আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গ্যাংনাম থেকে গ্যাংনাম

দেখতে দেখতে আরেকটি বিশ্বকাপ শেষ হতে চলল। আসুন ফিরে দেখি এই পাঁচটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের স্মরণীয় ১০টি মুহূর্ত:
গ্যাংনাম এক
২০১২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের গ্যাংনাম উদযাপন অনেকটাই সমার্থক। গেইল, স্যামুয়েলস, ব্রাভো, পোলার্ডদের সেই উদযাপন এখনো ভাসে ক্রিকেটপ্রেমীদের চোখে! সেবার ফাইনাল ম্যাচে মারলন স্যামুয়েলসের অনবদ্য ৫৬ বলে ৭৮ রানের সুবাদে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় উইন্ডিজ। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই বড় বিজ্ঞাপন ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের গ্যাংনাম উদযাপন। উদযাপনটি পূর্ণতা পায় ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে হারানোর পর।

গেইলদের গ্যাংনাম নৃত্য যেন ক্রিকেটের টি-২০ সংস্করণের নির্ভেজাল বিনোদনেরই বিজ্ঞাপন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্তগুলোর একটি।
ক্রিস গেইল টর্নেডো
শুরুটা এর চেয়ে কোনোভাবেই ভালো হয় না। ২০০৭ উদ্বোধনী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে গেইল খেলেছিলেন ৫৭ বলে ১১৭ রানের এক টর্নেডো ইনিংস! গেইলের সেই বিধ্বংসী ইনিংসে ছয়ের মার ১০টি, চার ৭টি। যদিও গেইলের অমন অতিমানবীয় ইনিংসের পরেও হার্শেল গিবসের বীরত্বগাথায় (৯০*) স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারাতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ।


ভারত ৩-০ পাকিস্তান!
২০০৭ উদ্বোধনী টি-২০ বিশ্বকাপ আসরে গ্রুপ ডি-এর ম্যাচে মুখোমুখি দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তান। ১৪১ রান করে ভারত। জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে মিসবাহ-উল-হকের অর্ধশতক পাকিস্তানকে জয়ের স্বপ্ন দেখায় বেশ ভালোভাবেই। কিন্তু শেষ ওভারে স্নায়ুচাপকে (অথবা ভাগ্যকে) জয় করতে পারেনি পাকিস্তান। ঠিক ১৪১ রানেই থামে ইনিংস।

ম্যাচ টাই! এরপর সেই ‘ঐতিহাসিক’ ঘটনা। সেবারই প্রথম টাইব্রেকার চালু করেছিল আইসিসি। প্রতি দলের পাঁচজন করে ক্রিকেটার বোলিং করবেন ফাঁকা স্টাম্পে, যে দল বেশিবার স্টাম্পে লাগাবে, জয়ী তারাই। এরই নাম ‘বোল আউট’। ভারত শুরুতে পাঠিয়েছিল স্লো বোলারদের, পাকিস্তান ডুবল পেসারদের পাঠিয়ে।

সামান্য দৌড়ে প্রথম বল স্টাম্পে লাগালেন শেবাগ, লম্বা রান আপে বোলিং করে অফ স্টাম্পের বাইরে মারলেন ইয়াসির আরাফাত। একইভাবে পরের বলে স্টাম্পে লাগালেন হরভজন, আবারও বাইরে মারলেন উমর গুল। তৃতীয় বলে স্টাম্পে লাগালেন রবিন উথাপ্পা, আফ্রিদির বল গেল লেগ স্টাম্পের বাইরে। ৩-০ তে জিতল ভারত!
ধোনির যোগিন্দর জুয়া
২০০৭ আসরের ফাইনাল, স্বপ্নের ফাইনাল! মুখোমুখি ভারত-পাকিস্তান। ১৫৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতিতে মিসবাহর একক কৃতিত্বে পাকিস্তান সেবার ফাইনাল জিতেই যাচ্ছিল।

কিন্তু পাকিস্তানের বড় ট্র্যাজেডি তখনো বাকি। শেষ ওভারে যোগিন্দর শর্মাকে বোলিংয়ে এনে শুধু তাকই লাগিয়ে দেননি, রীতিমতো জুয়াই খেললেন ধোনি। ৪ বলে দরকার ৫ রান। স্কুপ শটটি সেবার খুব ভালো খেলছিলেন মিসবাহ। কিন্তু শেষ স্কুপটিই হয়ে গেল যাতনার আরেক নাম! বোলার যোগিন্দর করলেন স্লোয়ার।

মিসবাহর পূর্বপরিকল্পিত স্কুপে টাইমিং গড়বড়, বল জমা পড়ল শর্ট ফাইন লেগে শ্রীশান্তের হাতে। ধোনির ‘যোগিন্দর জুয়াতে’ ভারত নেচে উঠল বিশ্বজয়ের আনন্দে।

যুবরাজের ছয় ছক্কা
টাইম মেশিনে অতীতে ফেরত যেতে পারলে ভুলটি নিশ্চিতভাবেই করতে চাইবেন না ফ্লিনটফ! ভারত বনাম ইংল্যান্ড ম্যাচ। ১৭তম ওভার শেষে ফ্লিনটফ কিছু একটা বলেছিলেন যুবরাজ সিংকে। হায়, কী ভুলটাই না করেছিলেন ফ্লিনটফ! যুবরাজ ছয় বলে ছয় ছক্কা মেরে রাগটা ঝাড়লেন ১৮তম ওভার করতে আসা তখনকার তরুণ স্টুয়ার্ট ব্রডের ওপর! আর তাতেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ছয় বলে ছয় ছক্কার পাশাপাশি দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরির রেকর্ড (১২ বলে) গড়লেন যুবরাজ।


ব্রেট লির হ্যাটট্রিক
১৬ ওভার শেষে ৩ উইকেটে ১০৮। ব্রেট লির করা ১৭তম ওভারটির আগে হয়তো বড় স্কোরের প্রত্যাশা ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু লির হ্যাটট্রিকে প্রত্যাশা ভেঙে চুরমার। ১৭তম ওভারের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে সাকিব, মাশরাফি ও অলক কাপালিকে সাজঘরে ফিরিয়ে ২০০৭ বিশ্বকাপে কেপটাউনে ব্রেট লি গড়লেন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির প্রথম হ্যাটট্রিক।
আফ্রিদির ক্যাচ
২০০৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সুপার-এইট পর্বের ম্যাচে ওভালে মুখোমুখি পাকিস্তান।

স্কট স্টাইরিস লেগ সাইডে বাউন্ডারির দিকে উড়িয়ে মেরেছিলেন উমর গুলকে। উল্টো দিকে দৌড়ে বাউন্ডারির কাছাকাছি চোখ ধাঁধানো দুর্দান্ত এক ক্যাচ নিয়েছিলেন আফ্রিদি। ধরেই গ্যালারির দিকে তাকিয়ে দু-পা দুদিকে ছড়িয়ে, দু-হাত দুদিকে উঁচিয়ে দাঁড়ালেন আফ্রিদি। দুর্দান্ত ক্যাচের সঙ্গে অসাধারণ উদযাপন।
বাংলাদেশের উইন্ডিজ-বধ
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই তাক লাগিয়ে দিল বাংলাদেশ।

জোহানেসবার্গের নিউ ওয়ান্ডারার্স স্টেডিয়ামে টসে জিতে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নিলেন অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল। শুরুতেই সৈয়দ রাসেলের বলে ক্রিস গেইল ফিরে গেলেন কোনো রান না করেই। এরপর অবশ্য স্মিথ ও চন্দরপলের ব্যাটিংয়ে চ্যালেঞ্জিং স্কোর পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৬৪। ১৬৫ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুতেই বাংলাদেশের বিপদ।

নাজিমউদ্দিন ফেরেন মাত্র ২ রানে। কিছুক্ষণ পর ফেরেন তামিমও, ১০ করে। এর পরই আফতাব আহমেদ ও আশরাফুলের সেই দুই ইনিংস। আশরাফুল খেললেন ২৭ বলে ৬১ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। ৪৯ বলে ৬২ করে আফতাব জিতিয়ে তবেই ফিরলেন।

দুজনের তৃতীয় উইকেট জুটিতেই এল ১০৯। বাংলাদেশ জিতল ৬ উইকেটে, ১২ বল হাতে রেখে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সেরা মুহূর্ত সেটিই।
জিম্বাবুয়ের অস্ট্রেলিয়া-বধ
২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চতুর্থ ম্যাচে গ্রুপ পর্বে মুখোমুখি হয়েছিল ফর্মের তুঙ্গে থাকা অস্ট্রেলিয়া ও খর্বশক্তির জিম্বাবুয়ে। এলটন চিগাম্বুরার বোলিং নৈপুণ্যে (৩ উইকেট) অস্ট্রেলিয়াকে ১৩৮ রানেই বেঁধে ফেলেছিল জিম্বাবুয়ে।

জবাবে ব্রেন্ডন টেলরের ৪৫ বলে ৬০ রানের অসাধারণ ইনিংসের কাছে পরাজয় মানতে বাধ্য হয়েছিল প্রতাপশালী অস্ট্রেলিয়া। এতেই জন্ম হয়েছিল ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম বড় অঘটনের।

গ্যাংনাম দুই

এবারের বিশ্বকাপ। মুখোমুখি ওয়েস্ট ইন্ডিজ-অস্ট্রেলিয়া। ম্যাচের আগে আগুনজ্বলা মন্তব্য করে বসলেন জেমস ফকনার।

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নাকি ভালো লাগে না তাঁর। সেই ফকনারের শেষ ওভারে দুই ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচ জিতল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্যারিবীয়দের এই জীবনেই আর কখনো ভালোবাসতে পারবেন না ফকনার। তাঁর গায়ে জ্বলুনিটা ফিরিয়ে দিয়ে আবারও গ্যাংনাম নাচলেন গেইল। আগেরবারের সঙ্গে তুলনা চলে না হয়তো।

কিন্তু পরিস্থিতির কারণে এবারের নাচটি হলো আরও খ্যাপাটে!

যুবরাজের সেই ছয় ছক্কা:

 

 

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.