ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার রূপাপাত ইউনিয়নের কাটাগড় গ্রামের ধর্মীয় সাধক দেওয়ান শাগের শাহে্র (রহ.) মাজারের বার্ষিক ওরস উপলক্ষে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয় মেলা। বাংলা সনের ১২ চৈত্র শাগের শাহে্র মৃত্যু বার্ষিকী ওরসের পাশাপাশি বসে এই মেলা। মেলায় মাজারের ভক্ত নারী পুরুষ ছাড়াও আশপাশের এলাকা থেকে কয়েক লাখ লোকের আনাগোনা হয়। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও তার ব্যাতয় ঘটেনি। লাখ লাখ লোকের আনাগোনায় মেলা তার পরিপূর্ণতা লাভ করে।
দেশের বিভিন্ন প্রাপ্ত থেকে লোকের আনাগোনায় ১১, ১২ ও ১৩ চৈত্র পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল মেলা প্রাঙ্গণ।
মেলার আয়োজক কমিটির সুত্রে জানা গেছে তাদের পুর্বপুরুষদের মেলা আয়োজনের ধারাবাহিকতা তারা এই আয়োজনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন। কয়েকশ' বছর ধরে চলছে মেলার এ আয়োজন। গত ১১ চৈত্র থেকে শুরু হওয়া তিনদিনের এই আয়োজন ১৩ চৈত্র শেষ হলেও এর রেশ থাকবে মাসব্যাপি। কাটাগড় মেলা নামে পরিচিত এ মেলা এখন এ এলাকার ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে।
মেলার সময় কাটাগড় গ্রামসহ আশপাশের কলিমাঝি, সূর্যোগ, সহস্রাইল, ভুলবাড়িয়া, মাইটকুমরা, গঙ্গানন্দপুর, ছত্রকান্দা, বন্ডপাশা, বয়রা, বামনগাতি প্রভৃতি গ্রামগুলোতে থাকে উত্সবের আমেজ। ঈদের ছুটিতে বাড়ি না আসলেও এ সকল গ্রামের বিভিন্ন চাকরিজীবী ও পেশাজীবীরা মেলা উপলক্ষে গ্রামের বাড়িতে আসার জন্য সারাবছর অপেক্ষায় থাকেন।
কাটাগড় গ্রামের কলেজ শিক্ষক শাহিন মো. নওরোজ জানান, আমি পরিবার পরিজন নিয়ে বোয়ালমারী উপজেলা সদরে বসবাস করি। ঈদের সময় আমি বোয়ালমারীতে ঈদ উৎযাপন করলেও মেলার সময় পরিবার পরিজন নিয়ে গ্রামের বাড়িতে সময় কাটাই। সহস্রাইল গ্রামের সাংবাদিক সৈয়দ আমিনুর রহমান বলেন, মেলার সময় আমাদের এলাকার মেয়েরা জামাইসহ বাপের বাড়িতে বেড়াতে আসে।
বাড়িতে বাড়িতে চলে নানা পারিবারিক উত্সব ও খাবার-দাবারের আয়োজন। সব মিলিয়ে এখনও গ্রামীন ঐতিহ্য ধরে রেখেছে শতশত বছরের পুরনো এই মেলা। সহস্রাইল গ্রামের মারিয়া বেগম জানান, আমি স্বামী সনতান নিয়ে বগুড়া সেনানিবাসে বসবাস করলেও শুধুমাত্র মেলা উপলক্ষে বাবার বাড়িতে বেড়াতে এসেছি। কেননা সারাবছর আমি অপেক্ষায় থাকি মেলার সময় বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসবো বলে। কলিমাঝি গ্রামের মো. আফজাল হোসেন জানান, মেলা থেকে সাজবাতাসা ও বিভিন্ন মিষ্টি কেনা হয়।
পরে তা মাটির পাত্রে সব আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠানো আমাদের রেওয়াজ রয়েছে।
মেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি ও রূপাপাত ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আজিজার রহমান বলেন, মেলায় মাঠের আয়তন প্রায় তিন কিলোমিটার। এ বছর বিভিন্ন পণ্যের সহস্রাধিক দোকানের পসরা বসেছে এ মেলায়। মেলায় বিভিন্ন বিনোদন আয়োজনও রয়েছে। তবে মাটির খুটিতে চিনির তৈরি সাজবাতাসা কেনা এ মেলার অন্যতম ঐতিহ্য।
বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সহিদুজ্জামান জানান, মেলায় আইনশৃংখলা রক্ষায় পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া জনসাধারেণর নির্বিঘ্ন যাতায়াতে প্রশাসন সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
।অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।