আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বার্মা ঘুরাঘুরি এবং রোহিঙ্গাদের কান্না!! -শেষ পর্ব

বার্মাতে মুসলিম হয়ে জন্মানই মনে হয় পাপ! নাকি আল্লাহপাক বার্মার মুসলিমদের উপর থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছেন!!
মংডু শহরে কোনো রাখাইন ভিক্ষুক দেখলাম না! সবগুলো রোহিঙ্গা! আজ চলে যাবো তাই শেষ কেনাকাটা করছি। একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম রাস্তার প্রতিটি মোড়ে মোড়ে পুলিশ এবং সবাই সশস্ত্র! এই ব্যাপারটা আমাকে কেমন খোচা দিল যাই হোক কোনো ভি আই পি আসবে বলে হয়তো এই রকম ব্যাবস্থা।
কেনাকাটা শেষ করে হোটেলে গিয়ে একটু রেস্ট করছিলাম হটাত চিল্লাচিল্লির আওয়াজ! ঘটনা কি দেখতে দৌড়ে গিয়ে হোটেলের বারান্দায় গেলাম। দেখি হাজার হাজার লোকের মিছিল । কারো কারো হাতে ব্যানার ফেস্টুন সব ওদের ভাষায় লিখা! সামনে পিছনে ওদের আবার প্রটেকশন দিচ্ছে পুলিশ।

ঠিক যেনো হাজার হাজার ভি আই পির মিছিল। ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে কোনো নির্বাচনী মিছিল!

যাই হোক নিচে এলাম ম্যানেজারের কাছে হোটেল ভাড়া বুঝিয়ে দিতে। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম কিসের এতো মিছিল। সে বলল রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিছিল। জাতিসংঘ নাকি বলেছে, রোহিঙ্গারা বাঙ্গালী না এরা বার্মার অধিবাসী।

কিন্তু রাখাইনরা মনে করে এরা বাঙ্গালী। তাই তারা বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। এখানে পুলিশ প্রশাসন সবাই রাখাইন তাই রোহিঙ্গাদের পক্ষে কেউ নাই। গতকাল রাতে নাকি আর্মিরা শহরের এক রোহিঙ্গা পাড়া জালিয়ে দিয়েছে। প্রায় ১০০ এর মতো ঘর।

তাদের কোথাও যেতে দিছে না। তাই তারা খোলা আকশের নিচে রাত কাটাচ্ছে।
রোহিঙ্গারা কিন্তু মংডু শহর থেকে বের হতে পারে না। মানে স্বাধীনভাবে এক শহর থেকে আর এক শহরে যেতে পারে না। এক শহর থেক আরেক শহরে যেতে তাদের পুলিশের অনুমতি এবং চেয়ারম্যানের অনুমতিপত্র লাগে! তাও নাকি বিশাল ঝামেলা তাই তারা টেকনাফে এসে ডাক্তার দেখায়।


কোনো সমস্যা হলে আগে রোহিঙ্গাদের ধরবে তারপর দেখবে কে দোষী। ঘরে যুবক ছেলেদের রাখা খুব ঝামেলা। তারা রাত্রে কি করে কোথায় থাকে তা নিয়ে প্রায় এসে পুলিশ জেরা করে। ৩/৪ বছর আগে একবার তারা দাবী দাওয়া আদায়ের জন্য একটু সংঘটিত হয়ার চেষ্টা করেছিলো কিন্তু তার বিন্দু মাত্র চিহ্ন পুলিশ আর্মিরা রাখেনি। পাখির মতো গুলি করে সব সাফ করে দিয়েছে।

যেখানে যাকে পেয়েছে তাকেই গুলি করে মেরেছে। কেউ টু শব্দ করার মতো সাহস পায়নি।

ফিলিস্তিনে ইসরাইলদের বর্বরতার কথা শুনেছি কিন্তু দেখিনি। এখানে মনে হয় বুঝতে পেরেছি ইহুদী নাসাহারা কাকে বলে। আমাদের দেশ থেকে তো অনেক লোক হুজুর জিহাদ করতে অনেক দেশে যায় কিন্তু কেউতো বার্মায় যায় না।

কারণ পাকিস্তান আফগানিস্তানে যুদ্ধ করলে টাকা পাওয়া যায় কিন্তু বার্মায় গেলেতো নিজের পকেট থেকে যাবে। অইসব দেশে কুত্তায় কুত্তায় কামড়া কামড়ি করে আর সেই কামড়া কামড়িতে এক পক্ষকে সমর্থন দেওয়ার জন্য আমাদের জীহাদি ভাইয়েরা যায়। রোহিঙ্গারাতো নিজেরা নিজেরা মারা মারি করে না ওদেরকে ভিন্ন ধর্মের লোকরা মারছে। জিহাদ করতে হলে সবথেকে ভালো যায়গা হল এই যায়গা। কিন্তু আমাদের জিহাদী ভাইরা তো ঐ খানে যাবে না কারণ এইখানে টাকা নাই মাইয়া নাই।

আফগানিস্থান পাকিস্থান যাওয়ার আগে রোহিঙ্গাদের দেখে যাও । যদি প্রকৃত জিহাদি হও তবে এখানেই শহীদ হবে চলে আসবে।

যাই হোক দেশে ফিরার বোট আমাদের ৩.৩০শে। আমারা বের হলাম পথে ফালুদা পেলাম না খেয়ে যেতে পারলাম না।



রাস্তার পাশের দোকান এখানে ফালুদা জুস কোল্ড ডিঙ্কস সব পাওয়া যায় অবশ্যই ঠান্ডা!


এবার যাওয়ার পালা।

কিন্তু সাথে ক্যামেরা কি ভাবে পার করবো বুঝতে পারছি না যাই হোকাগে ঘাটে যায়ে নেই পরে দেখা যাবে। ওইখানে গিয়ে এক বাঙ্গালী বোটম্যানকে পেলাম সে বলে দিলো এক কুলিকে। সেই কুলি আমাদের ব্যাগ মানে ক্যামেরাওয়ালা ব্যাগ পার করে দিবে। যাই হোক আমরা চেকিং এ গেলাম। কুলি কি বলল জানিতা তাকে আর চেক করলো না।

কিন্তু আমাদের হাতে থাকা ব্যাগ সব খুলে খুলে চেক করলাম। যাই হোক সমস্যা নাই কারণ কুলি আমাদের ক্যামেরাওয়ালা ব্যাগ পার করে নিয়ে গেছে।

এবার বোটে উঠার পালা। এই পাশে আবার ঘাটের টোল দিতে হয় তা বাংলা২০/৩০ টাকার মতো বা আরো কম হবে! ভুলে গেছি তবে এই রকমি হবে। নদীতে ভাটা চলছে ।

একজন বলল এই রকম চললে বোট আর যেতে পারবে না। সামনে গিয়ে দেখি নদীর মাঝখানে ২/৩ টি নৌকা পানির অভাবে আটকে আছে। আবার জোয়ার ছাড়া এরা চলতে পারবে না। আমরা আস্তে আস্তে চলতে লাগলাম। হটাত করে আমাদের নৌকার তলে মাটি ঘসা খেলো সাথে সাথে আমরা নৌকা সবাই মিলে দুলাতে লাগলাম যাতে নৌকা তলে লেগে না যায়।

যাই হোক যেসব নৌকা আটকে গিয়েছিলো তাদের পার করে এলাম না আটকে। কিন্তু না কপাল খারাপ কিছুদুর আসার পর আবার আটকালাম।

পিছনে নৌকা আটকে আছে আমরা চলছি।


পিছনে আরো দুইটি মালবাহী নৌকা আটকে আছে।



যাই হোক নৌকা আটকে আছে তাই কিছু সাহসী ভাইরা নেমে নৌকা ঠেলা দিয়ে কিছুদুর নিয়ে গেলো! নৌকা একটু পানি পেতেই
মাঝি ইঞ্জিন চালূ দিলো মারা বাংলাদেশের পথে রওনা দিলাম।

নৌকা ছুটতেই একভাই সবাইকে চকলেট দিলো। ভাইয়ের ছবি যিনি চকলেট দিয়েছেন।



চকলেট বিতরন চলছে!!



আমাদের দেশের নদীতে এসে মনটা০ ভরে গেলো। একটা স্বাধীনতার ভাব এলো। মনে হচ্ছিলো এখন মরলেও শান্তি কারণ নিজের দেশে মরবো!! অনেক কিছু লিখতে গিয়েও লিখলাম না! তাই কারো কোনো কিছু জিজ্ঞাসা থাকলে করতে পারেন।



ও আচ্ছা আসল কথা যাওয়ার সময় ক্যামেরা বোটম্যানকে দিয়ে নিয়ে যেতে পারেন তবে অবশ্যই ছোট ক্যামেরা। কারণ বোটম্যান ক্যামেরা কোমরে করে নিয়ে যাবে । বড় জিনিস মানে ডি এস এল আর কি আর কোমড়ে নেওয়া যায়। বোটম্যান ৪০০/৫০০ টাকার মতো চাবে কিন্তু ১০০ টাকার বেশী দিবেন না। কুলিকে ১০০টাকা দিলাম বার্মায়, সে তো মহা খুশী।



বোটম্যানদের কে কাস্টম চেক করে না তাই সহজেই তারা নিয়ে যেতে পারে। তবে ভুলেও কেউ আমার মতো রিস্ক নিয়ে ক্যামেরা ব্যাগে নিয়ে যাবেন না। ধরা খেলে খুব বিপদে পড়বেন!!

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৬ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.