গেছেন। তবে ওই ওয়ার্ডের শিক্ষানবিস চিকিৎসক তাহমিনা সুলতানা দাবি করেছেন, জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক না থাকলেও চিকিৎসাসেবার সমস্যা হচ্ছে না।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।