ভারতে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের বিভিন্ন জরিপে প্রধান বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) জয় পেতে যাচ্ছে বলে আভাস মিলছে। কিন্তু বিজেপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ) কিংবা বিজেপি এককভাবে সরকার গঠনের মতো প্রয়োজনীয় আসন পাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় থাকছে।
বিজেপি সেই বিষয়টি মাথায় রেখে নির্বাচনের পর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করছে। বিনিময়ে সরকার গঠনের পর বিজেপির কাছ থেকে পশ্চিমবঙ্গের জন্য আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ পেতে পারেন মমতা।
রাজনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বিজেপির সঙ্গে মমতার সমঝোতা হওয়ার ভালোই সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে সেটা হতে পারে নির্বাচনের পর। মমতার দল বাইরে থেকে সমর্থন দিতে পারে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএকে জোটকে। আর মমতার সমর্থন নিয়ে নরেন্দ্র মোদি সরকার গঠন করতে পারলে বিনিময়ে পশ্চিমবঙ্গের জন্য বিশেষ আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ দেবে, যেটা বিশাল ঋণের ভার থেকে মমতার পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে রেহাই দেবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গুরুত্বপূর্ণ একজন রাজনীতিক বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচন হবে। তার আগে রাজ্যের অর্থনীতিকে চাঙা করতে বড় অঙ্কের অর্থ প্রয়োজন।
যেটা ওই নির্বাচনে নিজের পক্ষে সমর্থন বাড়াতে কাজে দেবে মমতার। আর কংগ্রেসের সঙ্গে বেশ কয়েক বছর ধরে মমতার একপ্রকার টানাপোড়েন চলছে। তাই কংগ্রেসকে সমর্থন দিলেও মমতার খুব একটা লাভ হবে না। এ কারণেই নির্বাচনের পর সরকার গঠনের সময় মমতার সমর্থন বিজেপির পক্ষেই যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ’
বিভিন্ন জরিপ ও রাজনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস এবার ২৫ থেকে ৩০টি আসনে জয়লাভ করতে পারে।
আর এটা হলে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ ও ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চার (ইউপিএ) পর এককভাবে সর্বোচ্চ আসন পাওয়া দল হতে পারে মমতার কংগ্রেসই। তখন সরকার গড়তে দুই পক্ষেরই প্রয়োজন হবে মমতাকে।
এখনই বিজেপির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক জোটে না যাওয়ার কারণ হিসেবে সূত্রগুলো বলছে, পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ২৫ শতাংশ মুসলিম ভোটার আছেন। নির্বাচনের আগে মোদির সঙ্গে হাত মেলালে সেই ভোট মমতার বাক্সে পড়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসবে। মূলত এ কারণে নির্বাচনের পরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।
বিজেপির সঙ্গে সমঝোতার সম্ভাবনার বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলের মুখপাত্র ডেরেক ও’ ব্রায়েন বলেন, ‘এটা কংগ্রেস ও বামপন্থীদের প্রচারণা। আমরা বিজেপি, কংগ্রেস ও বামপন্থীদের সঙ্গে সমানভাবে লড়াই করছি। কোনো সমঝোতা করার প্রশ্নই ওঠে না। আমরা বিশ্বাস করি, ফেডারেল ফ্রন্টই একমাত্র বিকল্প হতে পারে। ’
এ ব্যাপারে টাইম অব ইন্ডয়ার পক্ষ থেকে বিজেপির গণমাধ্যম সমন্বয়ক রবি শঙ্কর প্রসাদ বলেন, ‘আমি তৃণমূলের সঙ্গে কোনো ধরনের সমঝোতার বিষয়ে কিছু জানি না।
এ কারণে বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করব না। ’
বিশ্লেষকদের মতে, বিজেপির ধারণা, সমঝোতার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গে ২০১৬ সালে অনুষ্ঠেয় বিধানসভা নির্বাচনই হবে মমতার মূল বিবেচনার বিষয়। আর সে কারণেই রাজ্যের জন্য আর্থিক সহায়তা প্যাকেজের জন্য বিজেপিকে সমর্থন দেবে তৃণমূল। অন্যদিকে ২৫-৩০টি আসন পেলে কেন্দ্রে সরকার গঠনে তৃণমূলের ভূমিকা হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই দুটি বিষয় সমঝোতায় পৌঁছাতে বাধ্য করবে নরেন্দ্র মোদির বিজেপি ও মমতা বন্দোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেসকে।
টাইমস অব ইন্ডিয়া।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।